Breaking

Friday, October 11, 2019

আবরারকে নিয়ে তাসলিমার স্ট্যাটাস, ভক্তদের মন্তব্যে তাসলিমার ব্যাখ্যা || Taslima Nasreen's Status on Facebook about Abrar and reactions of followers

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে যখন তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তখনই প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের একটি লেখা ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে ফেসবুকে পোস্ট করা ওই স্ট্যাটাস দেখে বেশিরভাগ মানুষই মন্তব্য করেন যে, তসলিমা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আবরার হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করছেন। পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে, তার ভক্তরাই তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত আবরাকে নিয়ে লেখা ওই স্ট্যাটাসের ব্যাখ্যা দিয়ে আজ বিকালে আরেকটি পোস্ট দিয়েছেন নির্বাসিত লেখিকা।
 তসলিমা নাসরিন যা যা লিখেছেন,

'আবরার নিয়ে ফেসবুকে আমার প্রথম পোস্টঃ
শেখ হাসিনার পিতাজি শেখ মুজিবর রহমানকে 'বংগবন্ধু' বলে যে না ডাকবে, সে দেশদ্রোহী -- এরকম একটি ধারণা দেশময় ছড়িয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজের জন্যও একটি নতুন নাম বেছেছেন, সেটি হলো 'দেশরত্ন'। তাঁকে 'দেশরত্ন' বলে না ডাকলে কারও গর্দান যায় কিনা জানিনা। গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেশরত্ন, এর মানে তিনি দেশের রত্ন। রত্নগর্ভাও তিনি। এত এত রত্নকে গর্ভে ধারণ করেছেন, এত এত রত্নকে জন্ম দিয়েছেন, যে রত্নগুলো নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে মাঠে ঘাটে, ঘরে বাইরে, ঝাড়ে জংগলে বেঁহুশের মতো কুপিয়ে মারছে, পিটিয়ে মারছে!

দেশরত্ন এখন ভালোয় ভালোয় তাঁর প্রসব করা রত্নগুলোকে আবার গর্ভে ঢুকিয়ে নিন -- তা না হলে সমূহ বিপদ। 'দেশদ্রোহী'রা একজোট হচ্ছে।

সুত্রঃ https://www.facebook.com/nasreen.taslima/posts/1774132436064540

আবরার নিয়ে ফেসবুকে আমার দ্বিতীয় পোস্টঃ
ছাত্রলীগের ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের ভেতর একটি ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। সবাই অবাক। অবাক হওয়ার তো কথা নয়! ছাত্রলীগের ছেলেরাই তো এখন মারবে। যুবলীগ মারবে। আওয়ামী লীগ মারবে। তারা ক্ষমতায়। এরপর বিএনপি সরকারে এলে ছাত্রদল মারবে , যুবদল মারবে, বিএনপি মারবে। জামাতে ইসলামি এলে শিবির মারবে, যত জামাতপন্থী ইসলামি দল আছে, মারবে। আমরা তো জীবনভর তা-ই দেখে আসছি। যে দল ক্ষমতায়, সে দলের সদস্য- সমর্থকরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে, এবং যা খুশি তা-ই করে বেড়ায়। ধর্ষণ, খুন, লুটতরাজ, হুমকি, চাঁদাবাজি, কী নয়?
আজ যদি ছাত্রলীগের ছেলেদের বদলে ছাত্রদলের ছেলেরা কোনও ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলতো, তাহলে বরং অবাক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষমতায় না থেকেও এত সাহস কী করে পেল ছাত্রদলের ছেলেরা -- এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা গবেষণা ইত্যাদি চলতে পারতো।
এখন যাদের খুন করার দিন, তারাই করছে খুন। সুতরাং খবরটা শুনে নিশ্চিন্তেই থাকা উচিত। নিয়মে কোনও ওলোট পালোট তো হচ্ছে না। সকালে উঠে চায়ে চুমুক দিতে দিতে একবার বললেই চলবে, লং লিভ ডিমোক্রেসি।
(আবরারের চালচলন চিন্তা-ভাবনা শিবিরের মতো ছিল :তসলিমা)

আবরার নিয়ে আমার তৃতীয় পোস্ট নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়ে গেল আজ। এই পোস্টের ঠিক আগের পোস্টটিই তৃতীয় পোস্ট। ওই পোস্টে আমি সমালোচনা করেছি তাদের, যারা আবরারের গুণকীর্তণ গাইতে গিয়ে বলছেন যে আবরার ধার্মিক ছিল, পাঁচবেলা নামাজ পড়তো। মাদ্রাসার ছাত্রের বেলায় যেটি গুণ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের বেলায়ও সেটি গুণ? আমার পোস্টটি মূলত ছিল গুণ নিয়ে।

তসলিমা নাসরিনের এই পোস্ট থেকেই মূলতঃ ঝামেলার শুরু।

খুব বেশীদিন আগে নয়, গুলশান ক্যাফের সন্ত্রাসীদের বেলায় একই রকম গুণ গাওয়া হয়েছিল। খুব মেধাবী ছাত্র, পাঁচ বেলা নামাজ পড়ে। আইসিসে যোগ দেওয়া সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তারাও পাঁচ বেলা নামাজ পড়ে। এত দেখার পর অল্প বয়সী ছেলেদের পাঁচ বেলা নামাজ পড়াকে এত প্রশংসা করা হয় কেন? সে পরীক্ষায় ভালো ফল পেত, তার সম্পর্কে বলতে গেলে এটিই কি গুণ নয়। গুণী এবং নির্গুণ সবারই বাঁচার অধিকার সমান। ভালো রেজাল্ট করেছে সুতরাং তার জন্য চোখের জল একটু বেশিই ফেলছে মানুষ। ঠিক যেমন সুন্দরী একটি মেয়ে আহত হলে তার জন্য মানুষের আবেগ উথলে ওঠে, অসুন্দরী মেয়ে আহত হলে খুব বেশী কিছু যায় আসে না।

আমার নাকি ভক্ত তারা, আমার লেখা নাকি ছোটকাল থেকে পড়ে আসছেন। এত পড়ছেন, কিন্তু আমার একটি লেখা পড়ে তাদের মনে হলো আমি খুনকে সমর্থন করছি? যদিও খুনের বিচার আমি চেয়েছি! যেহেতু আমি লিখেছি খুন করার উদ্দেশ্যে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবরার নামের ছাত্রটিকে পেটায়নি, এই মত নাকি খুনকে সমর্থন করে! না এই মত খুনকে মোটেও সমর্থন করে না। আজ যদি ভাড়া করা খুনী দ্বারা আবরারকে মারা হতো, তাহলে নিশ্চয়ই উদ্দেশ্য খুনের হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশ বছর বয়সী ছাত্ররা কোনও এক ফেসবুক পোস্টের জন্য তাদের এক সহপাঠীকে পিটিয়েছে। খুন করলে তাদের ছাত্রজীবনের অবসান হবে, তাদের বাকি জীবন জেলে পঁচতে হবে, এটা এতগুলো ছেলের একজনও কি জানেনি? খুনের উদ্দেশ্য না থাকলেও যেহেতু পিটিয়েছে, সেহেতু শাস্তি হওয়া জরুরি। এ কথাটা স্পষ্ট করে লেখা থাকলেও কুৎসিত গালি গালাজ বন্ধ হচ্ছে না।

একজনতো নাকি আমার বহুকালের ফ্যান, তিনি বললেন, আমি নাকি কাউকে তেল দেওয়ার উদ্দেশ্যে লেখাটা লিখেছি। বোঝাতে চাইছেন, আমি হাসিনাকে তেল দিচ্ছি, দেশে ফেরার জন্য। হায় মনুষ্য মস্তিস্ক! ধিক এইসব ফ্যানদের। এরা আমার বন্ধু তালিকা থেকে বিদেয় হলেই বাঁচি।

আরেকজন বললেন, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আমার মাথার ঠিক নেই, তাই আমি এইসব লিখছি। এরা আমার বন্ধু তালিকায় ছিলেন। বন্ধু নামের কলংক। যারা বন্ধু তালিকায় নেই, তারা শেয়ার করছেন আমার লেখা আর পতিতা বলে মনের সুখে গালি দিয়ে যাচ্ছেন। এই হচ্ছে বাংলাদেশি আবেগ। যখন উথলে ওঠে, সুনামি লেগে যায়। চিন্তাশক্তি বিচারশক্তি সব লোপ পায়।'


আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky