একটি পরিবারে সন্তান জন্ম নেওয়া, বাবা-মা হওয়া একটি দম্পতির জন্য যেমন অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়, তেমনি তা প্রকাশ করার ভাষাই থাকে না অনেকের কাছে । সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে শুরু করে তাকে সুরক্ষিত রাখা এবং স্নেহ মমতা দিয়ে মানুষ করা একটি বিশাল দায়িত্ব, সেই সাথে প্রচণ্ড আবেগ আর আনন্দের ব্যাপারও বটে। সংসারে দাম্পত্য জীবনে যেনো পূর্ণতা আসে পরিবারে একটি ছোট্ট নতুন মুখ যুক্ত হলে।
একটি শিশুর ভূমিষ্ঠ হবার পরই তার প্রাথমিক চাহিদা হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ । মায়ের বুকের প্রথম শাল দুধ এবং জন্মের প্রথম ছয় মাস বাচ্চার জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি বাচ্চার শরীরের জন্য দরকারি পানিটুকুও মায়ের দুধ থেকেই পাওয়া যায়, যে কারনে জন্মের প্রথম কয়েকটি মাস বাচ্চাদের আলাদাভাবে পানি খাওয়াতে নিষেধ করা হয় । আলাদাভাবে পানি খাওয়ালে প্রস্রাবের সময় অতিরিক্ত পানির সাথে বাচ্চার শরীর থেকে সোডিয়াম বেরিয়ে যায়।
সন্তানের স্বাস্থ্য-রক্ষায়, মা-শিশুর মানসিক প্রশান্তি এবং বন্ধন গড়তে মায়ের দুধ বা স্তন্যদানের ভুমিকার কথা কম বেশি আমাদের সকলেরই জানা, আজকে আমরা সন্তান জন্মদানের পর ও মায়ের দুধের অনুপস্থিতি অথবা ঘাটতি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব । অনেক মা-ই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারনে এমনটি হয়ে থাকে। বর্তমানে সন্তান জন্মের পর পর মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে না , এটা প্রায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায় ।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের ইচ্ছাশক্তি, স্তন্যদানের সঠিক পদ্ধতি এবং কিছু দুগ্ধ উৎপাদনকারী খাবার খেলে সন্তান দুধ পেতে বাধ্য। এই পরামর্শগুলো কিছু ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। তারা নিজ থেকে স্তন্যদান জনিত সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন অথবা শিশু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের ইচ্ছাশক্তি, স্তন্যদানের সঠিক পদ্ধতি এবং কিছু দুগ্ধ উৎপাদনকারী খাবার খেলে সন্তান দুধ পেতে বাধ্য। এই পরামর্শগুলো কিছু ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। তারা নিজ থেকে স্তন্যদান জনিত সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন অথবা শিশু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ মত সব রুটিন মেনেও দেখা যায় কিছু মা দুধ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন । এর ফলে বিভিন্ন কারণবশত, আশেপাশের লোকজন এমনকি নিকট আত্মীয়স্বজনও বিভিন্ন ভাবে মাকেই দোষারোপ করতে থাকেন, অনেকেই ভাবেন মা আলসেমি করে এমনটি করছেন । ফলে সেইসব মায়েরা হতাশ হয়ে পড়েন এবং সন্তানের দুর্ভোগের জন্য নিজেকে দায়ী ভাবতে থাকেন।
আপনার শিশুর পর্যাপ্ত বুকের দুধ এর চাহিদা
আমরা অনেক জায়গায় ফর্মুলা দুধ (শিশুর প্যকেটের দুধ) এর ভয়ংকর বা ক্ষতিকর বিষয় নিয়ে বিভিন্ন লেখা দেখি। প্যাকেট দুধকে ‘ফর্মুলা’ বলা হয় কারন এতে কৃত্রিম উপায়ে প্রাণীজ দুধকে নবজাতক মানব সন্তানের পান উপযোগী করে বানানো হয়। এই প্যাকেটজাত দুধকে কেউ এখন পর্যন্ত মায়ের দুধ এর বিকল্প বা সমান উপকারি বলে দাবী করেন না।
কিন্তু যে শিশুটি মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে, যার মা আর জীবিত নেই, বা মা ভীষণ অসুস্থ অথবা সেইসব মা যারা শতভাগ ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও দুধ উৎপাদন করতে ব্যর্থ - তারা নবজাতককে খাওয়াবেন কি? যারা প্যাকেট বা কৌটার দুধকে ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’ উপাধি দিয়ে যাচ্ছেন, তারা কি একবারের জন্যও ভেবেছেন, যে সব মায়েদের কিছুই করার নেই বা খালা-চাচী-নানী-দাদীর কাছে যে বাচ্চাটি বড় হচ্ছে তাদের কাছে বিষয়টি কতখানি অসহায় লাগতে পারে ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু মায়ের ক্ষেত্রে স্তন্যদানে ব্যর্থতা হতে পারে, যদিও এর সাথে কোন জেনেটিক অথবা ভৌগলিক অবস্থান জড়িত নয়। একজন মায়ের বুকের দুধ উৎপাদিত না হওয়ার বেশ কিছু কারন থাকতে পারে। পূর্ণ বিশ্রাম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্তন্যদানের নিয়মাবলি পালন করেও যদি কোনো মা স্তন্যদান করাতে না পারেন, তাহলে এতে মন খারাপ করার কিছু নেই । অতীতে দাঈ-মার বিষয়টি আমরা সবাই জানি (বাচ্চার মা থাকা সত্ত্বেও)। আমাদের নবীজি (সঃ) মায়ের অসুস্থতার কারনে দাঈ মা হালিমার দুধ পান করেছেন ।
একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘আধুনিক যুগের ‘অলস’ মেয়েরা নাকি বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে চান না । ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখা যাক- আমরা সকলেই জানি ফর্মুলা পাউডার মেশানো দুধ মায়ের দুধের অভাব কখনোই পুরন করতে পারবে না। উপরন্তু, নবজাতককে ফর্মুলা খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটি মাকে মানসিক বা শারীরিক কোনভাবেই সাহায্য করবে না। অন্যথায় ফিডিং বোতল ইত্যাদি ধোয়া, স্টেরিলাইয করা এবং সদ্য প্রসুতির ক্লান্ত শরীর নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর নবজাতকের জন্য যথার্থ উষ্ণতার পানিতে নির্দেশিত পরিমান উচ্চ মুল্যের ফর্মুলা মিশিয়ে বাচ্চাকে এমন এক জিনিস খাওয়ানো, যা কিনা বাচ্চার স্বাস্থ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে। আর একজন মা এত কিছু করছেন বাচ্চাকে সরাসরি নিজের শরীরে উৎপাদিত শুদ্ধ , স্বর্গীয়, যথার্থ উষ্ণতা আর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ পানীয়টি ‘না’ খাওয়াতে পারার জন্য।
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করার কিছু প্রয়োজনীয় দিক
বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় পৃথিবীতে অনেক মা-ই সুনির্দিষ্ট কারন ছাড়াই দুগ্ধ উৎপাদনে অক্ষম হয়ে থাকেন। বিভিন্ন বেবি/প্যারান্টিং ওয়েবসাইটে অসংখ্য মায়ের খোলা চিঠি পড়ে জানা যায়, তারা মানসিকভাবে কতখানি বিপর্যস্ত বোধ করেন যখন তারা এই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যান ।
১) প্রাকৃতিকভাবেই একজন মা সন্তানের সবচেয়ে ভালটাই চান। এই পরিস্থিতিতে আমরা অনেকেই ‘Unwanted Advice’ দিতে খুব পছন্দ করি। বেশি বেশি লাউ খাবেন, কালিজিরা খাবেন, এটা খাবেন, ওটা করবেন। হ্যাঁ, এটা মায়ের উপকারের উদ্দেশ্যে বললেও শেষমেষ সেই মা হয়তো মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, তিনি ভাবতে পারেন অন্যরা যা পেরেছেন, আমি কেন তা পারছি না, হয়তো আমি নিজেই ব্যর্থ- আর এসময়ে একজন মা হতাশায় ভুগলে মা ও সন্তান দুজনেরই ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই মা কে হতাশ না করে একটু সাহস উদ্দীপনা দিলে অনেক বেশি উপকার হয় ।
২) যদি আপনি একজন মা হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সুস্বাস্থ্য এবং বাচ্চার সুস্বাস্থ্য রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। নিজের বিষয়গুলো শেয়ার করুন আর অন্যদের অভিজ্ঞতাও জানতে চেষ্টা করুন। নিজে নিজেই কিছুটা পড়াশুনা করে জেনে নিন। আত্ম-সচেতনতা প্রতিটি মায়ের জন্য খুবই দরকার। তা না হলে প্রয়োজনে কনসালট্যান্টের কাছে যান এবং নিজের অসুবিধার বিষয়টি শেয়ার করুন।
৩) আপনার শিশুর আপনাকেই দরকার, তাই নিজেকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ঠিক রাখাই আপনার সবচেয়ে বড় কাজ । যেটা পারছেন না, যেটা হচ্ছেই না, তার জন্য হতাশ না হয়ে বিকল্প উপায়ে যান এবং সেই সাথে চালিয়ে যান চেষ্টাও । (Failure in breast feeding is not the end of the world)
মনে রাখবেন, পৃথিবীর সব মা এবং সব বাচ্চা এক একজন স্বতন্ত্র ব্যাক্তি এবং স্বতন্ত্র শারিরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, এক একজনের পারিপার্শ্বিকতা, সহনশীলতা ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । তাই সবসময় মা-কে উপদেশ না দিয়ে বরং তার কথা গুলো আমরা একটু মন দিয়ে শুনি, তাকে একটু সাহস, উদ্দীপনা দিলে অনেক বেশি উপকার হয় তার নিজের ক্ষেত্রে, তার অবস্থা অনুযায়ী সমাধান তখন সে নিজেই খুঁজে নিতে পারবে ।
আরো পড়ুন–
☞ ভালবাসার সাদা বকের ছোট ছানাটি
☞ মেশিনের মাধ্যমে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যা
☞ কেন নির্মমভাবে হত্যা করা হল ছোট্ট শিশুটিকে
☞ বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় যে প্রমাণ পাওয়া গেছে
☞ বাবার কোলেই হত্যা করা হয় ঘুমন্ত শিশু তুহিনকে
☞ ভালবাসার সাদা বকের ছোট ছানাটি
☞ মেশিনের মাধ্যমে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যা
☞ কেন নির্মমভাবে হত্যা করা হল ছোট্ট শিশুটিকে
☞ বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় যে প্রমাণ পাওয়া গেছে
☞ বাবার কোলেই হত্যা করা হয় ঘুমন্ত শিশু তুহিনকে
আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
No comments:
Post a Comment