Breaking

Thursday, April 26, 2012

অধ্যায় ৪ - (শ্রমের গুরুত্ব)

সংক্ষেপে উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ (ক) বাড়ি পরিষ্কার রাখার জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন?
উত্তরঃ বাংলাদেশে আমরা কেউ গ্রামে, কেউ বা শহরে বসবাস করি। কেউ নিজ বাড়িতে থাকি, কেউ ভাড়া বাড়িতে থাকি। আমাদের সবার বাড়িই কোনো না কোনো পাড়া বা মহল্লায়। মানুষ যেখানে থাকে তা পরিষ্কার রাখা একান্ত প্রয়োজন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের সুস্থ রাখে। বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে আবার আমাদের মনও ভালো রাখে। শরীর ও মন ভালো থাকলে লেখাপড়াও ভালো হয়। আমাদের চারপাশের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে হলে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে-
১. প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ঘর ও উঠোন ঝাড় দিতে হবে।
২. আসবাবপত্র মুছতে হবে।
৩. বাড়ির জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে হবে।
৪. নিয়মিত গোসলখানা ও শৌচাগার পরিষ্কার করতে হবে।
৫. বাড়ির সব ময়লা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।
৬. পরিবারের সদস্য হিসেবে বাবা-মার সঙ্গে বাড়ি পরিষ্কারের কাজে সাহায্য করতে হবে।
৭. বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে নালা-নর্দমা থাকলে তা পরিষ্কার রাখতে হবে।
৮. পাড়ার মাঠ, পুকুর বা জলাশয় পরিষ্কার রাখতে হবে।
৯. ফুলের টব বা ঘরের কোণে পানি জমে থাকলে তা থেকে এডিস মশার জন্ম হয়। যা থেকে ডেঙ্গুর মতো মারাত্মক রোগ হয়। কাজেই এসব জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। কাজেই আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রশ্নঃ (খ) বিদ্যালয় অপরিষ্কার কীভাবে হতে পারে এবং এর কারণে কী হয়?
উত্তরঃ আমরা সবাই লেখাপড়ার জন্য বিদ্যালয়ে যাই। দিনের অনেকটা সময় বিদ্যালয়ে কাটাই। বিদ্যালয়কে আমরা ভালোবাসি। বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখা সবার দায়িত্ব। বিদ্যালয় অপরিষ্কার থাকলে লেখাপড়ায় যেমন মন বসতে চায় না তেমনি তা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
যেসব কারণে বিদ্যালয় অপরিষ্কার হতে পারে তা হচ্ছেঃ
১. ধুলোবালি, ছেঁড়া, নোংরা কাগজ, খাদ্যের উচ্ছিষ্ট যেখানে সেখানে ফেললে বিদ্যালয় অপরিষ্কার হয়।
২. চক, পেন্সিল কিংবা কলম দিয়ে বেঞ্চ, টেবিল কিংবা দেয়ালে লিখলে বিদ্যালয় অপরিষ্কার হয়।
৩. যেখানে-সেখানে কফ, থুথু ফেললে বিদ্যালয় অপরিষ্কার হয়।
৪. বিদ্যালয়ের শৌচাগার সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে অপরিষ্কার হতে পারে।
৫. বিদ্যালয়ের আশপাশের জলাশয়ে ময়লা বা নোংরা পানি জমে বিদ্যালয় অপরিষ্কার হয়।
৬. বিদ্যালয়ের আশপাশে আগাছা জন্মে বিদ্যালয় অপরিষ্কার হয়।
বিদ্যালয় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে, সে সব হচ্ছেঃ
১. বিদ্যালয় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকলে লেখাপড়ায় মন বসে না।
২. বিদ্যালয় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রশ্নঃ (গ) শ্রমের মর্যাদা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়?
উত্তরঃ সমাজে আমরা বিভিন্ন পেশার লোক বাস করি। আমাদের সমাজের কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে সমাজের প্রত্যেক মানুষই শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্ভরশীল।
আমরা আমাদের জীবন নির্বাহের ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্ভরশীল।
আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের বাড়ি, বিদ্যালয়, পাড়া বা মহল্লায় বিভিন্নমুখী কাজের মধ্য দিয়ে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। নিচে এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলোঃ
১. আমরা বাবা-মাকে নানা কাজে সাহায্য করে থাকি। ফলে পরিবারের অনেক কাজ সহজ হয় এবং বাড়ির পরিবেশ সুন্দর হয়। পাশাপাশি বাড়ি এবং পাড়া বা মহল্লায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করতে পারি। এতে যেমন বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়, তেমনি দৈহিক শ্রমের ফলে শরীর ও মন ভালো থাকে।
২. আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যালয়ে কাটাই। কাজেই বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর থাকা প্রয়োজন। এজন্য বিদ্যালয়ের পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করতে পারি।
৩. আমরা নিজেদের কাজ নিজেরা করব এবং এ ব্যাপারে অন্যদেরও উৎসাহ দেব। সবাইকে বোঝাব সমাজের কোনো কাজ বা পেশাই ছোট নয়। প্রতিটি পেশারই সমান গুরুত্ব রয়েছে। কাজেই কোনো কাজ বা পেশাকে তুচ্ছ করা যাবে না। আর এভাবেই সমাজে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা যায়।

প্রশ্নঃ (চ) সমাজে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আমরা কেন শ্রমজীবীদের ওপর নির্ভরশীল?
উত্তরঃ সমাজে আমরা বিভিন্ন পেশার লোক বাস করি। আমাদের সমাজের কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে সমাজের প্রতিটি মানুষই শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্ভরশীল।
আমরা জীবন নির্বাহের ক্ষেত্রেও শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্ভরশীল। কারণ আমাদের জীবন নির্বাহের জন্য প্রতিটি কাজ কখনও কারও একার পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম জিনিস প্রয়োজন হয়ে থাকে। এসব জোগান দিয়ে থাকেন শ্রমজীবী মানুষ। যেমন- কৃষক ফসল উৎপাদন করে আমাদের খাদ্যের জোগান দেন। তাঁতি কাপড় তৈরি করেন। জেলে মাছ ধরে আমাদের আমিষের চাহিদা মেটান। কামার আমাদের নিত্যব্যবহার্য লোহার জিনিস যেমন- দা, ছুরি, কাঁচি, কুড়াল ইত্যাদি বানান। কুমার মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কলসি ইত্যাদি তৈরি করেন। দর্জি পোশাক তৈরি করেন। নাপিত চুল কাটেন, মুচি জুতা সেলাই করেন। কুলি মালামাল বহন করেন। মাঝি নৌকা চালান। রিকশাচালক রিকশা চালান। রাজমিস্ত্রি দালানকোঠা তৈরি করেন। কাঠমিস্ত্রি আসবাবপত্র তৈরি করেন। বিদ্যুৎ মিস্ত্রি আমাদের বিদ্যুতের লাইন বসান এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখেন। এভাবে বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষ তাদের শ্রমের বিনিময়ে আমাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকেন।
পরিশেষে বলা যায়, আমরা সবাই শ্রমজীবী মানুষের সেবা লাভ করি এবং তাদের ছাড়া চলতে পারি না। শ্রমিকের শ্রম ছাড়া সুস্থ, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করা অসম্ভব। কাজেই এ কথা ধ্রুব সত্য, সমাজে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আমরা শ্রমজীবীদের ওপর নির্ভরশীল।

প্রশ্নঃ (ঙ) শ্রমজীবীদের কেন আমাদের শ্রদ্ধা করা প্রয়োজন?
উত্তরঃ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য নানা ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকে। কোনো কোনো পেশার মানুষ কায়িক শ্রম বা দৈহিক পরিশ্রম করে নানা কাজ করেন। তাদের শ্রমজীবী মানুষ বলা হয়। তাই শ্রমজীবীদের আমাদের শ্রদ্ধা করা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে নানা ধরনের শ্রমজীবী মানুষ আছেন। যেমন- কৃষক, তাঁতি, জেলে, কামার, কুমার, দর্জি, নাপিত, মুচি, কুলি, মাঝি, রিকশাচালক, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, বিদ্যুৎমিস্ত্রী, গার্মেন্টসকর্মী, কারখানা শ্রমিক ইত্যাদি। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে রয়েছে শ্রমজীবী মানুষের অপরিসীম অবদান।
আমরা যদি একটু চিন্তা করি, তবে বুঝতে পারি সমাজে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আমরা শ্রমজীবীদের ওপর নির্ভরশীল। সবার কাজেরই রয়েছে সমান গুরুত্ব। দেশের উন্নতিতেও রয়েছে তাদের কায়িক শ্রমের ভূমিকা। তাদের শ্রমের কারণেই সমাজ ও রাষ্ট্র তার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে পারে। শ্রমিকের শ্রম ছাড়া আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করতে পারতাম না।

No comments:

Post a Comment

Clicky