Breaking

Tuesday, October 29, 2019

ঝরে যাওয়া বেলীফুল পর্ব-৩ || Falling ballyful episode-3

সকাল সকাল উঠে নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখে বেলী । রোজ সকাল ৯ টায় অফিসে যায় ইরফান । এই ৭ মাসে ইরফান শুক্রবার ব্যাতিত সপ্তাহে ৬ দিনই একা নাস্তা করে । কারণ তার দ্বিতীয় স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে সকাল ১০ টায় । তার পক্ষে সকাল সকাল উঠা ইম্পোসিবল ব্যাপার আর নাস্তা বানানো তো অসম্ভব ব্যাপার । এই ৭ মাসে সে একবারও রান্নাঘরে ঢুকে দেখেও নি রান্নাঘরের চেহারাটা কেমন ? ইরফান একাই ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে যায় । তার বাঁধা বান্দি বেলী তো আছেই , সেই সব করে দেয় ।
আজও ব্যাতিক্রম কিছু হয় নাই । বেলী সব সাজিয়ে রাখে , মিনু দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করছে রান্নাঘরে । ইরফান শার্টের হাতা ঠিক করে ব্লেজার হাতে নিয়ে নাস্তার টেবিলে বসে । ইরফান বলার আগেই তার সামনে সব হাজির করে রাখে । ইরফানের সকালবেলা দুধ চা না হলে চলেই না । আর বেলী চা + কফি দুইটাই ভালো বানায় , যদিও ইরফান কখনো প্রশংসা করেনি এইসবের । তবে সেও মানতে বাধ্য হয় যে হ্যাঁ বেলী চা টা ভালোই বানায় । নাস্তা করতে করতে এক হাত দিয়ে কলারের নিচের বোতামটা খুলতে গিয়ে একদম পুরো ছিড়েই ফেলে ইরফান । 

- ধুর , মেজাজটা কেমন লাগে এখন , তাড়াতাড়ির সময় দেরি হয়ে যায় ।
বেলী সাইডে দাঁড়িয়ে ছিল বিধায় দেখে সব । আর মিনু রান্নাঘর থেকে সবটাই খেয়াল করে । মুচকি হাসি দিয়ে ভেতরেই বক বক করে সে ।
- এক্কেবারে ভালা হইছে , হারামজাদা অসিভ্য বেডা । বিয়া একটা কইরা আবার আরেকটা করছে , বউডারে জানোয়ারের মত ফিডায় , এক্কেরে ভালা হইছে । এই বেডায় এক জানোয়ার আর এইডার ছোড বউডা আরও বদমাইশ ।
ইরফানের চৌদ্দ গুষ্টিকে তুঙ্গে তুলে দেয় মিনু । যদিও আস্তে আস্তে বলেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে মিনু । কারণ ইরফান বা রুবি কারো সামনেই এইস বলার ক্ষমতা নেই তার । তাই নিজে নিজেই বলে । এইদিকে বেলী ফ্লোর থেকে বোতামটা কুড়িয়ে হাতে নেয় । ইরফান একা একাই বলতে থাকে ।
- আজকে প্রেজেন্টেশন আর আজকেই এমন হতে হলো , ধুর
বেলী ইরফানের বিরক্ত হওয়া দেখে নিজেই বলে ওঠে ,
- আমি লাগিয়ে দেই ?
- এখন আবার শার্ট খুলতে হবে , লাগাতে গেলে শার্টের ইস্ত্রিটাও নষ্ট হয়ে যাবে ।
- আপনি নাস্তা খান , আমি সুই-সুতা নিয়ে আসি । শার্ট খুলতে হবে না , এমনিতেই লাগানো যাবে ।
ভেতর থেকে সবটাই শুনে নেয় মিনু । বেলীর উপর অতিরিক্ত মেজাজ খারাপ লাগছে তার ।
- এহহহহহ , হের এক্কেরে আদর বাইয়া বাইয়া পড়ে । এহন হের পেয়ারের ছোড বউরে উডাইয়া লাগাইতে ফারে না । শয়তান এইডা নামাজ কালাম তো ফড়েই না চিত্তায়া পইড়া ঘুমায় । অসিভ্য বেডি কোনহানের ।
এই বলে বোতামটা হাতে নিয়েই বেলী রুমে যায় সুই-সুতা আনতে । প্রায় ৫ মিনিট হয়ে যায় বেলীর আসার খবরও নেই । ইরফানের নাস্তা খাওয়াও শেষ হয়ে যায় । কিছুক্ষন বসে থেকে নিজের রুমে যায় ইরফান । রুবি তখনও ঘুমাচ্ছে । রুবিকে ডাকতে থাকে সে ।
- রুবি , এই রুবি,,,,,,?
-.......
- আরে এই রুবি , শুনছো ?
- কি হয়েছে ডাকো কেন ?
- শার্টের বোতামটা লাগিয়ে দেও না ।
- শার্টের কি অভাব পড়ছে ঘরে , আরেকটা পরে যাও ।
- কি সব বলো ঘুমের তালে , আজকে আমার প্রেজেন্টেশন । তাই তো এই শার্ট পরছি আমি ।
- ঘুমাইতে দিবা একটু , আমি তোমার বোতাম লাগানোর জন্যে ঘুম নষ্ট করবো নাকি , যাও সরো এখান থেকে । পারলে নিজে লাগিয়ে নাও ।
ধমক টমক দিয়ে আবার ঘুমিয়ে যায় রুবি । ইরফানের মেজাজ সেই লেভেলের চড়ে গেছে । ওর মন চাইছে রুবি এক লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিতে । কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই । একবার জোরে ধমক দিয়েছিল বলে রুবির বাবা ইচ্ছামত ঝেরেছিল ইরফানকে । বড়লোকের মেয়ের এই একটা সুবিধা , বাপের অঢেল টাকা পয়সা থাকলে জামাইকে পাত্তা দেয় না । এখানে রুবিও তেমনটাই । ইরফান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে বেলীর রুমে যায় । গিয়ে দেখে বেলী তখনও সুচে সুতা গাঁথছে । ইরফান রুমের ভেতরে যায় ,
- তুই এখনও সুতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস ?
- আসলে আমি ভুলেই গেছিলাম এইগুলা কোথায় রাখছি , খুজতে খুজতে এই মাত্রই পাইলাম , এখনি সেলাই করে দিচ্ছি ।
- তাড়াতাড়ি কর ।
- এই তো হয়ে গেছে , এখনি লাগিয়ে দিবো ।
এই বলে বেলী ইরফানের সামনে যায় । কাঁপা কাঁপা হাতে ইরফানের বুক অবদি উঠায় নিজের হাত জোড়া । যথাস্থানে বোতামটা রেখে সুই গাঁথে বেলী । ইরফান খেয়াল করছে বেলীর হাত প্রচন্ড কাঁপছে । ইরফান একবার বেলীর মুখের দিকেও তাকায় । বেলী সব সময় মাথায় ওড়না পরে থাকে । দুই পেচ দিয়ে চুল গুলো ঢেকে সে ওড়না পরে সব সময় । গালের দিকে নজর দিয়ে দেখে কালকের মা'রের দাগ গাঢ় হয়ে আছে ।
- তুই এইভাবে যে কাঁপছিস , কখন না জানি আমার বুকেই সুই গেঁথে দেস ।
- ভয় নাই আমি কারো বুকে মনে আঘাত করি না ।
- মুখে কিছু দেস না ? এমন কালসে হয়ে আছে কেন ? স্নো বা কিছু কি নাই ?
ইরফানের এমন কথায় বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো বেলীর । কান্না পাচ্ছিলো ভিষণ সেই মুহুর্তে , কিন্তু তবুও সে চুপ করে আছে । লাস্ট কবে স্নো মেখেছিল সেইটাও ভুলে গেছে সে । ইরফান সাইডে তাকিয়ে কোন স্নোর বক্স খুজে পায় নি । ওমনি তোতলাতে তোতলাতে বেলী কিছু বলে ,
- একটা কথা বলতাম ?
- বল ,
- আমার দুইটা জামা লাগতো ?
- কেন , জামা নাই ?
- বাড়ি থেকে যেইগুলা আনছিলাম সেই গুলাই এতদিন পরছি , জামা গুলা ছিড়ে গেছে । আর কয়েকটার রঙ জ্বলে গেছে । আমাকে সুতির জামা কিনে দিলেই হবে ।
- কেমন সুতির জামা পরবি ?
- ৬০ টাকা গজের গজ কাপড় গুলা আছে না গ্রামে পাওয়া যাইতো , ওই রকম এনে দিলেই হবে ।
- আচ্ছা দেখি পাই কিনা ,
বোতাম লাগিয়ে দেয়ার পর ইরফান রুম থেকে বেরিয়ে যায় । কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আবার রুমে ঢোকে সে ।
- কয় গজ লাগে তোর ?
পিছনে ফিরে তাকায় বেলী , ইরফানকে আবার রুমে আসতে দেখে অবাক সে । তারপর ইরফানের ডাকে কথার উত্তর দেয় ,
- জ্বি ,
- কয় গজ লাগে তোর ?
- জামা ওড়না সেলোয়ার সব গুলাতেই আড়াই গজ লাগে ।
- আচ্ছা ,
বেরিয়ে যায় ইরফান । তারপর সোজা নিচে চলে যায় সে । বেলীর রুমের জানালা দিয়ে নিচের সব কিছুই দেখা যায় । পর্দার আড়ালে ইরফানকে এক নজর দেখবে বলে নিচে তাকায় সে । ইরফান তখনও নিচে দাঁড়ানো ছিল । আজ ইরফানকে ভালোই দেখাচ্ছিলো । সাদা ফরমালে অনেক সুন্দর লাগছিলো তার বরটাকে । এরই মাঝে মিনু এসে পিছন থেকে বেলীর গায়ে হাত রাখে ।
- কিছু বলবা মিনু ?
- আপনে মানুষ হইবেন কবে ?
- মানে ,
- ফিডা খাইতে খাইতে কি লজ্জা শরমের মাতা খাইছেন আপনে ?
- কি হইছে বলবা তো ।
- কি দরকার ডা আছিলো ভাইয়ের জামার বোতাম লাগানোর । আমি তো দরকার দেখলাম না ।
- আমি তো দেখছি ।
- এহন হের ছোড বউ কই যহন প্রয়োজন পড়ে তহন আপনের কাছে আহে , আর ছোড বউয়ের কান কতা হুইন্না আপনেরে গুম্মুর গুম্মুর লাগায় । বেডা বজ্জাত কোনহানকার ।
- থাক না মিনু , মানুষটার আজ অফিসে কি জানি আছে । আর আমি মনের মধ্যে হিংসা রাখতে পারি না । বাদ দাও ,
- আমি যে কই আপনে বেয়াক্কেল মাতারি কতা ডা আমি ভুল কই না আপনে আসলেই বেয়াক্কেল মাতারি । তো যান এহন আপনের সতীনের বেড ঠি লইয়া যান , নবাবজাদি বিছানায় নইয়া চা পান করবো ।
- মিনু কোনদিব জানি সব শুনে ?
- শুনুক গা তাতে আমার কি ? আমি ডরাই না কাউরে । এ বলে মিনু রুম থেকে বের হয়ে যায় । আর বেলীও কফি নিয়ে রুবির রুমে যায় । দরজায় নক করার পর রুবি ভেতরে যেতে বলে । রুবি তখন বিছানায় বসেছিল । বেলীকে দেখে রুবি একটা হাসি দেয় । রুবির ভেজা চুল গুলো বেলীর ভেতর টাকে ফালা ফালা করছিল , তাড়াতাড়ি কফির মগটা রেখে বেরিয়ে যেতে নিলে রুবি ডাক দিয়ে বসে ,
- যাস কই তুই , আমি কি বলছি যেতে ?
- কিছু লাগবে ?
- নাকি আমার ভেজা চুল তোর সহ্য হয় না কোনটা ?
- হাতে কাজ তো , তাই আর কি ।
- আফসোস লাগে তোর জন্যে , তোর বর আমারও বর । ফারাক হচ্ছে তোর বর আমাতে মত্ত্ব , আর তোকে দেখতেই পারে না । প্রতি রাতে সে আমাতে লেপ্টে থাকে আর প্রতি রাতে তুই একা ঘরে কাতড়াস । আফসোস লাগে রে বড় আফসোস লাগে তোর জন্যে । - আমি আসতেছি কফিটা খেয়ে নিন ।এই বলে বেলী রুম থেকে বেরিয়ে যায় । দৌড়ে নিজের ঘরে এসে বিছানায় উপুর হয়ে পড়ে । বুকে হাত দিয়ে মুখে বালিশ চেপে চিৎকার করে কাঁদে বেলী । - এমন টা তো হওয়ার কথা ছিল না । তবে কেন এমন হলো , বাবা আমাকেও সাথে করে নিয়ে যাইতা । এতিম করে কেন গেলা বাবা । এখন আমি কার বুকে মাথা রাখবো বাবা ।

চলবে......................

লেখিকা : আফরোজা আক্তার   


আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky