Breaking

Thursday, March 14, 2019

টার্কি মুরগী লালন পালন - রুডার রুম পরিস্কার, লিটার বিছানো, ব্রুডার ও চিক গার্ড স্থাপন - পর্ব-৩

টার্কি মুরগী লালন পালন

রুডার রুম পরিস্কার, লিটার বিছানো, ব্রুডার ও চিক গার্ড স্থাপন - পর্ব-৩



২ নং বাসস্থানঃ
ব্রুডার রুম পরিস্কার / লিটার বিছানো / ব্রুডার ও চিক গার্ড স্থাপন  করাঃ
>> ব্রুডারের নীচে দুই ইঞ্চি পূরত্ব করে লিটার বিছাতে হবে এবং তার উপর টান-টান করে মোটা ছালার চট বিছাতে হবে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, ছালার চট পটাশ মিশ্রিত পানিতে ধৌত করে উত্তম ভাবে রোদে শুকিয়ে এবং টিমসেন দিয়ে স্প্রে করে ব্যবহার করতে হবে।
>> ৫০টি বাচ্চার জন্য ব্রুডার স্থাপন করতে হবেঃ ব্রুডার সাইজ ৪ ফুট এবং লিটার থেকে ১.৫ ফুট উচ্চতায় ব্রুডার ঝুলিয়ে বাধতে হবে, প্রয়োজনে ব্রুডার উঠানো নামানো যায় সেদিকে খেয়াল রেখে বাঁধতে হবে। ব্রুডারে ১০০ ওয়াটের ৪টি বাল্ব লাগাতে হবে, তবে গরমে ৬০ ওয়াটের বাল্ব লাগানো যেতে পারে।

>> চিক গার্ডঃ ব্রুডার এর চারদিকে ১.৫ -২ ফুট উচ্চতার গোলাকার চিকগার্ড বসাতে হবে এবং ব্রুডার ও চিকগার্ডের মাঝে ২”-৩” ইঞ্চি পরিমানে ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে, যাতে করে অক্রিজেন ও বাতাস চলাচল করতে পারে। শীতের মৌসুমে ব্রুডার চিকগার্ডের ভিতরে লিটার থেকে ১.৫’ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করতে হবে এবং গরমের মৌসুমে ব্রুডার চিকগার্ডের উপরে স্থাপন হতে পারে।

এখানে উল্লেখ থাকে যে, চিকগার্ডের দৈর্ঘ্য ব্রুডারের ডায়ার মাপ থেকে ৩’ থেকে ৪’ ফুট বেশী রাখতে হবে । কারণ দুই সপ্তাহ পর থেকে প্রতি সপ্তাহে ব্রুডারের জায়গার পরিমান বাড়াতে হবে ।

বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার ২৪ ঘন্টা পূর্বে ছালার চটের উপরে/পেপার বিছাতে হবে। এখানে উল্লেখ থাকে যে  পেপার টিমসেন দিয়ে স্প্রে করে রোদে শুকিয়ে তারপর বিছাতে হবে। ব্রুডারে বাল্ব জালিয়ে ৯৭-৯৮ ফারেনহাইট ডিগ্রী তাপমাত্রায় রাখতে হবে এবং তাপমত্রা মাপার জন্য ব্রুডারের ভিতরে একটি থার্মোমিটার রাখতে হবে।


ব্রুডিং ব্যবস্থাপনাঃ
১.  প্রথম দিন বয়স থেকে ৬-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাদের তাপ দেওয়াকে ব্রুডিং বলে। ব্রুডিং এর ফলে টার্কির বাচ্চাদের তলপেট যে ক্ষত এবং ভিজা থাকে (কুসুমের কিছু অংশ লেগে থাকে) তা শুকাতে সাহায্য করে। কুসুমের ঐ অংশে বেশ কিছু পরিমাণ এন্টিবডি (অহঃর-নড়ফু) থাকে, যা থেকে টার্কিদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়। এছাড়াও ব্রুডিং শরীর বৃদ্ধি, হজম শক্তি তৈরী ও পালক গজাতে সাহায্য করে। প্রথম সপ্তাহে ৯৫ ফারেনহাইট ডিগ্রী থেকে ১০০ ফারেনহাইট ডিগ্রী তাপ দেয়া শুরু হয় এবং পরবর্তী প্রতি সপ্তাহে ৫ ফারেনহাইট ডিগ্রী করে তাপমাত্রা কমাতে হবে।

২.  তাছাড়া ১ দিন বয়সের বাচ্চাদের তাপ উৎপাদনকারী অঙ্গগুলো অপরিপক্ক থাকে, তাই তারা সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দৈহিক তাপ উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রন করতে অক্ষম, সেই জন্য তাদেরকে সঠিক পরিমাণে তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাপ উৎপাদনকারী অঙ্গগুলোকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপক্ক সক্ষম করা হয়। এখানে উল্লেখ থাকে যে, ডিম থেকে বাচ্চা বের হবার পর মা টার্কি তাদের প্রয়োজনীয় ও নিদির্ষ্ট সময় পর্যন্ত তা দিয়ে তাপ উৎপাদন এবং তাপ নিয়ন্ত্রন করার জন্য পরিপক্ক/ সক্ষম করে তোলে।

নিচে ইনকিউবেটর মেশিন এর তাপমাত্রা এবং রিলেটিভ হিউমিডিটি এর % (অংশ) উল্লেখ করা হল:


Group
Temperature (Degree F)
Relative Humidity (%)
Setter
99.5
61-63
25days
Hatcher
99.5
85-90
3 days

বিঃ দ্রঃ উপরোল্লিখিত ইনকিউবেটর মেশিনের তাপমাত্রার সংগে সামঞ্জস্য রেখে ব্রুডিং এর তাপমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

বাচ্চা  ইনকিউবেটর মেশিন থেকে বের করে ব্রুডারে রেখে ৯৭-৯৮ ডিগ্রী  ফারেনহাইট তাপমাত্রায় একটানা তিন দিন উক্ত তাপমাত্রায় তাপ দিতে হবে । তিন দিন পর থেকে পালক গজাতে শুরু হবে। চতুর্থ দিন থেকে প্রতিদিন ০.৭১ ডিগ্রী ফারেনহাইট করে তাপমাত্রা কমাতে হবে। উপরোল্লেখিত তাপমাত্রার চেয়ে, তাপ বেশী হলে ডিহাইড্রেশন বা বিভিন্ন রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে বাচ্চা মারা যেতে পারে এবং তাপমাত্রা কম হলে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে বাচ্চা মারা যেতে পারে।

৩ . বয়স অনুসারে জায়গার পরিমাণ, খাবার পাত্র / পানির পাত্রের পরিমাণঃ

বয়স
জায়গা
(বর্গফুট)
খাবার পাত্র
(ইঞ্চি)
পানির পাত্র (ইঞ্চি)
০-৪ সপ্তাহ
১ বর্গফুট
১ ইঞ্চি
১ ইঞ্চি
৫-১৬ সপ্তাহ
২.২৫ বর্গফুট
২ ইঞ্চি
১.২৫ ইঞ্চি
১৭-২০ সপ্তাহ
৩ বর্গফুট
২.২৫ ইঞ্চি
১.২৫ ইঞ্চি
প্রজনন সক্ষম
৪-৬ বর্গফুট
২.২৫ ইঞ্চি
১.২৫ ইঞ্চি

>> খাবারের ট্রে / পানির পাত্রঃ  খাবারের ট্রে / পানির পাত্র ভিম সাবান দিয়ে ঘষে-মেজে উত্তমভাবে ধৌত করে টিমসেন মিশ্রিত পানিতে ভাল করে চুবিয়ে শুকিয়ে রাখতে হবে। বাসস্থানে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ও জিনিস পত্র উত্তমভাবে স্প্রে করে রাখতে হবে।
>> মিশ্রনঃ এক লিটার পানিতে ১ গ্রাম টিমসেন।
>> বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার ৩০ মিনিট পূর্বে ব্রুডারের দুই পাশে দুইটি খাবার ট্রে বসাতে হবে।
>> পানির পাত্রে নিম্ন লিখিত ঔষধ+ভিটামিন+গ্লুকোজ কুসুম গরম পানি দিয়ে মিশ্রন তৈরী করে উক্ত মিশ্রিত পানি, পানির পাত্রে ভর্তি করে ব্রুডারের দুই পাশে দুটি পাত্র বসাতে হবে।

মিশ্রণঃ

>> Cosumix Plus       
প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম

>> Moxcool                 
প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম

>> Thiavin                
প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম

>>  Multi-Vitamin      
প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম

>> Glucose / Sugar   
প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম (দুই দিন)

>> Rena-c                    
৫ লিটার পানিতে ১ গ্রাম

    উপরোল্লেখিত ঔষধ ও ভিটামিন অবশ্যই কুসুম গরম পানিতে উত্তমভাবে মিশ্রিত করে একটানা  ৫ দিন ২৪ ঘন্টা খাওয়াতে হবে, এবং ৪/৫ ঘন্টা পর পর মিশ্রিত পানি পরিবর্তন করে নতুন করে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, পানির পাত্রের নীচে ১২”ী ১২” সাইজের পাতলা কাঠের টুকরা বসিয়ে দিতে হবে, যাতে করে পানি পড়ে পেপার ও লিটার নষ্ট না হয়।

>> এক লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম গ্লুকোজ/ Glucose, লেবুর শরবত মিশ্রন তৈরী করে রাখতে হবে।

>> বাচ্চা  ফার্মে আসার পূর্বে অফিস, গোডাউন ও বাসস্থানের ভিতর ও বাহিরে উত্তমভাবে টিমসেন দিয়ে স্প্রে করে রাখতে হবে এবং বাচ্চা আসার পর বাসস্থানের গেটে প্রবেশ করার পূর্বে বাচ্চাগুলোর প্রতিটি কার্টুন উত্তমভাবে টিমসেন দিয়ে স্প্রে করে নিতে হবে।

>> প্রতিটি ব্রুডারে ৫০ টি বাচ্চা রাখতে হবে এবং বাচ্চা ঘনত্ব বেশী হলে বিভিন্ন রোগ বালাই আক্রমন করতে পারে।

>> বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার আগে উক্ত পানিতে তৈরী গ্লুকোজের মিশ্রণ প্রতিটি বাচ্চাকে পান করিয়ে এবং গড় ওজন A, B, C. গ্রেডিং অনুসারে ব্রুডারে ছাড়তে হবে।

>> বাচ্চাগুলো ২ থেকে ৩ ঘন্টা পানি খাওয়ার পর স্টার্টার-১ প্রোটিন ২৮% খাবার ট্রেতে সরবরাহ করতে হবে এবং ১ মাস পর্যন্ত পর্যন্ত চলবে। তারপর অন্যান্য খাবার পর্যায়ক্রমে দিতে হবে। যেমনঃ ২য় মাসে প্রোটিন ২৬%, ৩য় মাসে প্রোটিন ২২%, ৪র্থ মাসে প্রোটিন ১৯%, ৫ম মাসে প্রোটিন ১৬.৫%, ৬ষ্ঠ মাসে প্রোটিন ১৪.৫% এবং ডিম দেওয়া চলাকালীন সময়ে ১৪% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার চলতে থাকবে। এখানে উল্লেখ্য থাকে যে, উপরোল্লিখিত আদর্শ খাদ্য খাওয়ালে টার্কিগুলো রোগমুক্ত সুস্থ্য, সবল ও তরতাজা থাকবে এবং উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং ১০০% কোয়ালিটি সম্পন্ন ডিম, বাচ্চা, মাংসের উৎপাদন ও মুনাফা অত্যাধিক বেড়ে যাবে।

আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
 Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky