Breaking

Saturday, September 7, 2019

আজ আবুল হায়াতের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী||Today is the 76th anniversary of Abul Hayat

আজ ৭/৯/২০১৯ইং শনিবার আবুল হায়াত ৭৬তম জন্মবার্ষিকী । জীবনের ৭৫ বছর কাটিয়ে আজ ৭৬-এ পা রাখছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যাভিনেতা, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক আবুল হায়াত। আজ তার ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা ১৩৫১ সালের ২৩ ভাদ্র ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। 
 ১০ বছর বয়স থেকেই তিনি অভিনয় করেন। বলতে গেলে পুরো জীবনটা তিনি অভিনয় করেই কাটিয়েছেন। বাংলাদেশে খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে, যারা আবুল হায়াতকে চেনে না। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই অভিনেতা ৭৫ পেরিয়ে ৭৬ এ পা দিলেন সম্প্রতি। তাঁকে নিয়ে বিশেষ আয়োজনে লিখেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু-সহকর্মী আলী যাকের এবং বড় মেয়ে বিপাশা হায়াত

আবুল হায়াত মিষ্টি হেসে জানালেন, একইদিনে তার নাতনী শ্রীশারও জন্মদিন। তাই আনন্দটা হয় দ্বিগুণ।

জন্মদিন প্রসঙ্গে আবুল হায়াত আরও বলেন, ‘দেখতে দেখতে জীবনের দীর্ঘ একটা সময় পেরিয়ে এসেছি। জীবনে যা কিছু অর্জন করেছি তা নিয়েই আমি সন্তুষ্ট। আমার স্ত্রী শিরীন, দুই সন্তান বিপাশা, নাতাশা, দুই মেয়ের জামাই তৌকীর, শাহেদ এবং তাদের সন্তান- এ নিয়েই আমার সুখের পৃথিবী। বাকিটা জীবন ও সবার দোয়া,ভালোবাসার মধ্য দিয়েই পার করে দিতে চাই।’

তিনি আরও জানান, সাধারণত স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় স্কুলের হেডমাস্টার বয়স একটু কমিয়ে দেন। তার বেলায়ও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি।

যে কারণে সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মদিন ২৫ জুন। অনেকেই তাকে ভুল করে এ দিনেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। নিজের জন্মদিনে আবুল হায়াত আরও বলেন, “বড় মেয়ে বিপাশার জন্মের আগেই তারা শংকরের উপন্যাস ‘বিপাশা’ অবলম্বনে বড় মেয়ের নাম রেখেছিলাম। মনে-প্রাণে চেয়েছিলাম প্রথম সন্তান যেন মেয়েই হয়। আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন, আশা কবুল করেছেন।

পরে যখন নাতাশা হলেন তখন আমারই প্রয়াত বন্ধু ইকবাল আহমেদ ও তার স্ত্রী নাতাশার নাম রেখেছিলেন। দুই মেয়েকে নিয়েই আমি গর্ব করি।” 
                                                         আবুল হায়াত এবং দুই মেয়ে বিপাশা ও নাতাশা 
 প্রসঙ্গত, আবুল হায়াত ২০০৮ সালে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৫ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত হন।

প্রসঙ্গত, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই আবুল হায়াত প্রথম মঞ্চ নাটক ‘টিপু সুলতান’-এ অভিনয় করেন। ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চ তার প্রথম নাটক আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’। টিভিতে প্রথম অভিনয় করেন জিয়া হায়দারের প্রযোজনায় ‘ইডিপাস’ নাটক। প্রথম বিজ্ঞাপন কিউট টুথপেস্ট। মঞ্চে নির্দেশিত তার প্রথম নাটক ‘আগন্তুক’ এবং টিভিতে ‘হারজিৎ’। প্রথম অভিনীত সিনেমা ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। ১৯৭৪ সালে আলী যাকেরের নির্দেশনায় মঞ্চে ‘বাকী ইতিহাস’ নাটকে অভিনয় করে তিনি ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্ট্র–ডিউসিং ন্যাচারালিস্টিক অ্যাক্টিং অন বাংলাদেশ স্টেজ’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। এটি বাংলাদেশে দর্শনীর বিনিময়ে প্রথম মঞ্চ নাটক।

বিপাশা হায়াত
আমার বয়স ৪৭ বছর। জীবনের এতটা সময়েও বাবা আমার মধ্যে কতটা উপস্থিত, সেটা বলে শেষ করা যাবে না। এককথায় বললে, অসাধারণ বাবা। আমার সব কাজেরই মূল প্রেরণা বাবার কাছ থেকে। বাবার মূল্যায়ন করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি মনে করি, সেটা বাংলাদেশের মানুষই করেছে। বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা করে। জাতীয় পর্যায়ে যে পুরস্কারগুলো পেয়েছেন, সেগুলো অনেক বড় মূল্যায়ন তাঁর জন্য।  মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়ই বাবার সব মূল্যায়ন লুকিয়ে আছে। আমার বাবা ও মা একই সঙ্গে চিন্তা করেন, একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের মতামতও একই। বিভিন্ন সময়ে আমাদের নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কখনো তাঁদের মতপার্থক্য হয়নি। সুতরাং আমার এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও মা-বাবা দুজনের কথাই বলতে হবে। আর আমি তাঁদের দেখানো পথেই চলেছি। খারাপ কিছু ভুলে যাও। এটা আমার মা-বাবা দুজনেরই দর্শন। আবার যখন আমরা প্রতিবাদ করি, তাঁদের পাশে পাই। হয়তো তাঁরা ভয় পান যে আমি কোনো বিপদে পড়ব কি না। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করার গুণটা তাঁদের কাছ থেকেই শেখা। অন্যায়কে মেনে নেওয়া যাবে না। তাঁরা সে শিক্ষাও দিয়েছেন। শুধু অভিনয়ের ক্ষেত্রে নয়, গান, ছবি আঁকার ক্ষেত্রেও বাবার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
 
                                           স্ত্রী, দুই মেয়ে, মেয়েজামাই ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে
 জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও মা-বাবার পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট পেয়েছি। আমরা তো থিয়েটার করা মানুষ, একই সঙ্গে চারুকলারও মানুষ আমি।  রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত হয়তো আমরা থিয়েটারের কাজ করেছি, শিল্পকলায় কাজ করেছি, চারুকলায় বহু রাত পর্যন্ত কাজ করেছি, শুটিংয়ের কারণে ভোররাতে বাসায় এসেছি—এ ধরনের জীবনচর্চার ভেতর দিয়েই আমরা গেছি। মা-বাবার আমাদের প্রতি সেই আস্থাটা ছিল। তৌকীরের সঙ্গে আমার বিয়েটা বন্ধুত্বেরই একটা উত্তরণ। বন্ধু হিসেবে সে বহুবার আমার বাসায় এসেছে। আমার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেছে, বাবার নাটকে অভিনয় করেছে।

প্রথম জীবন থেকেই বাবার সুন্দর গাড়ি ছিল। সে সময় বাবার সঙ্গে জিপে করে ঘুরতাম। মঞ্চের রিহার্সালে যেতাম। এত ছোট ছিলাম, তবু সেসব স্মৃতি এখনো কিছুটা মনে পড়ে। বাবার সঙ্গে আসলে আমার বন্ধুর সম্পর্ক। একটা বই পড়ে শেয়ার করা, গল্প পড়ে শেয়ার করা কিংবা আব্বু কোনো স্ক্রিপ্ট লিখছেন সেটা শেয়ার করছেন—এসব খুব ছোটবেলা থেকেই।

বাবার জন্মদিনে সব সময়ই কমন যে গিফটা থাকবে সেটা বই। আর আব্বুও ছোটবেলা থেকে প্রচুর বই কিনে দিতেন। বই পড়ার অভ্যাসটাও আব্বুর কাছ থেকেই পাওয়া। আসলে আব্বুকে আমার এমন একজন আদর্শ মানুষ মনে হয়, যাঁর সবটাই অনুসরণ করি।

বাবার সঙ্গে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি, টিভি ও মঞ্চেও। বাবার সঙ্গে অভিনয় করাটাই আসলে আনন্দের ব্যাপার। মঞ্চে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ করতাম একসঙ্গে। সেখানে বাবাকে আমি ‘ভাই’ বলে ডাকতাম। এটা একটা মজার ব্যাপার। আরেকটি নাটক ছিল ‘হিম্মতী মা’। আসলে আমরা যখন অভিনয়ের জন্য মঞ্চে উঠি, তখন আর বাবা-মেয়ে থাকি না, ওই চরিত্রটাকেই ধারণ করি।

এমন কিছু নেই, যেটা আমি বাবাকে সামনাসামনি বলতে পারি না। সব কিছু বলারই স্বাধীনতা আছে। আমি আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটা বাবার কারণেই। আমি শিল্পের পথে একজন যোদ্ধা। এই যে শিল্পকে ভালোবেসে যুদ্ধ করে যাওয়া, সেই অনুপ্রেরণা আমি সম্পূর্ণই পেয়েছি বাবার কাছ থেকে। এই ঋণ কখনোই শোধ হবে না। বাবা আমাদের দুই বোনের সবটাই পছন্দ করেন। বিশেষ করে আমার লেখা তাঁকে একটু বেশিই মুগ্ধ করে।
                                                       লিবিয়ায় স্ত্রী এবং দুই মেয়ে বিপাশা ও নাতাশার সঙ্গে

নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে আবুল হায়াত বলেন, ‘শুরুতেই আমি আমার বাবা এবং মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। এরপর আমার স্ত্রীর কাছে। কারণ নানা সময় চাকরি নিয়ে, অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ওই সময়টুকুতে সংসার, সন্তানদের আগলে রেখেছে তারা । স্ত্রী সন্তানদের আমি সময় দিতে পারিনি, যা দেয়া উচিত ছিল।

বরেণ্য এ ব্যক্তিত্বের জন্মদিনটি ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’ ও ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় যৌথভাবে পালন করতে চেয়েছিল। পাশাপাশি এ দিনে তাকে সম্মাননা জানানোর কথাও ছিল। কিন্তু জরুরি কাজে স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাংকক গিয়েছেন আবুল হায়াত। তাই এ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হচ্ছে না বলেই জানা গেছে।

আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com



  

No comments:

Post a Comment

Clicky