Breaking

Monday, October 28, 2019

ঝরে যাওয়া বেলীফুল পর্ব-২ || Falling ballyful episode-2

রুমে শুয়ে শুয়ে আগের কথা ভাবছে বেলী । বাসর ঘরে সেদিন বসে ছিল সে । ইরফান রুমে তো এসেছিল ঠিক , কিন্তু সেখানের ঘটনা গুলো ঘটেছিল উল্টো । ইরফান এসে সোজা শুয়ে পড়ে । বেলী তখনও বসা খাটে । এরই মাঝে একটা ফোন আসলো ইরফানের মোবাইলে , ফোনটা হাতে নিয়ে বাহিরে চলে যায় সে । আর তারপর যখন রুমে আসে তখন হয়তো ইরফান না কোজ এক দানব রুমে ঢুকেছিল । ইরফান খাটের এপাশ ঘুরে হাতে ধরে টেনে নিচে ফেলে দেয় বেলীকে । অকথ্য বিশ্রী ভাষায় কথাও বলে । আর তার শেষ কথা টা ছিল ।
 - তুই যদি এক বাপের জন্মের হয়ে থাকিস আমার আশেপাশেও ঘেষবি না । আর তারপর দিনই ইরফান চলে যায় । মুখ বুজে সব টা সহ্য করে নেয় বেলী । বিয়ের ঠিক ১ মাস পর ইরফান আবার বাড়ি আসে তাও রহমান আলীর কথায় । সেইবার রাতে বেলী ভুল করে ইরফানের গায়ে দুধ ঢেলে দেয় । আর তার শাস্তি বেশি কিছু ছিলো না , শুধু পায়ের থেকে জুতা খুলে জুতা দিয়ে মেরেছিল নিজের সদ্য বিয়ে করা বউটাকে ।
সেইবার একদিন থেকেই আবার চলে যায় ইরফান । আর তারপর লাস্ট আসে রহমান আলীর শরীর খারাপ হওয়ার পর । সেইবার আসার পরই রহমান সাহেব ইরফানকে বাধ্য করে বেলীকে নিয়ে ঢাকা থাকার । ইরফান শত না করার পরেও রহমান আলী কিছুই শুনেন নি এবং শুনতেও চান নি । জোর করেই বেলীকে ইরফানের সাথে ঢাকা পাঠিয়ে দেয় । আর যার ফল স্বরূপ আজ সে কুকুরের মত মা'র খায় ইরফানের কাছে । 

এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুম চলে আসে বেলীর । শরীর ব্যাথা থাকা কারণে ঘুম চলে আসছে চোখে । মিনু ফাঁক দিয়ে একবার দেখে গেছে বেলীকে । মিনু মেয়েটা ইদানীং এক রকম আতংকে থাকে । ইরফান যেইভাবে মারে বেলীকে । কোন দিন জানি দেখে একেবারে মেরেই ফেলে । এই ভয়ে থাকে সারাদিন ।
বিকেলের শেষ দিকে ঘুম ভেঙে যায় বেলীর । ওযু করে নামাজ পড়ে রান্না ঘরে যায় সে । সন্ধ্যায় তারা আসলেই কফি চাইবে , বলার সাথে সাথে হাজির না করলে আবার মারবে । তাই আগে ভাগে সব করে রাখবে বেলী । 

মাগরিব নামাজের পর ইরফান আর রুবি বাসায় আসে । কলিংবেল বাজার সাথে সাথে মিনু গিয়ে দরজা খুলে । রুবি সোজা নিজের রুমে চলে যায় । ইরফান ড্রইং রুমে বসে । সোফায় বসে এ.সি টা ছেড়ে দেয় সে । এরই মাঝে বেলী কফি নিয়ে আসে । কফির মগটা ইরফানের হাতে তুলে দেয় বেলী । হাত বাড়িয়ে কফির মগটা নিতে গিয়ে বেলীর হাতে নজর পড়ে ইরফানের৷ বেল্টের বারির দাগ এখনও লাল হয়ে আছে । এটা দেখার পর একবার বেলীর মুখের দিকেও নজর দেয় ইরফান । মুখটা ফুলে একাকার হয়ে আছে । আজকে বোধ হয় মা'রের পরিমান টা বেশিই হয়ে গেছিলো । মুখে কিছুই বলে নি ইরফান । বেলী সেইখান থেকে চলে যেতে নিলে ইরফান ডেকে দেয় । ইরফানের ডাকে কলিজায় কামড় পড়ে বেলীর । বেলীর ধারণা আবার হয়তো মারবে । সেই এক জায়গায় ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটা । আবার ডাকে ইরফান.......
 - বেলী , শুন তো ?
- জ্বি ,
- রুবিকেও কফি দিয়ে আয় ।
- জ্বি আচ্ছা ,
বেলী রুবির রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে ।
- এই কে ?
- আপু আমি , বেলী ।
- কি চাই ?
- কফি দিতে আসছিলাম ,
- ভেতরে আয় ,
রুবিও কুকুর বেড়ালের মত ব্যবহার করে বেলীর সাথে । বয়সে এবং পড়ালেখায় অনেক এগিয়ে আছে রুবি । ইংলিশের উপর অনার্স কমপ্লিট করা , দেখতে শুনতেও খারাপ না , বাপের ভালো টাকা পয়সা যার কারণে মানুষকে মানুষ মনে করে না । আর বেলী , বেলী তো তার দু'চোখের বিষ । শুধু ইরফান তাকে আগে বিয়ে করার জন্যে সে প্রথম বউ আর রুবি দ্বিতীয় বউ । যদিও কয়েক দফা বলা হয়েছিলো বেলীকে ডির্ভোস দিতে , কিন্তু ইরফান চেয়েও দিতে পারে নি । কারণ গ্রামে তার বাবা রহমান আলী শুনলে তাকে হয়তো ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে । এমনকি রহমান আলী এখনও জানে না যে ইরফান আরও একটা বিয়ে করেছে এখানে । 

রুমের মধ্যে গিয়ে বেলী কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে চলে আসতে নিলে রুবি বেলীকে আটকে ধরে । বেলীর সামনে এসে বেলীর বাম গাল টা নিজের হাতে ধরে । আর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বেলীকে বলে ,
- লজ্জা থাকলে আর কখনো আমার বেড টি দিতে দেরি করবি না । আজকের মা'রের কথা মনে থাকলে ।
- হু ,
- মনে থাকবে ? ঠিক সকাল ১০ টায় আমার বেড টি চাই আমার বিছানার পাশে ।
- থাকবে ,
- যাহ এখান থেকে ।
রুবি ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় বেলীকে । চোখের পানি মুছতে মুছতে রান্না ঘরে ঢোকে বেলী । বেলীকে দেখে মিনু বুঝে যায় , কিছু একটা হয়েছে ।
- আবার কিছু কইছে ওই নবাবের বেটি ?
- মিনু আস্তে বলো বোন , শুনলে তোমাকে বের করে দিবে ।
- দেক বাহির কইরা , আমার কি আসে যায় , আমার কি আপনের মত কইলজা ছোড নি , তা কি কইছে সে ?
- কিছুই বলে নাই ।
- দেহি আমার দিকে তাকান তো ,
মিনু বেলীর মুখটা ধরে তার দিকে ঘোরায় । বেলীর মুখটা আসলেই অনেক মায়ায় ভরা । মিনু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে , তারপর আবার বলে ,
- ভাইয়েরে ভালাবাসেন ?
মিনুর কথায় চোখ বড় করে তাকায় বেলী । মিনু এইসব কি বলে ? আসলে এইটাই যে বেলীর মনের কথা । কিন্তু মিনু বুঝে ফেললো কিভাবে ?
- মিনু কি সব বলো ?
- আপনে ভালাবাসেন ভাইয়েরে , এইজন্যেই তার এমন পিডা খান । ভাবী একটা কথা কই ?
- বলো ,
- আপনেরে মাইরাই ফেলাইবো ভাইয়ে । ভাবী এহনও সময় আছে , যান গা ।
- কই যাবো মিনু ? যাওয়ার মত কোন জায়গা আছে ? গ্রামে যাইতে পারবো না সেইদিকে তার বাবায় আছে । আর আমার মা ? তার কাছে থাকলেও মানুষে অনেক বাজে বাজে কথা বলবে ।
- শরীরডা তো আছে , রত তো আছে , কাম কইরা খাইবেন । তবুও আর মাইর খাইয়েন না ।
- কিন্তু আমি তাকেও ছাড়তে পারবো না । 
- কিহ , ধুর বেয়াক্কেল মাতারি , যান যান মরেন গিয়া , আমার কি ? আপনেরে মাইরা ফালাইয়া রাইখা যাইবো আর আমি গিয়া মলম লাগামু । হায়রে ভালাবাসা রে , ফিছা মারি এমন ভালাবাসার কফালে ।
মিনু রেগে মেগে বক বক করতে করতে কাজে মন দেয় । বেলী রুমে যায় , দরজা এটে দিয়ে ওড়নায় মুখ চেপে কেঁদে দেয় ।
বেলী সত্যিই নিরুপায় । কি করবে সে ? আবেগের কাছে সে বাঁধা । ভালোবাসে অনেক ইরফানকে , যদিও সে জানে ইরফান তাকে শুধুই তার বাসার বান্দি ভাবে , বউ সে কখনোই হতে পারবে না । তবুও কেন জানি বেলী ছাড়তে পারে না ইরফানকে ।
[ বিঃদ্রঃ সমাজে এখনও কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা ভালোবাসা আর আবেগকে প্রাধান্য বেশি দেয় । যার জন্যে প্রতি বছর কম করে হলেও ৫০% স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে স্বামীর হাতে । অনেকেই বলে , বিশেষ করে আমাদের মত মেয়েরা কিংবা আমি নিজেই বলি এমন স্বামীর কাছে না থাকলে কি হয় , কাজ করে খেলেই তো হয় , কিন্তু আসলে যার যার পরিস্থিতি সে সে বুঝে । কতটা অসহায় পরিস্থিতি হলে একটা মেয়েকে সতীন নিয়ে ঘর করতে হয় কিংবা স্বামী দ্বারা নির্যাতিত হতে হয় , আর মেয়েরাও অনেকটা হিংস্র যারা অন্যের সংসার এইভাবে নষ্ট করে । গল্পটা আমাদের সমাজের প্রাচীন এবং বর্তমান কিছু প্রেক্ষাপটে বানানো সাথে কিছু সত্যতা/বাস্তবতা এবং কিছুটা কাল্পনিকতার মিল রেখে লিখা হয়েছে । কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখিকার দোষ নেই ]



চলবে......................

লেখিকা : আফরোজা আক্তার   


আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky