Breaking

Monday, September 2, 2019

বস্তির ছেলে জয় আমেরিকায় রোবোটিক্স গবেষক || Joy is robotics researcher in the United States

এমন এক সময় ছিল যখন মুম্বাইয়ের কুরলা বস্তিতে থাকতেন জয়কুমার বৈদ্য। বস্তিতে একটা ছোট ঘরে মায়ের সঙ্গে থাকতেন জয় । সারা দিনের শেষে পাউরুটি, শিঙাড়া বা চা জুটত তাঁদের কপালে । সেই জয়কুমারই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা করছেন।

জয়কুমার এর মা নলিনী বেগম। শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মা নলিনীকে বের করে দিয়েছিলেন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তখন ঠাঁই মেলে এক বস্তিতে। পরবর্তীতে ২০০৩ সাল থেকে তাঁদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে। নলিনীর মা একটা ছোট চাকরি করতেন। মেয়েকে তিনি মাঝে মাঝে অর্থ সাহায্যও করতেন। কিন্তু ২০০৩ সালে খুবই শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়।

যত কষ্ট হোক না কেন ছেলেকে তা বুঝতে দিতেন না । দরিদ্রতার প্রভাব যাতে ছেলের পড়াশোনার ওপরে না পড়ে সে জন্য মা নলিনী অনেক কিছু করেছেন। যখন যে কাজ পেয়েছেন তাই করেছেন। কখনও শিঙাড়া, বড়াপাউ খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। কিন্তু তাতে কি আর সম্ভব।

এত কষ্টের মাঝেও হাল ছাড়েননি জয়কুমার। মন শক্ত করে রেখেছিলেন তাঁর মা-ও। ছেলের স্কুলের মাইনে দিতে না পারায় স্কুল কর্তৃপক্ষ একবার নলিনীকে জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলেকে গাড়ি চালানো শিখতে; টাকা না থাকলে পড়াশোনা হয় না

এর কিছুদিন পর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেসকো-র সঙ্গে যোগাযোগ হয় নলিনীর। তারাই স্কুলে বাকি থাকা মাইনের অনেকটা পরিশোধ করে দেয়। কলেজে পড়ার সময় সুদ ছাড়া ঋণও দেয় জয়কুমারকে। কিন্তু কারও সাহায্যে নির্ভরশীল হয়ে থাকা পছন্দ ছিল না তাঁর। স্থানীয় একটা টিভি মেরামতির দোকানে কাজ শুরু করেন জয়কুমার। জয় মাসে মাইনে পেতেন ৪০০০ টাকা । এর পাশাপাশি স্থানীয় ছাত্রদের পড়াতে শুরু করেন তিনি ।

কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের জোরে জয়কুমার কেজে সোমাইয়া কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ইলেকট্রিক্যালে স্নাতক শেষ করেন এবং রোবোটিক্সে তিনটে জাতীয় এবং চারটে রাজ্য স্তরের পুরস্কারও পান তিনি।

এটাই ছিল তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। কলেজে পড়াকালীন প্রথম চাকরির প্রস্তাব আসে লার্সেন অ্যান্ড টুবরো থেকে। কলেজ পাস করেই তিনি টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এ কাজ পান। বেতন ছিল ৩০,০০০ টাকা। দু'মাসের বেতনের টাকা জমিয়েই প্রথম নিজের বাড়ির জন্য একটা এসি  ক্রয় করেন জয়কুমার। জিআরই এবং টিওইএফএল (GRE & TOEFL) পরীক্ষার জন্য ফর্ম পূরণ করেন। ফর্মের জন্য অনেকটা টাকা খরচ হয়ে যায়। সেই ঘাটতি মেটাতে অনলাইন টিউশন শুরু করেন জয়কুমার। তিন বছর টাটা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করার পর জয়কুমার পিএইচডি শুরু করেন।

২০১৭ এবং ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে তাঁর দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেই গবেষণা পত্রগুলো ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ায় যোগ দেন ২৪ বছর বয়সী জয়কুমার। এক সময়ে যাঁদের মাসের শেষে হাতে ১০ টাকা পড়ে থাকত, আজ তাঁরই মাসিক স্টাইপেন্ড ২০০০ ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার কিছু বেশি। স্টাইপেন্ডের টাকা থেকে মাত্র ৫০০ ডলার জয়কুমার নিজের খরচের জন্য রেখে দেন। বাকিটা মাকে পাঠিয়ে দেন। খুব তাড়াতাড়ি মাকেও যুক্তরাষ্ট্রে এনে নিজের কাছে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে জয়কুমারের।


আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky