Breaking

Tuesday, August 13, 2019

মহিলা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য এক অনন্য দান || Donate Hair to Cancer Patients

ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা আমার চুল কাটতে দিতেন না। মা আমার চুল কাটতে বললে বাবাই আমার মায়ের সাথে ঝগড়া শুরু করে দিতেন। বলতেন আমার মা-মনির চুল লম্বা হলেই ভালো লাগে। এখন উনিশ বছর বয়স হলো আমার, এই ১৯ বছরে মাত্র দুবার ন্যাড়া হয়েছি আমি। 

কিছুদিন আগে যখন শুনলাম ক্যান্সার পেশেন্টদের চুল ডোনেট করলে ওদের অনেক ভালো লাগবে, তখন আমারও ইচ্ছে হয় যে আমিও ক্যান্সার পেশেন্টদের আমার চুল ডোনেট করবো। মাস কয়েক আগে বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন আমি আমার মা-বাবা দুজনকেই বলেছিলাম যে, ক্যান্সার পেশেন্টদের জন্য আমি আমার চুল ডোনেট করতে চাই। প্রথকে বাবা একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর বাবা জিজ্ঞেস করেছিলেন, কবে চুল দান করবি? আজকেই চল নিয়ে যাবো। বিশ্বাস করুন তখন আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল। যে বাবা আমার চুল কাটা নিয়ে মা এর সাথে ঝগড়া করতেন, সেই বাবাই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। আমি আজকে ভীষণ খুশি, ভীষণ। ‍"আই ফিল প্রাউড ফর মাই ফাদার"

আজকে সবার কাছে আমার একটা অনুরোধ, যাদের চুল অনেক বড়ো তারা প্লিজ ১০/১২ ইঞ্চির মতো চুল ক্যান্সার পেশেন্টদের ডোনেট করবেন। আমাদের চুলতো আবারো বড় হবে। কিন্তু ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা আমাদের একটু চুল পেলে তারা ভালো থাকবে, মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকবে। একটা মেয়ের চুল অনেক বড় একটা সৌন্দর্য, চুল নিয়ে তাদের ভাবনার অন্ত নাই। সেই চুল না থাকলে তারা আর ভালো থাকে না। সর্বদা হীনমন্যতায় ভোগেন। আমাদের একটুখানি ত্যাগ তাদেরকে মানসিকভাবে সাহস জোগাবে, আসুন আমরা আমাদের এই মা-বোনদের জন্য এই ছোট্ট ত্যাগটুকু না হয় স্বীকার করে নিলাম।

অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে -
১. ক্যান্সার পেশেন্টরা চুল দিয়ে কি করে ?
ক্যান্সার পেশেন্টদের কেমোথেরাপি দিলে মাথার সব চুল ও ভ্রু পড়ে যায়। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে মাথার চুল সব পড়ে গিয়ে ন্যাড়া হয়ে যায়। তখন তারা ক্যাপ বা উইগ (পরচুলা) এর মাধ্যমে এই চুলগুলো নিজেদের মাথায় ব্যবহার করেন।  অনেকেই কেমোথেরাপি দেয়ার আগে নিজের চুল রেখে দেন উইগ বানানোর জন্য।

২. চুল ডোনেট/দান করা যায়?
হ্যা, চুল দান করা যায়। ক্যান্সার রোগিদের চুল পড়ে যাওয়ার ফলে তাদের মাথা ন্যাড়া হয়ে যায়। আমাদের লম্বা চুল থেকে যদি আমরা একটা অংশ দান করি তাহলে তারা এটা তাদের মাথায় ব্যবহার করতে পারবেন। ক্যাপ এর সাথে ফিক্স করে অথবা উইগ বানিয়ে তারা চুলের মত ব্যবহার করতে পারবেন।

৩. চুল donate / দান করলে কি হয় ?
ক্যান্সার ধরা পড়ার পর একটা পর্যায়ে এ রোগীদের কেমোথেরাপি দিতেই হয়। আর কেমোথেরাপি মানেই চুল, ভ্রু সব পড়ে যাওয়া। আর কোন মেয়েই নিজেকে আয়নার সামনে ন্যাড়া বা টাক দেখতে চায় না। যখন তারা সুস্থ্য হয়ে যান, তখন তাদেরকে ক্যাপ এর সাথে চুল বসিয়ে বা পরচুলা / উইগ বানিতে ব্যবহার করতে দেয়া হয়।

৪. চুল কাটলে বা দান করলে কি গুনাহ্ হবে?
চুল কাটলে অনেক গুনাহ হয়। আর উইগ পরাও অনেক গুনাহ। কারন এটা পরা হল ধোকা দেওয়া। চুল কালো বা গোল্ডেন বা যে কোন কালার করাও গুনাহ। এগুলো কিয়ামতের দিন সব স্বাক্ষী দিবে। চুল দান করাও ঠিক না । তবে সেটা যদি সত্যিই আল্লাহর অপর এক বান্দার উপকারে আসে তবে আল্লাহ তায়ালা তো ক্ষমাশীল, তিনি আমাদেরকে মাফ করেও দিতে পারেন। গুনাহ নাও দিতে পারেন ।

মহিলাদের চুলের ক্ষেত্রে শরীয়তের নীতিমালা হল :
১. মহিলারা চুল লম্বা রাখবে। হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় যে, উম্মাহাতুল মুমিনীন রাযি. চুল লম্বা রাখতেন। 
২. এ পরিমাণ ছোট করবে না যে, পুরুষের চুলের মতো হয়ে যায়। হাদীস শরীফে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারিনী মহিলার প্রতি অভিসম্পাত করা হয়েছে। 
৩. চুল কাটার ক্ষেত্রে বিজাতীয়দের অনুকরণ করবে না। কারণ হাদীসে বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব যে মহিলার চুল এত লম্বা যে, কিছু অংশ কাটলে পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্য হবে না তার জন্য ঐ পরিমাণ কাটা জায়েয হবে। পক্ষান্তরে যার চুল তত লম্বা নয়; বরং অল্প কাটলেই কাঁধ সমান হয়ে যাবে এবং পুরুষের বাবরী চুলের মতো দেখা যাবে তার জন্য অল্প করেও কাটার অনুমতি নেই। তবে জটিল অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চুল ছোট করা, এমনকি জরুরতবশতঃ কামানোরও অনুমতি রয়েছে। তবে সর্বাবস্থায় ফ্যাশনের অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে মহিলারা তাদের চুল খাটো করতে পারবে।
(সহীহ বুখারী ২/৮৭৪; জামে তিরমিযী ১/১০৩; সহীহ মুসলিম ১/১৪৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৪৭২) - (সংগৃহীত)


No comments:

Post a Comment

Clicky