Breaking

Wednesday, October 30, 2019

ঝরে যাওয়া বেলীফুল পর্ব-৮ || Falling ballyful episode-8

সকাল বেলা উঠে বেলী সব নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রেখে দিয়েছে । আজ ইরফানের জন্যে একটি বিশেষ দিন । প্রেজেন্টেশন টা সবার পছন্দ হলেই এই প্রজেক্ট অনুযায়ী তাদের কাজ হবে । এর সাথে ইরফানেরও প্রমোশনটা হয়ে যাবে । সব কিছু মাথায় রেখেই আজ বেলীর আয়োজন । ইরফান লাচ্ছা সেমাইটা খুব পছন্দ করে তাও ডুবো দুধে । আর বেলী সেমাইটা দারুণ বানায় । তাই আজ সেমাইও বানিয়েছে । আজ মনে হচ্ছে ইরফানের থেকে বেলীর উদ্বিগ্নতা বেশি। রুমে ইরফান রেডি হচ্ছে । ফরমাল পরে পাক্কা সাহেব সাহেব লাগছে তাকে । সাদা শার্ট সাথে নেভিব্লু ব্লেজার। সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছিল ইরফানকে। সব গুছিয়ে নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হয় ইরফান । নাস্তা করতে টেবিলে এসে দেখে এলাহী কারবার । ইরফান যা যা ভালোবাসে সব বানিয়েছে বেলী । ইরফান এইসব দেখছে আর ভাবছে ,
 - এক রুবি , যে কিনা একটা থাপ্পড় দেয়াতে বাপের বাড়ি গিয়ে বসে আছে । খোঁজ খবর তো নেয়-ই না , আসারও নাম নেই । আর এক এই মেয়েটা , শত অবহেলা , শত মা'র খেয়েও আমার কথা ভেবে যায় নির্দ্বিধায় । আমার কি প্রয়োজন , কিসে আমি ভালো থাকি সবটাই তার জানা । আর এই মেয়েটাকে গ্রাম্য , অশিক্ষিত , গরীব মানুষ ভেবে কত অপমান , কত মারধর করেছি আমি । কতটা নির্বোধ হলে এইসব করতে পারলাম । এমনকি জিদ করে আরেকটা বিয়েও করে ফেললাম । ওর বয়সটাই বা কতটুকু ছিল , যার এখন প্রতিটা মুহুর্ত হাসার কথা তার মুখ থেকে হাসি নামক জিনিসটা কেড়ে নিয়ে নিলাম আমি । আর সে নিরবে চুপ করে থাকে । সত্যিই হাজারো মেয়ে রুবি হতে পারে , কিন্তু একজন মেয়ে বেলী হতে হাজারবার জন্ম নিতে হয় হয়তো হবে ।

ইরফান এর ভাবনায় ছেদ পরে মিনু ডাকে ,

- ও ভাই , ভাই ???
-........
- ভাই , ও ভাই,,,,,,,,???
- হু,,,,,,, হু
- দাড়াইয়া আছেন যে ভাই , বসেন । নাস্তা কইরা লন ।
- এত নাস্তা বেলী বানিয়েছে ?
- হ ভাই ,
- এত কিছু কিভাবে খাবো ?
- সব কিছুর থিকা একটু একটু কইরা খাইয়া নেন , আর সেমাইডাও খাইয়েন ডুবা দুধে বানাইছে ভাবী । সেই সকাল থিকা সব বানাইছে ভাবী ।
- বেলী কোথায় ?
- ভাবী আইতাছে , আপনে খাইয়া নেন ।

ইরফান ভেবেছিল বেলী অন্তত এখন তার সামনে থাকবে । কিন্তু বেলী রুমে বসে আছে । বিষয়টা ইরফানের কাছে খটকা লাগছিল , কিন্তু হাতে সময়ও নেই তার । তাই নাস্তা খেতে বসে যায় সে । প্রত্যেকটা আইটেম থেকে কিছু কিছু খেয়ে নেয় সে । তবুও তৃপ্তি পাচ্ছে না সে , হয়তো তৃপ্তিটা বেলীর আগমনেই ঘুচে যেতো । আজ বেলীকে একটু ট্রাই করবে সে । সেমাইটা খেয়ে পানি খেয়ে ঘড়িতে টাইম দেখে নেয় ইরফান । গাড়ি আসতে এখনও ১০ মিনিট বাকি । ইরফান উঠে বেলীর রুমে যায় ।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে বেলী বিছানায় ওপাশ ফিরে বসে কি যেনো করতেছে ।

- বেলী,,,,,,,,,,,?

ইরফানের মুখ থেকে নিজের নামটা শুনে চমকে যায় সে । কেঁপে ওঠে সে , বেলী এমনিতেও একটু ভীতু , আচমকা কেউ এসে ভাউ করলেও সে লাফিয়ে উঠে । গরীব ঘরের আদরের রাজকুমারী ছিল সে আর আজ সে স্বামীর ঘরের কাজের মেয়ে হয়ে গেছে । তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে পিছনে ফিরে দাঁড়ায় বেলী ।
ইরফান বেলীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । ওড়না দিয়ে সুন্দর করে দুই পেচ দিয়ে ঘোমটা দেয়া তার মাথায় । এইভাবে বেলীকে খুব সুন্দর লাগে । আবার ওড়না ছাড়াও ভালো লাগে দেখতে । হাত দুটো দিয়ে জামাটা মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে সে । ইরফান ধীর পায়ে বেলীর সামনে এসে দাঁড়ায় ।

- কিছু বলবেন ?
- হু , নাস্তার টেবিলে গেলি না যে ?
- মিনু তো ছিল , আসলে আমি একটু কাজ করতেছিলাম ।
- টাই টা ঠিক করে বেঁধে দে ।

ইরফানের এমন কথায় হতভম্ভ হয়ে যায় বেলী । হঠাৎ টাই বাঁধার কথা বললো তাও আবার আজকেই । কিন্তু আজকেই তো,,,,,,,

- কিরে বেঁধে দে ,
- বাঁধা আছে তো ,
- ঠিক করে দে টাই টা ।

বেলীর প্রচন্ড ভয় লাগছিল । এখন হাত উপরে উঠাবে কিভাবে সে । উঠালেই তো ইরফান দেখে ফেলবে । আর দেখার পর যদি প্রশ্ন করে তখন কি হবে ? এরই মাঝে আবারও ইরফানের তাড়া ,

- কিরে , একটু পরে গাড়ি চলে আসবে , বেঁধে দে ঠিক করে ।
- ঠিকই তো আছে ,
- টাইতে হাত দিয়ে ঠিক করে দে বেলী ।

অগত্যা হাত টা কাঁপতে কাঁপতে ইরফানের বুকের কাছে আনে বেলী । আর তখনই ইরফানের চোখে অন্য কিছু পড়ে । বেলীর ডান হাতের অনামিকা আঙুলে পুরো ব্যান্ডেজ করা । হাতের দিকে তাকিয়ে আবার সে বেলীর মুখের দিকে তাকায় । ইরফান । সে জানতো বেলীর কিছু একটা হয়েছে যার কারণে বেলী নাস্তার টেবিলের কাছে ছিল না । বেলীর মুখটা একদম শুকনো হয়ে আছে । ইরফান অনেকটা শান্ত গলাতেই বেলীকে প্রশ্ন করে ,

- কিভাবে কাটলি ?
-............
- কিরে , বল কিভাবে কাটলি ?
- গরীবের রক্ত তো তাই শরীরে থাকতে চায় না ।
- এইটা উত্তর ?
- টাই ঠিক আছে এখন ?
- গরীবের রক্ত তো তাই শরীরে থাকতে চায় না কথাটার জবাব রাতে পাবি , আসতেছি ।

ইরফান রুম থেকে বেরিয়ে যায় । বেলীর মনে ভয় ঢুকে যায় । হয়তো রাতে এসে আবারও মারবে বেলীকে ইরফান । এমনটাই ধারনা তার । তবে আপাতত সব কিছু ভুলে গিয়ে আজকে ইরফানের জন্যে মন থেকে দোয়া পড়ছে বেলী । অসুস্থতার কারণে নামাজ পড়তে পারছে না সে । তাই মনে মনে দোয়া পড়ে বেলী । বেলীর একটাই চাওয়া ।

- ' হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি'মাল ওয়াকিল '
হে আল্লাহ পাক আপনিই আমাদের জন্যে যথেষ্ট এবং আপনিই উত্তম সাহায্যকারী । আল্লাহ পাক আজ যেনো মানুষটা সফল হতে পারে । তাকে আপনি সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষান করুন এবং তাকে সফলতা দান করুন ।

ঠিক সেই মুহুর্তে মিনু দরজার সামনে থেকে বলে উঠে ,

- মরইন্না দোয়া আছে নি ?

কথাটা শুনে চমকে যায় বেলী । অবাক নজরে মিনুর দিকে তাকিয়ে থাকে সে । হঠাৎ মরার কথা কেন বললো সে ।

- এইসব কি বলো মিনু ?
- না মানে কইছিলাম , মরার আগের দোয়া থাকলে পইড়া লন , কওন যায় না কোন সময় না সময় মাইরা লায় আপনেরে ।
- এইভাবে কেন বলতেছো মিনু ? উনি আমার গায়ে হাত তুলে তা ঠিক তবে আমাকে একেবারে মেরে ফেলবেন না তিনি ।
- হ , হাচাই তো । আরে ভাবী এইসব আপনের মত আলাভোলারাই কয় গো ভাবী । ভাইয়ে জানি কেমন হইয়া গেছে , চুপচাপ । নিশ্চয়ই মাতায় পেলেন করতাছে আপনেরে কিভাবে মারন যায় ।
সি আই ডি ' র মইদ্যে এই সব দেহায় ।
- তুমি আর এইসব দেখবা না । এইসব দেখে আর উলটাপালটা চিন্তাভাবনা মাথায় আনে ।
- হ হ , হের সোয়ামীরে লইয়া কিছু কওন যায় না এক্কেরে । এত ভালাবাসা ঠিক না , এই কইলাম আমি । এত ফিডায় তহন কই থাহে ভালাবাসা ।
- রান্নাঘরে যাও আমি আসতেছি ।
- হুহ উচিত কথা কইলেই আমি ভালা না , কি আর করনের আছে আমার । আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাহেন ।

মিনুর এমন পাকা পাকা কথায় এক গাল হেসে দেয় বেলী । তারপর নিজের রুম গুছিয়ে নিয়ে রান্নাঘরে যায় বেলী । কিন্তু মনটা উদ্বিগ্নতায় ভরপুর । স্বয়ং আল্লাহ পাকই জানেন অফিসে কি হচ্ছে এখন ।

অন্যদিকে ,

রুবিকে তার বাবা এবং মা উভয়েই বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত । তারা যতই বোঝাচ্ছে সে কিছুতেই মানছে না । জাফর সাহেব সর্বপ্রকার মেয়েকে বুঝিয়েও কোন দিক করতে পারছেন না ।
- তুমি কি চাইছো রুবি , তোমার সংসার টা ভেঙে যাক ?
- বাবা সে আমাকে চড় মেরেছে ।
- মেরেছে তো কি হয়েছে , তোমার প্রোভোকেশনেই তো বেলীকে মারে ইরফান , তা তুমি না হয় একটা চড় খেলেই । তাতে সমস্যা কি ?
- বাবা,,,,,,,,,,?
- স্বামীর ঘর ছেড়ে বাবার বাসায় বসে আছো । তো বেলী কি সুযোগ পাবে না এই সুযোগে ইরফানকে হাত করার ।
- কখনোই না , ইরফান তো বেলীকে ঘেন্না ছাড়া আর কিছুই করে না ।
তখনই রুবির মা বলে ওঠে ,
- বার বার মানা করছিলাম বিবাহিত ছেলের সাথে প্রেম করিস না করিস না , শুনছোস আমার কথা ? এখন সতীন নিয়ে সংসার করস ।
- ওহহহ মা , থামবা ।
- আমি বললেই থামবা , আরেক মেয়ের ঘর নষ্ট করছিস , আল্লাহ তোর সাথে কি করে দেখ এখন ।
- বাবা দেখলা মা কিভাবে বললো ?
- ভুল কিছু বলে নাই তোমার মা । কাল সকালে চলে যাবা ইরফানের কাছে ।
- আমি যাবো না , যতক্ষন না ও আমার পা ধরে ক্ষমা না চায় ততক্ষণ অবদি আমি কোথাও যাবো না ।
- তাহলে বাপের বাড়িতে বসে থাক সারাজীবন ।

মায়ের এমন কথায় রুবি জেদ দেখিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে দেয় ।

- এই মেয়ের যে কি হবে , আল্লাহ পাকই ভালো জানেন ।
- মেয়ের শিক্ষায় ঘাটতি আছে তাই মেয়ে এমন হয়েছে ।
- আমাকে কথা শুনাচ্ছো নাকি তুমি ?
- তুমি মেয়ের মা , তুমি বর্তমান থাকাকালীন সময়ে সে কিভাবে বিবাহিত ছেলের পাল্লায় পড়ে ?
- বিবাহিত ছেলে কি ধোয়া তুলসীপাতা ? যে মেয়ে ইশারা করলো আর ছেলেও গলে গেলো ?
- অবশ্যই গলে যাবে । একটা মেয়ে ইশারা করবে আর ছেলে কি বসে থাকবে । তোমার মেয়ে জানতো না ওই ছেলের বউ আছে ।
- তোমাকে যখন বলেছিল , তখন নিজে চুপ ছিলা কেন ? এখন আমার দোষ দাও কেন ?
- দোষ ছেলেরও দোষ মেয়েরও মাঝে থেকে ওই গরীম এতিম মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে । দেখবা অভিশাপ লাগবে আমাদের৷, ওই মেয়ের অভিশাপ ।
- ওই মেয়েও কম যায় না । চলে গেলেই তো পারে ?
- তুমি মা হয়ে কিভাবে বলো এইসব কথা , তা তোমার মেয়েও তো চলে আসতে পারে ? নিজের কাছে রেখে মেয়েকে বানিয়েছো আল্ট্রামর্ডান । দুই হাতে টাকা উড়ানো , বন্ধু বান্ধবী নিয়ে আমোদ ফূর্তক করা এইসব শিখিয়েছো , এখন মেয়ে এইসব ছাড়তে পারে না ।
- দেখো রুবির বাবা , আমি কোন বলে দেই নাই যে বিবাহিত ছেলের সাথে প্রেম করতে আর তাকেই বিয়ে করতে । অতএব আমাকে বলবা না এইসব । আমি কিটি পার্টিতে যাবো আজকে ।
- ওই তো , এইসব পার্টি পুর্টি করেই জীবন পার করলা আর মেয়েকেও বানিয়েছো তেমন ।

রুবির বাবা মায়ের মাঝে রুবিকে নিয়ে তর্ক লেগে যায় । আর তার একপর্যায়ে রুবির মা চলে যায় রুমে আর রুবির বাবা বাসা থেকেই বেরিয়ে যায় ।

[ বিঃদ্রঃ একজন মা-ই কিন্তু পারেন তার সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে । কারণ বাবারা সব সময় কাছে থাকেন ।

চলবে......................

লেখিকা : আফরোজা আক্তার   


আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky