Breaking

Friday, August 23, 2019

জোড়া লাগানো সেই মনি-মুক্তা এখন দশ বছরে পা দিলো || Pair Twin Moni-Mukta is Now Ten Years Old

দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের শরৎ চন্দ্র পালের পুত্র জয় প্রকাশ পাল। জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মনি এবং মুক্তা জোরা লাগানো অবস্থায় ২ কন্যা শিশু জন্ম নেয়।

পরবর্তীতে রংপুরের চিকিৎসকগণ ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ মতে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়।

এরপর ল্যাম্ব হাসপাতালের পরামর্শে তাদের ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের পরিচালক ও সার্জারি বিভাগের প্রধান এ আর খানের নেতৃত্বে ১২ জন সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ৮ ফেব্রুয়ারি ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের অপারেশনে মনি-মুক্তাকে আলাদা করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস । আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নয়নের ছোয়া এবং বাংলাদেশের চিকিৎসক এ আর খানের সাফল্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে সম্ভাবনাময় করেছে।

আর সাফল্যকে কাজে লগিয়ে বাংলাদেশে প্রথম অস্ত্রোপচারে মাধ্যমে জোড়া লাগানো শিশুর সফল পৃথকীকরণ করা হয়। এই সাফল্যের ইতিহাস বীরগঞ্জের জোড়া লাগানো জমজ দুই বোন মনি-মুক্তা। এই ইতিহাস ৯ বছর পূর্বের। বাবা-মায়ের কোলে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা মনি মুক্তা এখন ১০ বছরে পা দিয়েছে। তারা এখন স্থানীয় পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

২২/৮/২০১৯ বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয় মনি-মুক্তার ১০ম তম জন্মদিন। বিকালে বিদ্যালয় শিক্ষক ও মনি-মুক্তার বন্ধুবান্ধবসহ প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে জন্মবার্ষিকী পালন করে পরিবারের লোকজন।
জন্মদিন উপলক্ষে গণমাধ্যম কর্মীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে।

মনি ও মুক্তা দুজনই সুস্থ আছে। তারা একে অপরের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটায়। বেশ সুন্দর করে কথা বলে। নিয়মিত স্কুলে যায় বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা-মা। জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে মনি-মুক্তা ।

মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, মনি-মুক্তার জন্মের সে সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ি। সমাজের নানা অপবাদে গ্রামে আসিনি। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি-মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার আসায়। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় ডা. এ আর খানের কারণে। সেই মানুষটির কারণেই আজ আমাদের এই দুই সন্তানের নতুন করে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা।
মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ২১ ফেব্রুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজগ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে আসি। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে এবং ডা. এ আর খানের সাফল্যে আমরা মনি মুক্তাকে স্বাভাবিকভাবে ফিরে পেয়েছি।

তিনি আরও বললেন, সব কষ্ট ভুলে তাদেরকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মনি-মুক্তা এবং পরিবারের জন্য সবার দোয়া কামনা করেছেন মা কৃষ্ণা রাণী পাল।

২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে মনি-মুক্তা বাড়ির পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এর আগে তারা বাড়ির পার্শ্ববতী প্রেম কাঙ্গাল দূর্গা মন্ডপ আশ্রম সংলগ্ন বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্দির ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে পড়ালেখা শুরু করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় পাল ও সহকারী শিক্ষিকা শিউলি আকতার জানান, মনি-মুক্তা এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। তারা লেখাপড়ায় বেশ ভালো। সহপাঠীরা তাদের খুব ভালোবাসে। মনি শান্ত হলেও মুক্তা বেশ চটপটে বলেও তিনি জানান। 
মনি-মুক্তার বড় বোন বিসা রাণী পাল অনার্স প্রথম বর্ষের শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে জানায়, তার দুই বোন যখন জন্মগ্রহণ করে সে সময় মানুষ নানা রকম কথা বলেছে। অনেকে বলেছে তারা মন্দ কাজের ফল। কিন্তু এখন সেই মানুষগুলোই মনি-মুক্তাকে দেখলে লজ্জাবোধ করে। আমার বোন দুটো আমাদের পরিবারের জন্য আশির্বাদ।

তাদের তিন বোনের একমাত্র বড় ভাই সজল কুমার পাল এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন ।

আরো পড়ুন–
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে করণীয়
পাওয়া গেলো ডেঙ্গুর ঔষুধ
ডেঙ্গু কেড়ে নিচ্ছে শত শত মায়াবী প্রাণ
শিশুদের ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে কিছু ঘরোয়া টিপস
ভয়াবহ ডেঙ্গু জ্বর থেকে বাচাঁর প্রয়োজনীয় কিছু টিপস


আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky