Breaking

Sunday, July 7, 2019

রামপুরায় পরপর ২ গৃহবধূর আত্মহত্যা, স্বামীসহ ৩ জন কারাগারে

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় দুই দিনের ব্যবধানে দুই গৃহবধূর আত্মহত্যা ঘটনা উল্লেখ্য। এ ঘটনায় দুই গৃহবধূর স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঝুলন্ত লাশ। ছবিটি রাজধানীর রামপুরা এলাকায় দুই দিনের ব্যবধানে দুই গৃহবধূ আত্মহত্যা কথা শোনা যায় । এ ঘটনায় দুই গৃহবধূর স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছেন পুলিশ। গতকাল ৫/৭/২০১৯ইং শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।



৪ জুলাই ২০১৯ ইং বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে পূর্ব রামপুরার জাকির রোডের ভাড়া বাসার ভেতর থেকে তানিয়ার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় । এ ঘটনায় তানিয়ার বোন আমেনা বেগম বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে রামপুরা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ৪ জুলাই মামলা করেন। চারজন-১) শশুর, ২) শাশুড়ি, ৩) দেবর সুজা ৪) স্বামী সুজন

তানিয়ার  (২০) আত্মহত্যা
তানিয়ার বোন আমেনা মামলার এজাহারে জানান, প্রায় এক বছর আগের কথা, তাঁর বোন তানিয়ার সঙ্গে সুজন মিয়ার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর তানিয়া জানতে পারেন, সুজন মিয়া এর আগেও আরও দুটি বিয়ে করেছিলেন, যা সুজন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তানিয়াকে বিয়ের সময় গোপন করেন। বিয়ের পর পরই সুজন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তানিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেতে থাকে । সুজন মিয়ার পরিবারের সদস্যরা প্রায় তানিয়াকে বলতেন, ‘তুই সুন্দর না, কেন যে তোকে বিয়ে করিয়েছিলাম সুজনকে, তুই মর। তুই যদি মরিস তাহলে তোর চেয়ে সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে সুজনের আবার বিয়ে দিতে পারব।’ মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ্য করা হয়েছে, ৪ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার সময় সুজনের শাশুড়ি জাহানারা বেগম তানিয়ার ভাড়া বাসার দিকে আসেন। টুকিটাকি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তানিয়াকে বকাঝকা করে চলে যান। এরপর তাঁর ভাই জাকির বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পান, তানিয়ার ঘরের দরজা বন্ধ। এরপর অনেক ডাকাডাকির পরেও যখন কোন সাড়া মিলেনি, তখন দরজা ভেঙ্গে তানিয়ার লাশ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
 

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রামপুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলক কুমার দে আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বললেন, আসামি (স্বামী) সুজন মিয়া ও তাঁর পরিবার তানিয়াকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়েছে । এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি সুজন ও তাঁর ভাই সুজাকে জেলহাজতে আটক রাখার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে রামপুরা থানা পুলিশ।

০২ জুলাই ২০১৯ ইং মঙ্গলবার রাতে রামপুরার বনশ্রী এলাকার বাসা থেকে বর্ণালির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বর্ণালির মা শিখা রানী সেন বাদী হয়ে মেয়ের জামাই মিথুন চন্দ্র দে'র বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় ০৩ জুলাই একটি মামলা করেন।

বর্ণালির (২৩) আত্মহত্যা
বর্ণালির মা শিখা রানী সেন মামলার এজাহারে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে তাঁর মেয়ের সঙ্গে মিথুন চন্দ্র দে'র বিয়ে হয় । বিয়ের পর বর্ণালি জানতে পারে স্বামী মিথুন এর পরকীয়ায় কথা । এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায় দিনই ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত, মিথুন তাঁর দেড় বছরেরে মেয়েকেও মারধর করতে শুরু করে । তারপর নিজের মেয়ের কথা চিন্তা করে বর্ণালি মুখ বুজে সব সহ্য করে আসছিলেন। স্বামী মিথুন প্রায়ই বর্ণালিকে  বলতেন, ‘তুই মর, তুই যদি মরিস তাহলে তোর চেয়েও অনেক সুন্দরী মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারব।’

এজাহারে আরও  উল্ল্যেখ করা হয়, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ০২ জুলাই রাতে বর্ণালি নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন। রামপুরা থানার এস আই কামরুল হক জিহান আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানান, বর্ণালি মজুমদারের সঙ্গে আসামি মিথুন চন্দ্র দে সংসার জীবনে খুবই খারাপ ব্যবহার করতেন বলে জানা যায় । নিজ পরকীয়ার কথা বর্ণালিকে জানাতেন মিথুন। মিথুনের এই অসহ্য যন্ত্রনা এবং প্ররোচণায় বর্ণালি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। আদালত মিথুনকে এক দিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি প্রদান দেন।

‘মা আমাকে আর জোর করে ঢাকায় পাঠিও না, আমার স্বামী  আমাকে প্রতিদিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। একা বাসায় কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখের জলও শুকিয়ে গেছে । প্রতিদিনই বলে তুই মর, তুই মরলেই আমি তোর চেয়ে সুন্দর মেয়ে পাবতোর মা-বাবা আমার বাবার সম্পদ দেখে তোকে আমার কাছে বিয়ে দিয়েছে তাই না ? আর আমি যদিও অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করি তাতে তোর কি?’

সংবাদকর্মীদের সামনে নিহত বর্ণালী মজুমদার বন্যার মা শিখা রানী সেন বর্ণনায় বললেন এভাবেই মেয়েকে প্রতিদিনের নির্যাতনের শিকার হতে হত, মেয়ে আমায় জানাত ।

সূত্র জানায়, ৫ বছর পূর্বে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বাবুল মজুমদারের মেয়ে বর্ণালী মজুমদারের সঙ্গে পৌর ৬নং ওয়ার্ডের চুনি লাল দে'র ছেলে মিথুন দে ওরফে রাহুলের পারিবারিকভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হয় । কিন্তু বিয়ের পর থেকে প্রায় প্রতিনিয়ত মিথুন ও মিথুনের পরিবার নিহত বর্ণালীকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করতে থাকে । এমনকি নির্যাতন করে কয়েকবার বাসা থেকেও বের করে দিয়েছে ।


একপর্যায় বর্ণালী ঢাকায় স্বামীর বাসা থেকে চলে আসে বোরহানউদ্দিনে বাবার বাড়ি। বর্ণালী স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে বোরহানউদ্দিনে ফিরে আসলে তার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি বর্ণালীর মা-বাবাকে অনুরোধ করলে তাকে অনেকটা জোর করেই ঢাকার বনশ্রীতে স্বামীর বাসায় পাঠানো হয়। পাঠানোর সময় বর্ণালী তার মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, আমি আর ঢাকা যাব না । আমার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে লাশ বানিয়ে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত বর্ণালীর কথাটি সত্য প্রমাণিত হয়ে গেল । লাশ হয়েই বাবার ভিটায় শেষ বারের মত ফিরলেন বর্ণালী মজুমদার বন্যা!

গত ২ জুলাই রাতে বনশ্রী এ ব্লকের ২ নম্বর সংলগ্ন একটি বাসা থেকে রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় বর্ণালীর স্বামী মিথুন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বর্ণালীর পরিবার জানান--এদিকে বর্ণালীর মৃতের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তার স্বামী মিথুন লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে রহস্যময়ভাবে আগেই রামপুরা থানায় গিয়ে আটকের নাটক করে বলে অভিযোগ করে ।

বর্তমানে মৃত বর্ণালীর দেড় বছরের কন্যাসন্তান ও কাজের মেয়ে তার বাসায় আছে বলে যুগান্তরকে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে ওসি আ. কুদ্দুস ফকিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী কারণে বর্ণালীর মৃত্যু হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেব। এদিকে বর্ণালী কী কারণে মারা গেছেন, তার সঠিক তদন্ত রামপুরা থানায় হবে কিনা- তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বর্ণালীর মা-বাবা। তারা মামলার সঠিক তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ।

এ ঘটনায় দুই গৃহবধূর স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ৫/৭/২০১৯ ইং শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে ।

নিহত দুই গৃহবধূ হলেন বর্ণালি মজুমদার বন্যা (২৩) ও তানিয়া আক্তার (২০)। কারাগারে পাঠানো দুই আসামি হলেন বর্ণালির স্বামী মিথুন চন্দ্র দে (৩১), তানিয়ার স্বামী সুজন মিয়া (৩০) ও তাঁর ভাই সুজা মিয়া (২৫)।
আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky