Breaking

Tuesday, October 8, 2019

কে থামাবে মা রোকেয়ার কান্না || Who will stop Ma Rokeya's cry

আবরার ফাহাদকে রাব্বি নামেই ডাকতো বাড়ির লোকজন ও স্বজনরা। তবে এখন আর এই নামে আর কেউ ডাকবে না তাকে। আবরারদের কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের ও কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে। ছেলের শোকে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন রোকেয়া খাতুন। ছোট ভাইটিও তার বন্ধুর মত বড় ভাইকে হারিয়ে এক বাকরুদ্ধ। 
 
আমার ছেলে সারা জায়গায় মেধা তালিকায় ছিল রে। আমার ছেলে মেডিকেলে টিকছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকছে, আমার ব্যাটার মতো ব্যাটা কয়জনের ঘরে আছে রে... আমার সোনার মতো ব্যাটা কয়জনরে আল্লাহ দেয় রে...'

কান্নার সাথে এভাবেই বিলাপ করছেন নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মা। আর্তনাদ করছেন সন্তান হারানোর বেদনায় তিনি মুষড়ে পড়েছেন। কান্না যেন থামছেই না। কান্নার শব্দের সাথে সাথে ভেসে আসছে মেধাবী ছেলের এমন নানা কথা। কখনো চিৎকার করে কাঁদছেন, কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কুষ্টিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় আবরার ফাহাদের মা ছেলের শোকে অস্বাভাবিক হয়ে গেছেন। কোনোভাবেই কান্না থামছে না। কান্নার সাথে চলছে টানা বিলাপ। ফাহাদের মায়ের আর্তনাদে উপস্থিত কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না।

আববারের স্বজনরা জানান, ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন আবরার। ক্লাসে সব সময় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিত্র-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকায় নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তড়িত প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। ইতিমধ্যে অনেকটা পথ পাড়িও দিয়েছেন। তবে তরী ভেড়ার আগেই আবরার চলে গেল না ফেরার দেশে। সেই সঙ্গে নিভে গেল একটি পরিবারের আশা-ভরসার প্রদীপ।
আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ ব্র্যাকের অডিটর ছিলেন। চাকুরি থেকে অবসরে গেছেন। মা রোকেয়া খাতুন সোনামনি নামে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক। সীমিত আয় দিয়ে দুই ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করার প্রাণপণ চেষ্টা ছিল তাদের। ছেলেকে নিয়ে গর্ব করতেন মা-বাবা। আত্মীয়-স্বজনরাও আবরারকে ভালবাসতেন।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে কুমারখালীর গ্রামের বাড়ি এসে থেকে শহরের পিটিআই রোডে জমি কিনে বাড়ি করে তার পরিবার। এ বাড়িতে আবরারের মা ও বাবা বসবাস করেন। তিন কক্ষের বাসার একটি কক্ষে আববার ছুটিতে এসে থাকতেন। সেই ঘর জুড়ে বই খাতা পড়ে আছে।

ছেলের মৃত্যর পর সচারাচর দেখা গেছে, একটি কক্ষে বুকফাটা কান্না করছেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন। সেখানে বিছানার ওপর আবরারের অনেক আত্মীয়-স্বজনও রয়েছে। কোন ভাবেই রোকেয়া খাতুনকে সামলানো যাচ্ছে না । মাঝে মধ্যে বুক আছড়ে বিলোপ করছেন। আর আবরারকে নিয়ে নানা স্মৃতির কথা বলছেন। এ সময় স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আবরারের মা বলেন, 'আমার ছেলেতো কারো ক্ষতি করেনি, কোন দোষ ছিল না তার। তাহলে আমার সোনার ছেলেকে কারা হত্যা করলো। কেবল সে বাড়ি থেকে গেল। যেতে না যেতেই বাড়ি ফিরছে লাশ হয়ে। এ ছেলে বাড়ি আসলেই মজার সব খাবার রান্না করে দিতাম। আর কখনো সে মা বলে ডাকবে না, প্রিয় খাবার খেতে চাইবে না। এ শোক আমি কি করে সইবো।'
 আবরারের ছোট ভাই ঢাকা কলেজ ছাত্র আবরার ফায়াজ সাব্বিরও বলে, 'দুই ভাই ঢাকায় একসঙ্গে থাকায় প্রায় দিনই দেখা হতো। সব সময় ফোনে খোঁজ খবর রাখত। বড় ভাইয়াকে আমি সব সময় অনুসরণ করতাম। ভাইয়া প্রকৌশলী হয়ে আমাদের পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিল। মা-বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল ভাইয়াকে নিয়ে। সেটা শেষ হয়ে গেল। আমি দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।'

আবরারের বাবা বরকতুল্লাহর সঙ্গে কথা হলে বলেন, 'ছেলেকে তিনি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলাম। কোন দলের রাজনীতি তো দূরের কথা, পড়ালেখার বাইরে সে আন্য কিছু চিন্তা করতো না। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ অনেক ভারী। এখন আমরা কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখব। ও তো লেখাপড়া শিখে পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিল। সব স্বপ্ন নিভে গেল।'

পরিবার সূত্র জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে ছুটিতে কুষ্টিয়ার বাড়িতে বেড়াতে আসেন আববার ফাহাদ। তবে বাড়িতে এসে পড়ালেখা ঠিক মত না হওয়ায় আগেভাগেই ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। ৬/১০/২০১৯ইং রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় আববার। সকালে তার মা ঘুম থেকে ডেকে তুলে দেয়। এরপর ঢাকায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোনে ৪ বার কথা হয়। আর ঢাকা পৌঁছে বিকেলের দিকে মাকে ফোন করে জানান পৌঁছানোর বিষয়টি। মোবাইলে এটিই তার মায়ের সঙ্গে শেষ কথা। আর সারারাত ফোন দিয়েও ছেলের খবর না পেয়ে বিচলিত হয়ে উঠেন মা রোকেয়া। সকালে খবর পান তার ছেলে আর বেঁচে নেই।

পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, রাতে আবরারের লাশ কুষ্টিয়া আনার পর মঙ্গলবার সকালে গ্রামের বাড়ি রায়ডাঙ্গায় দাফন করা হবে। 
আবরারের বাবার নাম বরকতুল্লাহ। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সুযোগ পেলে তাবলিগে যেত বলে তার পারিবাবিক সূত্র জানায়।  দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ রাব্বী পরিবারের বড় ছেলে। তার ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকে। বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের কাছেই তার হোস্টেল।

রোকেয়া খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, তার ছেলে কোনোদিন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়নি। উচ্চ শিক্ষার জন্য যেখানেই আবেদন করেছিল সেখানেই সে পড়ার সুযোগ পায়। তিনি আরও বলেন, প্রকৌশলী হবার ইচ্ছা আবরারের ছোটবেলার। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েই সে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল। 


আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky