Breaking

Monday, November 18, 2019

এ শিশুরাও খুঁজে বেড়ায় নিজ পরিবার || These children are also looking for their own family

বাইরের কাউকে দেখলেই বাবা বাবা বলে ডেকে ওঠে ছোট চার বছরের শিশু সিডরা।  সিডরার সঙ্গে দেখা হয় নগরের পাথরঘাটা সেন্ট বেনেডিক্ট নার্সারিতে। এটি অসহায় অবহেলিত শিশুদের আশ্রয়স্থল, এটি তিন তলা একটি ভবন। সিডরা এখানেই প্রায় ছয় মাস ধরে রয়েছে। শুধু সিডরা নয়, তার সঙ্গে বড় হচ্ছে আরও ২০ শিশু। সেন্ট বেনেডিক্টের সেবিকাদের ছায়ায় পরিবারহীন এসব শিশু যেন মায়ের অভাব বোধ করে না। এখান থেকে বড় হয়ে ওদের ঠাঁই মেলে একই ভবনের দ্বিতীয় তলায়—সেন্ট পিটার’স অরফানেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অধিনে রয়েছে । খ্রিষ্টান ক্যাথলিক সিস্টারদের সংগঠন আর এন ডি এম ধর্ম সংঘ এই প্রতিষ্ঠান দুটি চালায়।
১) সিডরা:মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বাড়ি সিডরার। ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া শিশুটির বাবা নেই। মা হতদরিদ্র। সিডরার আরও দুই ভাই রয়েছে। অভাবের সংসার। তাই সিডরাকে এ বছরের জুলাইয়ে নগরের পাথরঘাটার সেন্ট বেনেডিক্ট নার্সারিতে রেখে যান তার মা। সিডরা এখানেই প্রায় ছয় মাস ধরে রয়েছে। সিডরার ডান হাতে বড় পোড়া দাগ। বাড়িতে গরম পানিতে পুড়ে যায়। নার্সারির শিশু প্রতিপালনকারী মাসিরা জানান, বাইরের যে কেউ এলে সিডরা বাবা বাবা বলে জড়িয়ে ধরে।

১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত বেনেডিক্ট নার্সারিতে বর্তমানে ২০টি শিশু রয়েছে। তার মধ্যে চারজন ছেলেশিশু। একই ভবনের দোতলায় সেন্ট পিটার’স অরফানেজে রয়েছে ৪৫ জন কিশোরী। প্রতিটি শিশু ও কিশোর–কিশোরীর জীবন কাহিনি যেন মন খারাপ করা এক একটি বঞ্চনা ও অবহেলার চিত্রনাট্য।

চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটায় সেন্ট বেনেডিক্ট নার্সারিতে বেড়ে উঠছে অসহায় শিশুরা। সৌরভ দাশ চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটায় সেন্ট বেনেডিক্ট নার্সারিতে বেড়ে উঠছে। কিন্তু বারান্দায় পা রাখতেই ছোট্ট এই শিশুটি ‘বাবা বাবা’ বলে জড়িয়ে ধরল আমাদের। যেন তার অনেক দিনের পরিচিত, আপনজন। সে যেন বলছে ‘আমি তোমাদেরই লোক।’

২) রচনা ত্রিপুরা: মা–বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দাদুর কাছে বড় হচ্ছিল। ২০১৬ সালে তিন বছরের রচনাকে এখানে দিয়ে দেওয়া হয়। রচনা সারাক্ষণ শিশুদের সঙ্গে খেলে আর গল্প করে। রচনার কথাগুলো হাহাকারের মতো শোনাচ্ছিল, ‘আমি রচনা। আমার মা নেই। আমাকে কেউ দেখতেও আসে না।’

৩) তিথি: তিথির বয়স চার বছর। তিথির মা আসে মাঝে মধ্যে দেখা করতে তিথির সাথে। পরিবারের চার ভাইবোনের মধ্যে তিথি সবার ছোট। বাবা তাদের ছেড়ে অন্যত্র আরেকটি বিয়ে করেছেন। বিয়ে করে চলে গেলেন বাবা। দিশেহারা মা। নিরুপায় হয়ে তিন বছরের শিশুটিকে বেনেডিক্ট নার্সারিতে রেখে যান তিনি। তিন বছরের মনিকা দাশের কাহিনিও একই রকম।

৪) কর্নেলসু এন্টনি: এখানকার সবচেয়ে ছোট সদস্য কর্নেলসু এন্টনি। দুই বছরের এই ছেলেটির সব থেকেও যেন কিছুই নেই। আনোয়ারার দিয়াংয়ে জন্ম তার। মা বাবা দু'জনই আছে। আরও রয়েছে দুই ভাই। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সংগতি বলতে গেলে একেবারেই নেই। তাই কর্নেলসুকে নার্সারিতে পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার। অসহায় শিশুদের আশ্রয় দিতে ১৯১২ সালে চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটায় গড়ে তোলা হয় সেন্ট বেনেডিক্ট নার্সারি। বেনেডিক্ট নার্সারির পরিচালক সিস্টার ট্রিজা আসাম বলেন, এই ছেলেটির খাওয়া দাওয়া শৌচক্রিয়া সব মাসিদের করতে হয়। তার মা বলে গেছেন তিন বছর পর নিয়ে যাবেন। এখন খুব অসহায় তারা।

এখানে থাকা শিশুদের কারও মা–বাবা নেই। সব ধর্মের শিশুদেরই রাখা হয় বলে জানালেন সিস্টার। শিশুরা বিভিন্ন মিশনারি বিদ্যালয়ে পড়ে। দু'জন প্রাইভেট শিক্ষক নার্সারিতে এসে পড়ান। গান এবং নাচের শিক্ষকও রয়েছেন। ১০ বছরের বড় শিশুদের স্থানান্তর করা হয় সেন্ট পিটার’স অরফানেজে। কিশোরীরা সেন্ট স্কলাসটিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ে।
৫) বৃষ্টি: বৃষ্টি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী । বৃষ্টির বাড়ি ময়মনসিংহে। সে জানায় , তার বাড়িতে নানি ও ভাই রয়েছে। আর কেউ নেই। বরিশালের মেরি কিংবা ময়মনসিংহের রূপালী সবারই একই কাহিনি। এখানে তারা নিজেদের মধ্যে গল্প করে, খেলা করে অসহায়ত্ব ভুলে। তাদের কাছে যেন এটা একটা পরিবার।

ঠিক একইভাবে পরিবারের মায়ার বন্ধনে পড়ে যান এখানে শিশুদের প্রতিপালনকারী মাসি কিংবা সিস্টাররাও। সিস্টার ট্রিজা জানান, খুব আমার ভালোই লাগে শিশুদের সঙ্গে থাকতে। এক-দু'দিন না থাকলে তারা জিজ্ঞেস করে, সিস্টার তুমি আমাদের রেখে কোথায় চলে যাও? এটাই একটা বন্ধন।

প্রকৃতি ও সমাজের অবহেলায় এসব শিশুর অন্ধকারের স্রোতে ভেসে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কিছু মানুষের দয়ার্দ্র হাত তাদের তুলে এনেছে মানুষের কাতারে। শতবর্ষের পুরোনো এই অরফানেজই তাদের ঘরবাড়ি। অরফানেজ প্রধান সিস্টার ও ‘মাসি’রা তাদের মা-বাবা।

মাসি সুচেতনার মতে, ‘নিজের ছেলেমেয়ের মতোই তারা। দুষ্টুমির কারণে মাঝে মধ্যে বিরক্ত হই। তারপরও তাদের ছাড়া কেন জানি থাকতে পারি না।’

টিভি দেখা, নিয়মিত খেলাধুলা করা, গান নাচ, পড়ালেখা ইত্যাদিতে আনন্দেই কেটে যাচ্ছে এই শিশুদের দিনগুলো। কিন্তু আনন্দিত এসব শিশুমনে অব্যক্ত একটি ব্যথা হয়তো উঁকি দেয় মাঝেমধ্যেই। সেটি মা-বাবা ও স্বজনের ভালোবাসার অভাব। সেই ভালোবাসার টানেই কিনা অচেনা–অজানা কাউকে দেখলে ছুটে আসে অবহেলিত এসব শিশুগুলো! প্রতিদিন ভোরে ওঠে শিশুরা যে যার মত টয়লেট সারে। এরপর পড়ালেখা এবং বিদ্যালয়ের জন্য তৈরি হয়ে যায়। আবার কারও বিদ্যালয় বৈকালিক। স্কুল শেষে ফিরে নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা আর খুনসুটিতে কেটে যায় সময়টা।

৬) অনুক্ষণ: জন্মগত ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখা অনুক্ষণ নামে ছেলেটি সব সময় মাতিয়ে রাখে সবাইকে। গত সোমবার গোল হয়ে বসে সবাই গান করছিল। গানের সঙ্গে নাচছিল ছোট্ট তিথি। এখানেও নেতৃত্ব দিচ্ছে অনুক্ষণ। অনুক্ষণের কাহিনি শোনালেন সিস্টার ট্রিজা। ২০০৬ সালের এক সকালে সিস্টাররা দেখতে পান নার্সারির ফটকের সামনে একটি নবজাতক কাঁদছে। পরে সেখান থেকে তুলে নিয়ে নার্সারিতে তাকে মায়ের মমতায় বড় করা হয়। নাম রাখা হয় অনুক্ষণ। জন্মগত ত্রুটি থাকায় তাকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল। এখন তার চিকিৎসা এবং পড়ালেখা দুই–ই চলছে।

শুরু হলো নাচ–গানের আসর। তিথির পর এবার রচনাকে নাচের জন্য তুলে দিল অনুক্ষণ। আর তার সঙ্গে করতালি দিয়ে অন্য শিশুরা গান ধরেছে, ‘বেহুরে লগন, মধুর লগন/ আকাশে-বাতাসে/ চম্পা ফুটেছে চামেলি ফুটেছে...।’ কি মজার মূহূত এগুলো তাদের কাছে । কিন্তু এ আনন্দের মাঝে কোথায় যেন একটা কষ্ট লুকিয়ে আছে তাদের । এ যেন দেখেও কেউ দেখে না, বুঝেও কেউ বুঝে না । দুটি চোখ যেন সারাক্ষণ কী খুজে বেড়াচ্ছে?

আমাদের এ লেখাটি যাদ আপনার ভালে লাগে, তাহলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকবেন। যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমার এই পোস্টের নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন, আমি আমার সাধ্যমত আপনাদেরকে সঠিক তথ্যটি জানানোর চেষ্টা করব। 

ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Image Source: www.google.com



আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

No comments:

Post a Comment

Clicky