Breaking

Saturday, April 27, 2019

গর্ভকালীন কোমর ব্যথাঃ সমস্যা, কারণ ও প্রতিকার

গর্ভকালীন কোমর ব্যথাঃ
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা বা মাজা ব্যথা নারীদের একটি পরিচিত সমস্যা । প্রতি চার জন নারীর তিন জন নারীই এই  ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হন। এর প্রধান কারণগুলো হচ্ছে ক্রমবর্ধমান জরায়ু এবং প্রেগনেন্সি জনিত হরমোনের পরিবর্তন। আস্তে আস্তে আপনার জরায়ু যত বড় হবে, ততই আপনাকে মধ্যাকর্ষণের বিপরীতে এর ভার বহন করতে হচ্ছে। এটি পেটের মাংশপেশীকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়  এবং পুরো ভারটাই কোমরের মেরুদণ্ডের উপর চাপ তৈরি করে থাকে। এর ফলে গর্ভাবস্থায় নারীরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারেন না, কাজ করলে মাজায় ব্যথা অনুভব করেন। 

শুধু  কি তাই? এর ফলে ক্রমবর্ধমান জরায়ু তার আশে পাশে থাকা নার্ভের উপর প্রেশার দিয়েও মাজা ব্যথার কারণ ঘটায় ।


অপরদিকে শরীরের কিছু হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যেতে থাকে গর্ভধারণের শুরু থেকেই। এর মধ্যে প্রজেস্টেরন এবং রিলাক্সিন হরমোন কোমরের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং লিগামেন্টসকে নরম এবং ঢিলা করে দেয় । এতে করে জয়েন্টের ভার বহন ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। ফলে গর্ভবতী নারীরা খুব সহজেই কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন ।

যে সকল নারীর গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকেঃ

১) যারা প্রেগনেন্সির আগেও মাজা-কোমর ব্যথার সমস্যায় ভুগেছেন অথবা পূর্বের প্রেগনেন্সিতে এ ধরনের সমস্যায় ভুগেছেন ।

২) গর্ভধারণকালীন দীর্ঘ সময় বসে বা শুয়ে থেকে কাটানো, যেমন দীর্ঘক্ষণ হাত, পা না নাড়া করার কারণেও এ ধরনের সমস্যা হয় ।

৩) যাদের পেট এবং পিঠের মাংশ পেশী সবল নয় অর্থ্যাৎ শরীর অধিকাংশ সময়ই দূর্বল থাকে ।

৪) একের অধিক বাচ্চা গর্ভধারণেও এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে ।

৫) শরীরের ওজন / BMI তুলনামুলকভাবে বেশি থাকলে ।

গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার সমস্যাগুলো থেকে প্রতিকারঃ


গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যাথার সমস্যা সম্পূর্ন প্রতিকার অনেকসময় সম্ভব না হলেও আপনার প্রতিদিনের জীবন যাত্রার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে কিছুটা ব্যথামুক্ত থাকতে পারেন ।

গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কমাতে ইয়োগা -
১) এক্সারসাইজ- এক্সারসাইজের মাধ্যমে মেরুদণ্ড এবং কোমরের মাংশপেশীকে সবল করে কোমর ব্যথার প্রতিকারে সাহায্য করে। প্রেগনেন্সি সহনীয় কিছু এক্সারসাইজ হলো প্রতিদিন কিছুটা সময় হাঁটা , ইয়োগা , সাঁতার কাটা ইত্যাদি ।

২) মেরুদন্ড সোজা রাখা- বসে থাকা বা দাঁড়ানোর সময় মেরুদণ্ড সবসময় বাঁকা করে না রেখে সোজা রাখতে হবে ।

৩) হিল জুতা না পরাঃ গর্ভাবস্থায় বেশি উচু হিল জুতা না পরে নিচু স্যান্ডেল পরা উচিত যাতে, করে শরীরের ভার সমানভাবে পায়ের পাতার উপর ছড়িয়ে পড়ে ।

৪) গরম পানির ভাপ- উষ্ণ গরম পানির ভাপ মাংস পেশীকে রিলাক্স করে ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে , তবে খেয়াল রাখতে হবে এই উষ্ণতা যাতে চামড়ার জন্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে । অনেকের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডাও একইভাবে ব্যথার উপশম করতে পারে ।

৫) মাংস পেশী ম্যাসাজ- পিঠের মাংস পেশী ম্যাসাজ করেও ব্যথা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায় ।

৬) গভীর ঘুম- এই সময় গভীর ঘুম ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে ঘুমের সময় আরামদায়ক পজিশনে শুতে হবে । চিত হয়ে না শুয়ে যে কোন একদিকে কাত হয়ে শোয়া বাঞ্ছনীয় । দরকার হলে পেটের নিচে বালিশ রেখে শুতে পারেন ।এতে আরও উপকার বেশি পাবেন ।

৭) অবস্থান পরিবর্তন করুন- দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থানে বসে  বা দাড়িয়ে না থেকে কিছুক্ষণ পর পর অবস্থানের পরিবর্তন করুন । হাটাহাটি করুন। কিছুক্ষণ হেলান দিয়ে বসুন। কিছুক্ষণ সোজা হয়ে বসুন। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকুন।

৮) চিকিৎসকর পরামর্শ নিন- এর পরও ব্যথার হাত থেকে রেহাই না পেলে অথবা ব্যাথাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন ।


ব্যথার সাথে অন্য কোন  সমস্যা  থাকলে যেমন-
কোমরের ব্যথা যদি অনেক বেশি হয়ে থাকে অথবা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ব্যাথার সাথে জ্বর, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা তলপেটে ব্যথা থাকলে, ব্যাথার সাথে শরীরের কোন অঙ্গ অবশ অনুভব হলে অথবা হঠাৎ করে দুর্বল মনে হলে, গর্ভধারণের শেষের দিকে কেউ যদি প্রথমবারের মত এই ধরনের ব্যথা অনুভব করেন, তবে তা লেবার পেইন কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে । এই ধরনের ব্যথা পেটের সামনে থেকে পিছনে বা পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, কিছুক্ষণ পর পর আসে ও সময়ের সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে । তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।

 উপরোক্ত লক্ষণগুলো না থাকলে গর্ভাবস্থায় এই ধরনের ব্যথা নিয়ে দুঃচিন্তার কারণ নেই, যেহেতু এটি গর্ভস্থ বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশ ও প্রসবের জন্য ক্ষতিকর নয়।

আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky