Breaking

Sunday, August 25, 2019

ডেলিভারি সেকশনে স্বামীদের ঢোকার অনুমতি নেই কেন? || Why husbands are not allowed to enter the delivery section?

আমাদের বাংলাদেশে ডেলিভারি কিংবা অপারেশন রুমে রোগীর স্বজনকে পাশে থাকার অনুমতি দেয়া কেনো হয় না?

আমাকে প্রায়শই যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, তার মাঝে একটা হলো-
উন্নত দেশ'গুলোতে নরমাল ডেলিভারি ও সিজারিয়ান ডেলিভারিতে বাচ্চার মায়ের সাথে তার স্বামীকে পাশে থাকতে দেওয়া হয়, যেনো মা তার মাঝে কিছু আলাদা সাহস, আস্থা, এবং ভরসা পান এবং নিজের ভীতি, কষ্ট, যন্ত্রনা স্বামীর সাথে শেয়ার করে নিতে পারেন।

আমাদের দেশের ডাক্তাররা  তাহলে কেনো এই বিশেষ সময়ে স্বামীকে স্ত্রীর পাশে থাকতে অনুমতি দেন না?

আমি নিজ প্রফেশনাল লাইফের অভিজ্ঞতা, বাস্তবতা, বাংগালী সমাজের ভাবনা, বিচার ও মেডিকেল এথিক্স সব কিছু বিবেচনায় রেখে কিছু কারন খুজে বের করেছি। আশা করি যাদের মনে এই প্রশ্ন আছে, তারা বুঝে ও জেনে নেবার চেষ্টা করবেন।

১) আমাদের দেশের সরকারি হাস্পাতালের পরিবেশ নোংরা । সাধারণ মানুষই নোংরা করে রাখে। আয়ারা কোন কাজ করেন না। নার্সরা হেল্প করেন না। আমাদের ডাক্তারদের প্রায় বাধ্য হয়ে এক হাতে সব দিক ম্যানেজ করে নিজেরাই এরকম পরিবেশে কাজ করেন। সাধারণ মানুষ কিংবা রোগীর স্বজনদের জন্য এই ধরনের অবস্থা সহনীয় নয়।
উন্নত কোনো দেশের সরকারি হাসপাতালের চিত্র এমনটা নয় ।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অপারেশন থিয়েটার (ওটি) পরিচ্ছন্ন থাকে। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই ডাক্তারদের নিজেদের রেস্ট নেবার, বসার জায়গা, ওয়াশ রুমও থাকে না। যার ফলে দাড়িয়ে কাজ করতে হয়। ইমারজেন্সিতে ছোটাছুটি করে স্টাফরা কাজ করেন। এসব অবস্থা দেখে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত নয়। উন্নত দেশের হাসপাতালে আধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার হাতের মুঠোয় ও মেডিকেল পার্সনদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া হয়, যা এখানে নাই বললেই চলে!

২) সরকারি কিংবা বেসরকারি যে কোনো হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার গুলোতে কিছু সাধারণ প্রটোকল মেনে চলা হয়। মেডিকেল পারসন (ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক, ওটি বয়, ব্রাদার, আয়া) ছাড়া সেখানে অন্য কাউকে এলাউ করা হয়না। এমনকি হসপিটালের অন্য স্টাফ, ম্যানেজারও এলাউড না, কারন তারা নন-মেডিকেল পারসন।

৩) আমাদের দেশের মানুষদের মাঝে স্বাভাবিকভাবে সহনশীলতা কম। অল্পতে প্যানিক হয়, অকারনে রেগে যায়, ক্ষমতার জোর বা অপব্যবহার, ডাক্তার, নার্স এর সাথে খারাপ আচরণ, এমনকি কিভাবে চিকিৎসা করতে হবে সে বিষয়েও মতামত দিতে থাকে রোগীর স্বজনরা।

যে কোনো অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও ডেলিভারি রুমে যারা কাজ করেন তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজে পারদর্শী ও অভিজ্ঞ। কখনই রোগীর স্বজনের জ্ঞান নেয়ার প্রয়োজন হয় না, কিভাবে ইমারজেন্সি ম্যানেজ করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব উটকো ঝামেলা, ফ্যাসাদ, অল্প জ্ঞানে বেশি বোঝা, মাতব্বরি আমাদের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে। উন্নত দেশে রোগী কিংবা তার স্বজন কেউ কখনো চিকিৎসা কিভাবে হবে তা নিয়ে এ ধরণের অনভিপ্রেত অযাচিত কাজ, মতামত দেবার দুঃসাহস করেন না, অধিকারও রাখেন না।

★ ওটিতে/ডেলিভারি রুমে নন মেডিকেল পারসন এলাউ না করার কয়েকটি কারন - 

১। তারা অপারেশন/ডেলিভারি রুমের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখতে কিভাবে হয়, তা জানেন না। তাদের থেকে ইনফেকশন ছড়াবার চান্স থাকে।

২। ডেলিভারি ও অপারেশন রুমে কাটা ছেঁড়া হয়, প্রচুর ব্লিডিং হয়, সেলাই করা হয়, শরীরের বিভিন্ন অংগ প্রয়োজনে বাইরে বের করা হয়, কেটে রাখা হয়। এসব দেখে মেডিকেল পার্সনরা অভ্যস্ত। নন মেডিকেল পার্সন, রোগীর স্বামী, স্বজন কেউ এসব ব্যাপারটিকে স্বাভাবিক ভাবে সহ্য করতে নাও পারেন।

৩। যে কোনো ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে রোগী ম্যানেজ করার জন্য ডাক্তার, নার্স, স্টাফদের ছোটাছুটি করে দ্রুত কাজ করতে হয়। এসব দেখে রোগীর স্বজন প্যানিক হয়ে যেতে পারেন।

৪। ডেলিভারি কিংবা অপারেশন রুমে রোগী ও বেবিকে সুস্থ্য রাখা আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে। এমন একটা পরিবেশে তাদের স্বজনরা অসুস্থ‍্য হয়ে পড়লে, তাকে নিয়ে ব্যস্ত হবার সময়তো কারো হবে না। একটা এক্সট্রা ঝামেলা, তাই না?

৫। এতো কিছুর পরেও, যদি অপারেশন ও ডেলিভারি রুমের ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন বুঝে কোন রোগীর স্বামী সাথে থেকে রোগীকে সাহস দিতে চান, তাহলে তাকে প্রটোকল অনুযায়ী জীবাণুমুক্ত কাপড় পরিধান ও শক্ত সাহসী মনের অধিকারী হতে হবে। যা সবাই হতে পারেন না।

৬। রোগীদের অনুরোধে আমি কয়েকজন হাসব্যান্ডকে কিছুক্ষণের জন্য অপারেশন রুমে পেশেন্ট এর সাথে থাকতে দিয়েছিলাম , তবে সংগত কারনেই সবসময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

যখন আমি একজন বেবিকে দুনিয়ার মুখ দেখাচ্ছিলাম, উপরের ছবিগুলি জুম লেন্স দিয়ে অপারেশন রুমের দরজা থেকে তুলেছেন একজন বেবির বাবা (যিনি নিজে একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার)।
আজকের এই সময়ে সেই বেবির বয়স ৯ মাস সম্ভবত।

জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাঃ নাজিয়া বিনতে আলমগীর এর লেখাকে কিছুটা সংক্ষিপ্ত ও পরিবর্তন করে পোষ্টটি তৈরি ও প্রকাশ করা হয়েছে।



আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

2 comments:

  1. খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, ভাই ।

    ReplyDelete

Clicky