Breaking

Wednesday, March 13, 2019

টার্কি মুরগী লালন পালন- বিজ্ঞান সম্মত ও রোগ মুক্ত বাসস্থান - পর্ব-০২

টার্কি মুরগী লালন পালন

বিজ্ঞান সম্মত ও রোগ মুক্ত বাসস্থান - পর্ব-০২


১. খামার স্থাপন করার জন্য উপযুক্ত স্থান: নিরিবিলি, কোলাহল মুক্ত এবং বন্যা মুক্ত হতে হবে। চারপাশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, স্যাঁত-সেতে মুক্ত হতে হবে। মালামাল আনা নেয়ার জন্য রাস্তা থাকতে হবে অর্থাৎ খামার স্থাপন করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে।

২. মহান আল্লাহ তায়ালার এ বিশ্ব জগতে ভূ-পৃষ্ঠের সমগ্র প্রাণী জাতির জন্য সুস্থ সবল, রোগমুক্ত ও তরতাজা এবং আরামদায়ক ভাবে বেচেঁ থাকার এ মহাবিশ্বে আল্লাহর নেয়ামত বিশাল প্রকৃতির সাগর দান করেছেন।

আল্লাহর দান প্রকৃতির নেয়ামতগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
>> দিনের সূর্যের স্বচ্ছ আলো, তাপ ও রাতের অন্ধকার
>> মুক্ত বাতাস
>> অক্সিজেন
>> আর্দ্রতা
>> গরম/ ঠান্ডা/ শীত
>> সাগর, নদ-নদী, খাল-বিল ও ডোবা ইত্যাদি
>> জমিনে শস্য, গাছ-পালা, ঔষধি গাছ, ফলমূল ইত্যাদি


 আল্লাহর প্রকৃতির মহাসাগরে মানুষসহ সকল প্রাণী, জীব-জন্তুদেরকে ডুবিয়ে রেখেছেন। সুস্থ্য-সবল, স্বাস্থ্য সম্মত, রোগমুক্ত আরামদায়ক ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি প্রাণীর বসবাসের জন্য তাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় পরিবেশ এবং স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। উক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে টার্কির বাসস্থান তৈরী করতে হবে এবং টার্কিগুলো প্রকৃতির উপাদান থেকে কোন রকম বঞ্চিত না হয়।

৩. বাসস্থান কেমন হবে: বাসস্থান এমনভাবে তৈরী করতে হবে যাতে করে উক্ত বাসস্থানটি টার্কির জন্য উত্তম বসবাস যোগ্য বাসস্থান হয়। যেমন: তরতাজা, স্বাস্থ্য সম্মত, রোগ জীবানু মুক্ত, সুস্থ্য-সবল এবং আরামদায়ক ভাবে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে অর্থাৎ আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে বাসস্থান নির্মাণ করতে পারে।

৪. আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত বাসস্থান নির্মাণ: পূর্ব-পশ্চিমে অর্থাৎ দক্ষিণমুখী বাসস্থান নির্মাণ করতে হবে, যাতে করে দক্ষিণ দিকের মুক্ত বাতাস বাসস্থানের ভিতর সহজে প্রবেশ করে, উক্ত বাসস্থানের ভিতরের বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস ও ধুলা-বালি, রোগ-জীবানু উত্তর দিক দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। তেমনিভাবে উত্তর দিকের মুক্ত বাতাস সহজভাবে বাসস্থানের ভিতর প্রবেশ করে দক্ষিণ দিক দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ বাধাহীন মুক্ত বাতাস বাসস্থানের ভিতর চলাচল করতে পারে। বাসস্থানে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো, বাতাস ও অক্সিজেন মজবুত থাকতে হবে। বাসস্থান ও লিটার শুকনা ও ঝরঝরে থাকতে হবে এবং গরম, তাপ, ঠান্ডা ও শীত নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাসস্থান ও লিটার শুকনা ও ঝরঝরে থাকলে মরণ ব্যাধি বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হবে না এবং ব্যাকটেরিয়া, রেগ- জীবানু দমন থাকবে। এতে করে টার্কিগুলো সুস্থ্য-সবল, রোগ মুক্ত, তরতাজা, এবং আরামদায়ক ভাবে বাসস্থানে বসবাস করবে, ফলে উৎপাদন ব্যয় কম হবে এবং মুনাফা/লাভ বেশী হবে। ইনশাআল্লাহ লোকসানের সম্ভাবনা কম থাকবে।

বাসস্থানের ডিজাইন: আমাদের দেয়া বাসস্থানের ডিজাইন অনুসারে বাসস্থান তৈরী করতে হবে।

৫. বাসস্থানের ফ্লোর রাফ পাকা হতে হবে এবং বাসস্থানের এক পার্শ্বে ৪ (চার) ফুট প্রস্থ বাঁশের মাচা হবে। মাচার শলার মাঝে ০.৭৫” ইঞ্চি ফাঁকা হবে। মাচার নীচে ফ্লোর থেকে ৬”-৭” ইঞ্চি ওয়াল হবে এবং তার উপর মাচা পর্যন্ত জি.আই তারের নেট হবে। যাতে করে মাচার নীচে টার্কি ঢুকতে না পারে। মাচার উচ্চতা ১-১.৫ ফুট।

৬. বাসস্থানের বাহিরে অর্থাৎ চারদিকে জি.আই. তারের নেট লাগাতে হবে। নেট দুই পার্ট হবে। বাহিরে ফ্লোর থেকে মাচা পর্যন্ত এক অংশ জি.আই. তার এবং মাচা থেকে বাসস্থানের চালের নীচ পর্যন্ত জি.আই. তার দিয়ে আবদ্ধ করতে হবে। মাচার নীচে মলমূত্র পরিস্কার করার জন্য কপাট পদ্ধতিতে জানালা/ দরজা রাখতে হবে।

৭. বাসস্থানের নেটের বাহিরে ত্রিপল লাগাতে হবে। ২ পার্ট মাচার উপর থেকে ফ্লোর পর্যন্ত ১ পার্ট এবং মাচার উপর থেকে চালের নীচ পর্যন্ত আরো ১ পার্ট।

৮. বাসস্থানের বাহিরে সুতার নেট: বাসস্থানের বাহিরে ছোট ছিদ্রের সুতার নেট মশারীর মত বাসস্থানের চারিদিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে মাটি পর্যন্ত এবং বাসস্থানের ভিটি থেকে ৩ (তিন) ফুট দুরত্বে মাটিতে উত্তমভাবে আটকিয়ে দিতে হবে, যাতে করে পাখি/বন্য পাখি ইত্যাদি বাসস্থানের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।

৯. বাসস্থানের ভিতরে চারিদিকে ফ্লোর হতে চালের নীচ পর্যন্ত স্বচ্ছ পাতলা পলিথিন জি আই তারের নেটে ঘেষে লাগাতে হবে।

১০. বাসস্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে, প্রতি ১০০ বর্গফুট ফ্লোরের জন্য শীতে ১০০ ওয়াটের বাল্ব এবং গরমের জন্য ৬০ ওয়াটের বাল্ব লাগাতে হবে। ৬ টি জালি ফ্যান লাগাতে হবে।

বাসস্থান পরিস্কার ও লিটার বিছানোঃ

* ১ম দিন বাসস্থান খালি পানি দিয়ে উত্তমভাবে পরিস্কার করতে হবে।
* ৩য় দিন পর ব্লিচিং পাউডার পানিতে মিশ্রিত করে দুধের ন্যায় সাদা রং করে বাসস্থানের ফ্লোর কয়েকটি ভাগে ভাগ করে বাদ দিয়ে উক্ত মিশ্রিত পানি দিয়ে ফ্লোর ডুবিয়ে রাখতে  হবে (১০-১২ ঘন্টা) । তারপর পাথরচুন পানিতে গুলিয়ে ফ্লোরে এবং সাইডের ওয়ালে উত্তমভাবে প্রলেপ দিতে হবে।
* ৫ম দিনে ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম টিমসেন দিয়ে বাসস্থানের চালে নেটে ফ্লোর বাসস্থানের বাহিরে উত্তমভাবে স্প্রে করে পরিস্কার করতে হবে।

১১. বাচ্চা উঠানোর ১ সপ্তাহ পূর্বে ধানের তুষ, কাঠের ভূষি অথবা বালির লিটার বিছানা হিসেবে বিছাতে হবে। এখানে উল্লেখ থােেক যে, গরমে লিটার হিসাবে বালি ব্যবহার করাই উত্তম।

* ধানের তুষ, কাঠের ভূষি, বালি রোদে ভাল করে শুকিয়ে চালনী দিয়ে চেলে নিয়ে স্তরে স্তরে টিমসেন স্প্রে করতে হবে। ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম টিমসেন মিশ্রন করতে হবে।

* তারপর উপরোল্লেখিত উপকরণ ৩”- ৪” পুরু করে বাসস্থানের সম-পরিমাণে বিছাতে হবে, তারপর প্রতি ১০০ বর্গফুট ফ্লোরে ১.৫ কেজি পাথর চুন গুড়া করে লিটারে ছিটিয়ে মিশ্রিত করতে হবে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, ব্রুডারের নিচের লিটার তুষ বা কাঠের ভুষি ২ ইঞ্চি পুরুত্ব করে বিছাতে হবে।

১২. খাবার পাত্র/পানির পাত্র বেধে ঝুলানোর জন্য প্লাস্টিকের রশি টানিয়ে রাখতে হবে। খাবার/ পানির পাত্র অবশ্যই মাচার উপর ওয়ালের সাথে ঘেঁষে বাধতে হবে।

১৩. প্রতিটি বাসস্থানের সামনে দৈর্ঘ্য ৪ ফুট, প্রস্থ ৬ ফুট ও গভীরতা ৬ ইঞ্চি ফুট-বাথ তৈরী করতে হবে।

আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
 Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky