নিজ সন্তানকে শিকলে বেঁধে রেখে কাজে যান মা। নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল
ঘাটে চলাচলের রাস্তার পাশে নিজের সন্তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে কাজে যান
অসহায় এক মা। রোদ কিংবা বৃষ্টি। আবার কখনো কনকনে শীত। পেটে ক্ষুধায় কিছুক্ষণ কান্নার পর
থেমে যায় কিংবা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। ক্লান্ত শরীরে বা বৈরী আবহাওয়া সবকিছুকেই সহ্য করেভাগ্যের নির্মমতার কাছে
নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে এক শিশু। শিকলে বাঁধা তার ছোট্ট এক জীবন।
৩০ অক্টোবর ২০১৯ই বুধবার টার্মিনাল ঘাটে দেখা যায়
একটি ছেলেকে তার মা শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে কাজে চলে যায়। সেখানে অস্থায়ী
কয়েক দোকানি জানান, মূলত ছেলে যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও না যায় সেজন্যই
মা এই কাজ করেন। আবার অনেকে ভিক্ষা করতে বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে আসেন তখন
তাদের সন্তানকেও এখানে বেঁধে রেখে যান। টার্মিনাল ঘাটের অস্থায়ী আচার বিক্রেতা রবিউল জানান, এরকম দৃশ্য তিনি মাঝে
মাঝেই দেখেন। অনেক সময় রাত অবধি এভাবেই বাঁধা থাকে শিশুটি। মূলত মা সঙ্গে
করে বাচ্চাটিকে নিয়ে যেতে পারেন না বলেই এখানে বেঁধে রেখে তারপর কাজে যান।
আবার কাজ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় নিয়ে যান। তবে কখন বাঁধেন আর কখন খোলেন সেটি
অনেক সময় দেখেন না কেউ।
রবিউলের কথার প্রমাণও পাওয়া যায়। ওই মায়ের
সঙ্গে কথা বলার জন্য দুপুরের পর থেকে সেখানে থাকলেও বিকেলে হঠাৎ করেই দেখা
যায় শিশুটি সেখানে নেই। পরে সেখানে অবস্থান করা জয়নাল নামে একজন জানান,
একটু আগেই দেখেছেন এখন অর্ধ বয়স্ক নারী তালা খুলে নিয়ে যাচ্ছেন বাচ্চাটিকে।
তার বাচ্চাই হবে এমনটাই জানান তিনি। এমন অমানবিক দৃশ্য দেখে অনেকেই
শিশুটিকে খাবার কিনে দেন আবার অনেকেই রোদ বৃষ্টিতে তাকে ছাতা কিংবা পানি
কিনে দেন। তবে শিশুটিকে এমন বন্দি অবস্থায় দেখে মায়া হলেও কর্মব্যস্ত এ
জীবনে কেউ বেশি সময় নিয়ে দেখার সময়ও পান না।
এ ব্যাপারে যথাযথ
কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় অনেকেই। তাদের মতে, প্রশাসনের
পক্ষ থেকে যদি এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হতো
তাহলে হয়তো তাদের এভাবে সড়কে শিকলে বাঁধা থাকতে হতো না। অথবা যদি সবার
কাজের স্থানেই শিশুদের রাখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতো তাহলেও সমস্যা হতো
না।
সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি নজরে আসে পুলিশের। পরে পুলিশ
লঞ্চঘাট গিয়ে শিশুটি ও শিশুটির মাকে উদ্ধার করে। এ সময় শিশুটির মাকে সন্তানসহ পুলিশ
হেফাজতে নেয়া হয়।পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ টার্মিনাল ঘাটে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা
শিশুটি ও তার মাকে উদ্ধার করার পর গাজীপুরের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে (সেফহোম)
পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গত ৩০ অক্টোবর ২০১৯ই বৃহস্পতিবার বিকেলে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশের জন্য চিফ জুডিশিয়াল
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয়। পরে সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশের
পর ব্যবস্থা নেবে কোর্ট পুলিশ। বর্তমানে শিশুটি ও তার মা রয়েছেন কোর্ট
পুলিশের হেফাজতে। উদ্ধার করার পর সেই শিশুটির মা জানান, তার নাম
শ্রীদেবী এবং সন্তানটি তার। যদিও তার বাবাকে সেটি তিনি জানাতে পারেননি। ওই
নারীর কথাবার্তাও কিছুটা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল।
নিজের সন্তানটি মেয়ে জানিয়ে একেক সময় তার একেক নাম বলেন তিনি। নিজে
মাজারে ঘোরেন ও এদিক-সেদিক কাজ করে টাকা কামান আর সেই কাজে যাওয়ার সময়
সন্তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন বলেন জানান শ্রীদেবী। তিনি বলেন,
মাইনসেইতো আমারে কয় বাইন্দা থুইতে যেইলেইগা আমার ছাও আরাইবোনা। আমিতো এই
শিহল (শিকল) কিন্না হেরপরে বাইন্দা থুইয়া কামে যাই। আমি মাজারে থাহি, খাই।
হেতির বাফের (বাবার) নাম কমু না।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান
বলেন, সংবাদের পর আমরা পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত শিশু ও তার মাকে
উদ্ধার করি। ওই নারীর কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হলে এবং কোনো নাম ঠিকানা না
বলতে পারায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে গাজীপুরের
নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ
ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আদালতে সেফহোমে পাঠানোর একটি
আবেদনের কপি পেয়েছি, আদালতের আদেশ এখনো হাতে পাইনি। আদেশ পেলেই তাদের
পাঠিয়ে দেয়া হবে।
আরো পড়ুন–
☞ ভালবাসার সাদা বকের ছোট ছানাটি
☞ মেশিনের মাধ্যমে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যা
☞ কেন নির্মমভাবে হত্যা করা হল ছোট্ট শিশুটিকে
☞ বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় যে প্রমাণ পাওয়া গেছে
☞ বাবার কোলেই হত্যা করা হয় ঘুমন্ত শিশু তুহিনকে
☞ ভালবাসার সাদা বকের ছোট ছানাটি
☞ মেশিনের মাধ্যমে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যা
☞ কেন নির্মমভাবে হত্যা করা হল ছোট্ট শিশুটিকে
☞ বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় যে প্রমাণ পাওয়া গেছে
☞ বাবার কোলেই হত্যা করা হয় ঘুমন্ত শিশু তুহিনকে
আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com
No comments:
Post a Comment