Breaking

Friday, April 5, 2019

টার্কি মুরগী লালন পালন - জৈব নিরাপত্তা-১ পর্ব-৯

টার্কি মুরগী লালন পালন - জৈব নিরাপত্তা-১ পর্ব-৯


খামারে রোগ সৃষ্টিকারী মাধ্যমগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
যেই যেই মাধ্যমে রোগ জীবাণু খামারে টার্কিগুলোকে আক্রমন করে থাকেঃ
  • বাতাসের মাধ্যমে
  • পানির মাধ্যমে
  • খাবারের মাধ্যমে
  • মশা, মাছি ও কীট পতঙ্গের মাধ্যমে
  • ইদুর, সাপ ও বেজী ইত্যাদির মাধ্যমে
  • বন্য পাখি এবং পশুর মাধ্যমে
  • মানুষের মাধ্যমে
  • ভ্যাকসিন বিশেষ করে খরাব ঠধপপরহব এর মাধ্যমে
  • সংক্রামিত আসবাব পত্র  এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক উপকরনের (রিক্সা, ভ্যান, গাড়ী) ইত্যাদির মাধ্যমে

প্রতিরোধঃ
টার্কিকে সবসময় পরিস্কার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে পানিতে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে পরিশোধন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্লিচিং পাউডার এর মাত্রা হবে প্রতি ১০০ লিটার পানিতে .৪ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার। পানির পাত্র প্রতিদিন জীবাণুনাশক দ্বারা পরিস্কার করে পানি সরবরাহ করতে হবে। গরম কালে পাত্র ঘন ঘন পানি পরিবর্তন করে ঠান্ডা পানি সরবরাহ অতি উত্তম এবং এ উদ্দেশ্যে দুপুর বেলায় অতিরিক্ত গরমের সময়ে খাবারের পানির সাথে কিছু বরফের টুকরা/স্যালাইন, ভিটামিন-সি, আখের গুড় মিশিয়ে খাওয়ালে গরমের ধকল দ্রুত কাটিয়ে উঠবে।

মাত্রাঃ
স্যালাইনঃ প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম।
ভিটামিন সিঃ প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম।
আখের গুড়ঃ প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম।
লবণঃ প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম।
ভিনেগারঃ প্রতি লিটার পানিতে ১০-১২ সিসি/এম.এল।

সতর্কতাঃ
ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানিতে কখনোই ভ্যাকসিন মেশানো যাবে না।

>> যখন পানির পাত্রে ভ্যাকসিন মিশিয়ে খাওয়াবেন, সেই সময় জীবাণুনাশক দ্বারা পানির পাত্র পরিস্কার করা যাবে না। প্রয়োজনে গরম পানিতে পানির পাত্র পরিস্কার করার পর পাত্র ঠান্ডা করে এবং ফুটানো ঠান্ডা পানিতে ভ্যাকসিন মিশিয়ে তবেই প্রয়োগ করতে হবে।

>> খাবার পাত্র / পানির পাত্রঃ ভিম সাবান দিয়ে ঘষে মেজে উত্তমভাবে ধৌত করে তারপর জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানিতে ভালভাবে চুবিয়ে রোদে শুকিয়ে খাদ্য শুকিয়ে সরবরাহ করতে হবে। খাবার এবং পানির পাত্র ছত্রাক দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে এবং এটা মুক্ত করার জন্য সপ্তাহে ২ দিন তুঁতে (কপার সালফেট) মেশানো পানি দ্বারা ধুয়ে পরিস্কার করতে হবে।

>> তুঁতের মাত্রাঃ প্রতি লিটার পানিতে ০৫ গ্রাম।

>> মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ খামারে না প্রবেশ করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খামারের ভিতর বা আশে পাশে ডোবা, নালা, জলাশয় থাকলে এগুলো উক্ত কীটের প্রজনন স্থান হতে পারে। সুতরাং ছোট ছোট জলাশয়গুলো ভরাট করে ফেলতে হবে, ডোবা নালা পরিস্কার করতে হবে। মাঝে মাঝে ডোবা নালা ব্লিচিং পাউডার বা অন্যান্য জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে। খামারের ভিতর এবং আশে পাশের ঝোপ জঙ্গল কেটে পরিস্কার করে রাখতে হবে। ইঁদুর, সাপ, বেজী বাগদাশ, কুকুর ও অন্যান্য বন্য প্রানী যেন না ঢুকতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বন্য প্রানী প্রতিরোধে খামারের চারদিকে জি.আই তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। টার্কি থাকার বাসস্থানের মেঝে এবং খাদ্য সংরক্ষণ করার মেঝে অবশ্যই পাকা হতে হবে। এবং মাচার উপর টার্কির খাবার রাখতে হবে। যদি খামারে সাপের উপদ্রব হয় তবে চারপাশে কার্বোলিক এসিড স্প্রে করে দিতে হবে।

>> বন্য পাখি যেন টার্কির বাসস্থানে এবং আশে পাশে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ করে শালিক, চড়ুই পাখি বাসস্থানের চালার নিচে কার্নিশ দিয়ে ভিতরে ঢুকে থাকে এবং পাখির মাধ্যমে অনেক মারাত্মক রোগ জীবাণু খামারে প্রবেশ করে। বিশেষ করে সালমোনেল্লা এবং বার্ড-ফ্লুর মতো ভয়ংকর রোগ সমুহ। ছোট ছোট ছিদ্র যুক্ত নাইলনের নেট দিয়ে বাসস্থানের কার্নিশের ফাকা জায়গাগুলোতে লাগিয়ে দিতে হবে, যেন পাখি বাসস্থানে না ঢুকতে পারে। খামারের বাইরের আঙ্গিনায় যেখানে টার্কি বিচরণ করবে সে সমস্ত জায়গায় যেন দানাদার খাদ্য পড়ে না থাকে সেদিকে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে এবং বাসস্থানের ভিতর ব্যাতিত দানাদার খাদ্য কখনোই বাহিরের আঙ্গিনায় সরবরাহ করা যাবে না। কারন এতে করে বন্য পাখির উপদ্রব বেড়ে যাবে।


>> টার্কি বা পোল্ট্রির বড় শত্রু হলো মানুষ। বেশীর ভাগ রোগ বালাই মানুষের মাধ্যমে খামারে সংক্রামিত হয়ে থাকে, এটা প্রতিরোধ করতে হবে।

>> খামারে দর্শনার্থীর প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
>> খামারের মালিক, ম্যানেজার, মাঠ কর্মী, দর্শনার্থী প্রত্যেকের জুতা/গামবুট, হ্যান্ড গ্লোভস্ থাকবে এবং খামারে ঢোকার পূর্বে গোসল করে এগুলো পরিধান করে অহঃরপবঢ়ঃরপ ঋড়ড়ঃ ইধঃয এ পা ভিজিয়ে তবেই খামারে ঢুকতে হবে। একবার ব্যবহৃত এপ্রোন, মাস্ক, টুপি, হ্যান্ড গ্লোভস্ ভালভাবে অহঃরপবঢ়ঃরপ ডধংয না করে ঐগুলো পরিধান করে খামারে ঢোকা যাবে না।

>> ডিমের ট্রে এবং অন্যান্য উপকরণ প্রতিবার জীবাণূনাশক দিয়ে ধৌত করে খামারে ঢুকাতে হবে।

>> খামারের ভিতর গাড়ী, ভ্যান গাড়ী, রিক্সা অবশ্যই এন্টিসেপটিক ফুট বাথ এ চাকা ভিজিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করে ঢুকাতে হবে। এক্ষেত্রে জীবাণুনাশক হিসেবে ফরমালিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

>> মাত্রাঃ প্রতি লিটার পানিতে ১০ সিসি ফরমালিন।

>> বায়ু বাহিত রোগসমূহ প্রতিরোধঃ এর জন্য অবশ্যই সঠিক বয়সে, সঠিক সময়ে, সঠিক ভ্যাকসিন এবং সঠিক মাত্রায় অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। পুষ্টিকর, মানসম্মত এবং বিশুদ্ধ খাদ্য খাওয়ালে আপনার টার্কিগুলোতেও নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হবে এবং রোগমুক্ত থাকবে।

>> প্রতিটি খামারে অবশ্যই একটি হসপিটাল শেড থাকতে হবে। এটি মূল শেড বা বাসস্থান থেকে একটু দুরে তৈরী করতে হবে এবং কোন সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে উক্ত হসপিটাল শেডে অসুস্থ টার্কি স্থানান্তর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky