Breaking

Thursday, April 26, 2012

অধ্যায় ৩ - (সামজিক গুণাবলি ও মূল্যবোধ)

সংক্ষেপে উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ (ক) পরিবার কাকে বলে?
উত্তরঃ মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ জীব নয়। পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া মানুষের পক্ষে জীবনধারণ করা অসম্ভব। এ সহযোগিতার আদি ও অকৃত্রিম সংগঠন হলো পরিবার। পরিবার সমাজের একটি ক্ষুদ্র একক।
পরিবারের সংজ্ঞাঃ আমাদের বাড়িতে বাবা, মা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন থাকেন। বাবা, মা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন এবং বাড়িতে যারা বাস করেন তাদের সবাইকে নিয়ে আমাদের পরিবার।
অন্য কথায়, পরিবার বলতে সেই সংগঠনকে বোঝায় যেখানে বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক বা একাধিক পুরুষ ও মহিলা তাদের সন্তানাদি, পিতামাতা ও অন্যান্য পরিজন নিয়ে একত্রে বসবাস করেন।
পরিশেষে বলা যায়, পরিবার আদিম সামাজিক প্রতিষ্ঠান। পরিবার স্নেহ, মায়া, মমতা ও সহযোগিতার দ্বারা গঠিত স্থানীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

প্রশ্নঃ (খ) বাড়ি ও পরিবারের প্রতি আমাদের কী কী কর্তব্য রয়েছে?
উত্তরঃ পরিবার সমাজের প্রাথমিক সংগঠন। পরিবারেই আমরা জন্মগ্রহণ করি এবং পরিবারেই লালিত-পালিত হই। কাজেই পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে বাড়ি ও পরিবারের প্রতি আমাদের বেশ কিছু কর্তব্য রয়েছে। বাড়ি ও পরিবারের প্রতি আমাদের যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, তা নিম্নরূপ-
নিয়মকানুন মেনে চলাঃ মিলেমিশে পরিবারে বাস করতে হলে পরিবারের নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। পরিবারের নিয়মকানুন মেনে চললে বাড়ি ও পরিবারের শান্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় থাকে। তাই আমরা সবাই মিলেমিশে থাকব।
সদাচরণ করাঃ বাড়ি ও পরিবারের সদস্যদের সকলের সাথে সদাচরণ করব। তাহলে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
বড়দের সাহায্য করাঃ বাড়ির কাজে বড়দের সাহায্য করা উচিত। আমরা বাড়িতে বড়দের কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা করব।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাঃ আমরা বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব এবং যেখানে সেখানে ময়লা, আবর্জনা ফেলে বাড়িঘর নোংরা করব না।
গাছপালা ও পশুপাখির যত্নঃ আমাদের যাদের বাড়িতে গাছপালা ও পশুপাখি আছে, তারা বাড়ির গাছপালা ও পশুপাখির যত্ন নেব।
রোগীর সেবাঃ বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে আমরা তার সেবা করব।
সম্মান ও স্নেহ প্রদর্শনঃ বাড়ির বড়দের সম্মান করব এবং তাদের আদেশ মতো চলব। ছোট বড় নতুন কারও সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময় করব। ছোটদের স্নেহ করব।
পরিশেষে বলা যায়, বাড়ি ও পরিবারের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো যথাযথভাবে পালন করব।

প্রশ্নঃ (গ) সময়ানুবর্তিতা কাকে বলে?
উত্তরঃ মানুষের চরিত্রের তিনটি বিশেষ গুণের মধ্যে সময়ানুবর্তিতা অন্যতম একটি। আমাদের প্রত্যেকের মাঝে এ বিশেষ গুণটি থাকা আবশ্যক। জীবনে সফলতার জন্য সময়ানুবর্তিতা অপরিহার্য। আমাদেরকে প্রতিদিনই কোন না কোন কাজ করতে হয়। যেমন- বিদ্যালয়ে যাওয়া, লেখাপড়া করা, গোসল করা, খাওয়া, খেলাধুলা করা ইত্যাদি। আমরা আমাদের এসব কাজ অনেকেই সময়মতো করে থাকি। আবার কেউ কেউ আছে, যারা সময়ের কাজ সময়মতো করে না। ফলে তাদের বিভিন্ন রকম সমস্যার পড়তে হয়। অন্যদিকে, যারা সময়ের কাজ সময়মতো করে তারা কোন কাজে পিছিয়ে থাকে না। অর্থাৎ যারা সময়ের কাজ সময়মতো করে তারা সময়ানুবর্তী এবং সময়ের কাজ সময়মতো করাকে সময়ানুবর্তিতা বলে।
পরিশেষে বলা যায়, সময়ানুবর্তিতা মানুষের চরিত্রের একট ভালো গুণ। কাজেই আমরাও এ গুণের অধিকারী হব। তাহলে আমরা জীবনে সফল হতে পারব।

প্রশ্নঃ (ঘ) বিদ্যালয় আমাদের কী কী করতে শেখায়?
উত্তর: লেখাপড়া শেখার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে বিদ্যালয়। বিদ্যালয় আমাদের লেখাপড়া ছাড়াও নানামুখী শিক্ষা দিয়ে থাকে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
সুনাগরিকতাঃ আমাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিদ্যালয় প্রধান ভূমিকা পালন করে। সুনাগরিক হতে যে সকল গুণ থাকা প্রয়োজন তা আমরা বিদ্যালয় থেকেই শিখি।
সময়ানুবর্তিতাঃ সময়ানুবর্তিতা মানুষের চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ। সময়ের কাজ সময়মতো করাকে সময়ানুবর্তিতা বলে। বিদ্যালয় আমাদের সময়ানুবর্তিতা শেখায়। আমরা সময়ের কাজ সময়ে করতে শিখি।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাঃ সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি। বিদ্যালয় আমাদেরকে আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার শিক্ষা দেয়।
সদাচরণঃ সবার সাথে ভালো আচরণ করাকে বলা হয় সদাচরণ। বিদ্যালয় আমাদেরকে সবার সাথে ভালো আচরণ করার শিক্ষা দিয়ে থাকে। এটি মানুষের চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ।
সত্যবাদিতাঃ সত্যবাদিতা মানব চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ। অন্যদিকে মিথ্যাবাদিতা ধ্বংসের কারণ। বিদ্যালয় আমাদের সত্যবাদী হতে শেখায়।
সম্মান ও স্নেহ প্রদর্শনঃ বড়দের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করার শিক্ষা আমরা বিদ্যালয় থেকে পেয়ে থাকি।
ন্যায়বোধঃ বিদ্যালয় ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে শেখায় এবং ন্যায়ের পথে চলতে শেখায়।
কর্তব্যবোধঃ বিদ্যালয় আমাদের কর্তব্য বা করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকে।
শৃঙ্খলাবোধঃ বিদ্যালয় আমাদের প্রতিটি কাজ শৃঙ্খলার সাথে করতে শেখায়।
নেতৃত্বঃ বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শ্রেণীতে একজন ক্যাপ্টেন নির্বাচন করা হয়। এ থেকে আমরা নেতৃত্ব সম্পর্কে শিক্ষা পাই।
পরিশেষে বলা যায়, বিদ্যালয় থেকে আমরা ভবিষ্যৎ জীবনের সকল প্রয়োজনীয় দিকগুলো সম্পর্কে শিক্ষালাভ করে থাকি।

প্রশ্নঃ (ঙ) সদাচরণ কাকে বলে?
উত্তরঃ সদাচরণ মানুষের চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ। সদাচরণ সব মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য আচরণ। মানুষের চরিত্রের এ বিশেষ গুণটি যার মধ্যে আছে, প্রত্যেকেই তাকে ভালোবাসে।
সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করাই হলো সদাচরণ। অর্থাৎ যে আচরণ অন্যের ক্ষতি করে না, কিংবা অন্যকে কষ্ট দেয় না এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও পছন্দনীয়, তাকে সদাচরণ বা ভালো আচরণ বলে।
নিচে সদাচরণের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো-
১) পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা।
২) পরিবারের নিয়ম-কানুন মেনে চলা।
৩) বড়দের সম্মান করা ও তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
৪) ছোটদের স্নেহ করা।
৫) প্রতিবেশী ও অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা।
৬) সমাজের রীতিনীতি মেনে চলা এবং কাজ করা।
৭) কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা করা।
৮) গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায়, সদাচরণ মানুষের চরিত্রের এমন একটি বিশেষ গুণ, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও পছন্দনীয়। কাজেই, আমরা সবসময় সবার সঙ্গে সদাচরণ করব।

প্রশ্নঃ (চ) ক্লাব ও সংঘের কয়েকটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ মানুষ সামাজিক জীব। সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষের এ প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন সংঘ, দল ও প্রতিষ্ঠান গঠনে। তাই সমাজে বিভিন্ন রকম ক্লাব ও সংঘ দেখা যায়। কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষ যখন সংঘবদ্ধ হয়, তখন সংঘের সৃষ্টি হয়। সাধারণত সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য মানুষ সংঘ বা ক্লাব গড়ে তোলে। কিছু নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে ক্লাব বা সংঘের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। নিম্নে ক্লাব বা সংঘের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো-
(ক) পাঠাগার (খ) ব্যায়ামাগার
(গ) ক্রিকেট ক্লাব (ঘ) ফুটবল ক্লাব
(ঙ) হলদে পাখির দল ইত্যাদি।
আমরা সমাজের কাজের জন্য বিভিন্ন ক্লাব, সংঘ ইত্যাদি গড়ে তুলব এবং তার সদস্য হয়ে সব নিয়মকানুন মেনে চলব।

প্রশ্নঃ (ছ) সামাজিক মূল্যবোধ থাকলে আমাদের কী কী উপকার হয়?
উত্তরঃ সামাজিক মূল্যবোধ আমাদেরকে নানাভাবে উপকৃত করে থাকে। সামাজিক মূল্যবোধের বিভিন্ন দিক হচ্ছে একতা, সংঘবদ্ধতা, সহযোগিতা, সত্যবাদিতা, ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, শিষ্টাচার, সদাচরণ, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা, সময়ানুবর্তিতা ইত্যাদি। সামাজিক মূল্যবোধ থাকলে যে সকল উপকার হয় তা নিচে দেওয়া হলো-
১) একতা, সংঘবদ্ধতা ও সহযোগিতা সমাজের সবার মাঝে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।
২) সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি জতির সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গড়ে ওঠে।
৩) সামাজিক মূল্যবোধ মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে।
৪) সমাজের মানুষের মধ্যে বন্ধন গভীর হয়।
৫) মানুষের মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হয়।
৬) দেশের জন্য ভালোবাসা জন্মে।
৭) মানুষের প্রতি সদাচরণ করতে শেখায়।
৮) জীবনে শৃঙ্খলা আনে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক মূল্যবোধ আমাদের পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। সুস্থ, সুন্দর, সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে সামাজিক মূল্যবোধের বিকল্প নেই।

প্রশ্নঃ (জ) ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আমাদের কী কাজে লাগে?
উত্তরঃ আমরা নিয়মিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে ও উৎসবে যোগ দেব। আর অন্যদেরও যোগ দিতে উৎসাহিত করব।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আমাদের যেসব কাজে লাগে-
১. চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
৩. আমাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায, আমাদের জীবনে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।

No comments:

Post a Comment

Clicky