Breaking

Tuesday, April 23, 2019

গর্ভের সন্তান যখন মেয়ে

পর্ব-১
শুরুটা কিভাবে করব তা আসলে আমি বুঝতে পারছিনা । যখন  ৮ মাসের বাবু পেটে তখনকার কথা । বাচ্চাটা নিয়েছিলাম শাশুড়ীর মতের বাহিরে। সেই দিন আল্ট্রাসাউন্ড করে ডাক্তার যখন বলেন, আল্লাহ আপনার উপর খুশি হয়েছেন। আপনি একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিতে চলেছেন। প্রথম সন্তান টি মেয়ে শুনে জামাই এর মুখ এর দিকে তাকানো যাচ্ছে না, মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল সাথে সাথে । আমি তো হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলাম। ডাক্তার সান্তনা দিয়ে বললেন, আমার ৪ টি ছেলে, মেয়ে নেই। আল্লাহ নবীজিকে মেয়ে দিয়েছেন । আমি কাদছিলাম এটা ভেবে যে, মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া সহজ কিন্তু বেঁচে থাকা কঠিন। তাই মেয়ে না কষ্ট পায় সে জন্য।

জামাই ফেরার পথে বলল সি এন জি তে চলো। কিছু হবে না মেয়ে তো হবে।শাশুড়ী কে ফোন দিয়ে জানালাম ।তিনি উত্তর দিলেন উফফফফ, এক মেয়ে বিদায় করি নাই আর এক মেয়ে হাজির । কথা টা খুব আঘাত লাগল।কারো মনে আঘাত দিলে আল্লাহ তার প্রতিশোধ নেয়।আমার মেয়ে আসতে তার মেয়ে ও বিদায় হবে আল্লাহ যে তার কথা কবুল করে ফেলেছে।বাচ্চা মেয়ে শুনে অবহেলা টা বেরে যায়।শাশুড়ী আসে গ্রাম থেকে । ৫ দিন আগে । এসে ১০ জন মেহমান এর রান্না কাজ আমাকে দেয়।বলে মেয়ে কবে হবে।আমি কত দিন এভাবে বসে থাকব।৩ দিন থেকে চলে যায়।আমি বাসায় একদম একা।বাবার বাড়ি থেকে নিতে চাইলেও আমি জাই নাই।কারন মেয়ে হলে যদি না আনে।শাশুড়ী চলে যায় । শরীর ফুলে যায় ঘুম বন্ধ হয়ে যায়।টানা ২ রাত নির্ঘুম।ডাক্তার কাছে জেতে চাই জামাই বলে টাকা নাই । শাশুড়ী কে ফোন দেয় । তিনি বলে মেয়েদের অসুখ হলে টাকা মা বাবা দেয় । আমি কোন টাকা দিতে পারব না। গাড়ি ভাড়া টাকা নেই । আমার মা কে কল দিলে তিনি সোজা না বলেন । তারা তো আমার মেয়ে আমাকে দিল না টাকার গরম দেখাল এখন টাকা ক্যান দিব।বোন কে করলাম । জাকাত বাবদ কিছু টাকা দেও ।


বাচ্চা টা হয়ত মারা যাবে ২ দিন হল নড়ে না । আমি অত্যন্ত অসহায় তখন।আমার প্রতিবেশী ৫০০ টাকা দেয় নিয়ে হাসপাতালে জাই।বাচ্চা হওয়ার ব্যাথা ওঠার জন্য ৮ ঘন্টা চেষ্টা করে কিন্তু ১০-১৫ মিনিট বেশি ব্যাথা থাকে না । ৪২ সপ্তাহ ৩ দিন।ডাক্তার বলল সিজার করতে।আমার বোন এসে জামাই হাতে ৫০ হাজার টাকা দিল।জামাই চাইত বাচ্চা পেটে যাবতীয় খরচ মত হওয়ার খরচ আমার বাবা মা দিক।মেয়ে হবে তো আর কি এতো ঢং । বাচ্চা জন্ম হবার দিন শাশুড়ী হাসপাতালে আসে । বাচ্চা জন্ম হল।জামাই কোলে নিল প্রথম । মেয়ে কে কোলে নিয়ে আমার বোন যখনই শাশুড়ী কে দিল।

সে নাকি বলেছিল ইচ্চছি কাইলা মেয়ে হইছে । বংশে কেউ কাইলা নাই । কোথেকে আসছে।আমাকে পোস্ট রুমে দিতে জামাই বাবু কে নিয়ে হাজির বলল । মেয়ে কালো হইসে একে যেন অবহেলা করো না।আজব!!!! চুপ ছিলাম । আমার শাশুড়ী একটা মেয়ে র জন্য ১১ বছর ভেড়া কোরবানি দিলে আল্লাহ মেয়ে দেন । অথচ সে আমার মেয়ে কে,,,,,,,, ননদ বাবু কে কোলে নিয়ে ৫০০ টাকা মসজিদে দিল।বলল আব্বা বেচে থাকলে খুব খুশি হতেন।আল্লাহ খুশি হয়ে রহমত দিয়েছেন।আমাকে পর দিন সকালে বেডে দেয়া হল । এসে যখনই পৌছালাম।


আমার মা বন্ধু বান্ধবীরা আসল । আমি বেডে আসার ১০ মিনিট আমার সাথে খুব বাজে ব্যবহার । তার মা বলে অফিস ছুটি নিয়ে কি হবে যা অফিস যা । ১ টা দিন ছুটি নেয় নি।বাচ্চা কে কোলে নিয়ে বুঝলাম একটা কন্যা সন্তান দিলাম রত্ন।

তুমি মারা গেলে ২ হাত তুলে দোয়া করবে। তাকে পেয়ে খুশি না হয়ে এতো দুর-ব্যবহার । আমার বান্ধবী ও মা এসব দেখে চলে গেল । মেসেজ দিল এক বান্ধবী ভাবতাম তুই সুখী কিন্তু তোর মত কপাল যেন আল্লাহ কাউকে না দেয় । শুরু হল আমার কান্নার দিন।আমাকে খাবার দিচ্ছিলনা । ক্যানলা ব্যাথা জামাই আর শাশুড়ী বলে নাটক করে । আল্লাহ কে বললাম নিশ্চিত তুমি সব দেখ ও ফেরত দাও দিগুন । তোমার শাস্তি দেখার অপেক্ষায়। বিশাস করুন আমার জামাই ও শাশুড়ী পরে অপারেশন হলে টানা ১.৫ মাস হাতের ব্যাথা ছিল । আর এতো ব্যাথা ছিল তাদের ক্যানলা দেয়াতে কান্না করে দিত । আল্লাহ হয়ত শোধ দেখাইছে । আমি দেখছি আর বলছি নিশ্চিত আল্লাহ তুমি শ্রেষ্ঠ বিচারক।ফিরে আসি আবার মূল গল্পে । বাবুকে দুধ দিতে পারছিলাম না । বাচ্চা দুধ টানতে টানতে নিপল ছিলে দিচ্ছিল।

ওই আজাবে কারখানায় এক ননদ ছিল সাথী।দুধপাচ্ছিল না ১ ফোটা ও।ডাক্তার ও নাস রা চাপতে চাপতে ১ ফোটা ও বের হচ্ছিল না।এক টা সময় রক্ত আসল । শাশুড়ী আর নানী শাশুড়ী কি প্যাচাল আর নিরজাতন অমুক এর দুধ হইছে।এই ওই । বলে জামাই কে কান ভরে দিল । দুধ হচ্ছে না বলে সেই বাজে কথা । আমি শুধু কান্দি বাচ্চা ও কান্দে ২৪ ঘন্টা হল ১ ফোটা দুধ পায় নি ।৭৮ টা ইঞ্জেকশন নেয়াতে দুধ বের হয় নি। খুব কান্না করে মেয়ে আমার । সারা রাত কান্না করে।

আমিও কান্না করি ঘুম নাই।ননদ ও কান্দে । আমার বোন কে বলে নিজের তো বাচ্চা হয় নি বুঝবা কিভাবে।সে চুপ থাকে । অতঃপর রাত ৩ টায় বাচ্চা হাত পা ছেড়ে দেয় । নানী আমি কান্না করি ননদ লাফ দিয়ে উঠে দেখে বাচ্চা কাদেও না চুপ করে চোখ বন্ধ । সে উঠে সব তার মা দেখে নাক ডেকে ঘুমাই নানী শাশুড়ী হাসে । ননদ দৌরে ডাক্তার কাছে যায় । ডাক্তার বলে বাচ্চা তো অবস্থা খারাপ স্যালাইন দেয়া লাগতে পারে।বাবু মাত্র ২ কেজি ৪০০ গ্রাম হইছিল । ননদ বলে ফরমুলা দেন । পরে জামাই ও শাশুড়ী না বলে,অনেক খরচ । ননদ বলে আমার বাপ নাই । আমি তো কিছু সম্পদ পাই,তা দিয়ে মেয়েকে খাওয়াব । শাশুড়ী বলে না।জামাই বলে না। আমার মেয়ে আমার চোখের সামনে নিস্তেজ হয়ে জাচ্ছে ৪৮ ঘন্টা শুধু গরম পানি খাওয়াচ্ছে কোন দুধ নাই ।

আমি আল্লাহ কে বললাম -আল্লাহ আজ আমার মেয়ের জন্য যে কষ্ট আমি পাচ্ছি সেই কষ্ট টা তুমি এই জালিমদের ফেরত দিও । আমার কলিজা করছে ছিদ্র এমন গর্ত কইরো জা আর ভরাট হবে না।আমার মেয়ে হয়ত দুধের অভাবে বাচবে না। আমার কোল শূন্য করে দিচ্ছে যে তার কোলে আল্লাহ মেয়ে রেখো না । অজান্তে অভিশাপ আসল।মেয়ে নিস্তেজ এন আই সিউ তে। ননদ রাত ৪ টায় সময় গিয়ে ফারমেসি আলার দোকান খোলাই একটা দুধ আনে । দুধ টা খুলতে শাশুড়ী হাত থেকে কেড়ে নেয়।

(আমার জীবন পাল্টে গেছে,আমি এখন সাবলম্বী,ও নির্যাতিত মায়েদের জন্য অনুপ্রেরণা দিবে।পরের পর্ব জন্য কমেন্ট করুন)


আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source www.google.com

No comments:

Post a Comment

Clicky