Breaking

Thursday, April 26, 2012

অধ্যায় ৫- (মানবাধিকার)

রচনামূলক প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্নঃ (ক) মানবাধিকার কী? সকলের কী এগুলো ভোগের অধিকার আছে?
উত্তরঃ মানবাধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত অধিকার। মানবাধিকার ব্যতীত মানুষ সুষ্ঠুভাবে বাঁচতে পারে না এবং ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় না। মানবাধিকার মর্যাদা সংরক্ষণের জন্য এসব অধিকার অপরিহার্য।
মানবাধিকারঃ আমরা সামাজিক জীব। আমরা সমাজে সম্মানসহ বসবাস করি। স্বাধীনভাবে চলাচল করি। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করি। বিপদে পড়লে নিরাপত্তা লাভ করি। ব্যক্তি হিসেবে, সমাজের সদস্য হিসেবে আমাদের রয়েছে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। এ রকম আরও অধিকার রয়েছে। মানুষ হিসেবে ব্যক্তির এ অধিকারগুলোকেই মানবাধিকার বলা হয়।
মানবাধিকার ভোগের অধিকারঃ আমরা সবাই মানুষ। মানুষ হিসেবে আমার সামাজিকভাবে ভোগের অধিকার আছে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ মানবাধিকার ঘোষিত হয়। এতে সকল মানুষের সমান অধিকার ভোগের কথা উল্লেখ আছে।
মানবাধিকার বিশ্বজনীন ঘোষণা সত্ত্বেও প্রায়ই আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজের পাতায় আমরা এ রকম ঘটনা প্রায়ই শুনি ও দেখি। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রত্যেকেরই দায়িত্ব মানুষের এ অধিকারগুলো নিশ্চিত করা।

প্রশ্নঃ (খ) মানবাধিকারের কয়েকটি সুবিধা লেখ।
উত্তরঃ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে আমরা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কিছু অধিকার ভোগ করে থাকি।
মানুষ হিসেবে আমাদের এ অধিকারগুলোকেই বলা হয় মানবাধিকার। মানুষের এ অধিকারগুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
মানবাধিকার ভোগের সুবিধাঃ মানবাধিকারের ফলে আমরা অনেকগুলো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করি। তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলঃ
১. এতে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার পাওয়া যায়।
২. নির্যাতন ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৩. খেয়ালখুশী মতো গ্রেফতার ও আটকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৪. নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা পাওয়া যায়।
৫. শিক্ষার অধিকার পাওয়া যায়।
৬. সকলের সমান মর্যাদা পাবার অধিকার এবং ভোগের অধিকার রয়েছে।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন হলে আমরা উপরিউক্ত সুবিধাসমূহ পাব। স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানবাধিকারের বিকল্প নেই।

প্রশ্নঃ (গ) মানবাধিকার বাস্তবায়িত না হলে সমাজে কী অসুবিধা সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ মানুষের জন্মই যখন অধিকার ভোগ করা, তখন মানবাধিকারের বাস্তবসম্মত প্রয়োগ না হলে জীবনে কতটা বাধা আসবে, তা বর্ণনাতীত। স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানবাধিকারের বিকল্প নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আমরা যেসব সুবিধা বা অধিকার ভোগ করছি, তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র মানবাধিকারের কল্যাণে। মানুষের মানবাধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রত্যেকেরই দায়িত্ব হলো সমাজে মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা। সমাজে মানবাধিকার বাস্তবায়িত না হলে নিচের অসুবিধা সৃষ্টি হয়ঃ
১। শিশুশ্রম বেড়ে যায়।
২। নারী ও শিশু পাচার বেড়ে যায়।
৩। এসিড নিক্ষেপ বেড়ে যায়।
৪। সাম্প্রদায়িকতা ও যৌতুকের প্রবণতা বেড়ে যায়।
৫। মানুষের মর্যাদা নষ্ট হয়।
৬। মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কমে যায়।
৭। নির্যাতন ও অত্যাচার বেড়ে যায়।
৮। সুষ্ঠু বিচার পাওয়া যায় না।
৯। নিজ নিজ ধর্ম পালনে অসুবিধা হয়।
১০। শিক্ষা গ্রহণের অধিকার অনিশ্চিত হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ (ঘ) জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারগুলো কী?
উত্তরঃ ব্যক্তি হিসেবে, সমাজের সদস্য হিসেবে, আমাদের রয়েছে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে মানবাধিকার বলে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকার ঘোষিত হয়।
জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারসমূহঃ জাতিসংঘ ঘোষিত প্রধান মানবাধিকারগুলো নিচে আলোচনা করা হলঃ
১। প্রত্যেক মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন। সকলের রয়েছে সমান মর্যাদা এবং অধিকার।
২। প্রত্যেকের জীবন, স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা লাভের অধিকার আছে।
৩। কাউকে নির্যাতন ও অত্যাচার করা যাবে না।
৪। ব্যক্তি হিসেবে আইনের চোখে সবাই সমান।
৫। মৌলিক অধিকার ভঙ্গ করলে প্রত্যেকের বিচার লাভের অধিকার আছে।
৬। কাউকে খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার ও আটক করা যাবে না।
৭। প্রত্যেকের চিন্তার ও নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে।
৮। প্রত্যেকের শিক্ষার অধিকার রয়েছে।
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রত্যেকেরই দায়িত্ব মানুষের এ অধিকারগুলো নিশ্চিত করা।

প্রশ্নঃ (ঙ) আমাদের দেশে শিশুরা কীভাবে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে? এ ক্ষেত্রে তোমার করণীয় কী?
উত্তরঃ আমাদের দেশের শিশুদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণঃ বাংলাদেশে অনেক শিশুই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। গ্রামে শিশুরা প্রধানত খেত-খামারে কাজ করে এবং শহরে মানুষের বাড়ি, দোকান ও কলকারখানায় কাজ করে। আবার কেউবা ইট ভাঙে। শিশুশ্রমের প্রধান কারণ হলো দারিদ্র্য। শিশুশ্রমিকেরা সাধারণত লেখাপড়ার সুযোগ পায় না। অনেক ক্ষেত্রে মজুরি ঠিকভাবে পায় না। এমনকি খাওয়া, থাকার জায়গা, চিকিৎসা সুবিধা, পোশাক ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়।
আমাদের করণীয়ঃ শিশুশ্রমের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। অতএব শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশ থেকে শিশুদের পাচার করে সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় পাঠানো হয়। সেখানে তাদের উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় জকি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। শিশুরা যেন মানুষ হিসেবে তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে শিশু পাচার বন্ধ করতে হবে।

প্রশ্নঃ (চ) সাম্প্রদায়িকতা মানবাধিকারের কোন দিকটি লঙ্ঘন করে? এটি রোধে আমাদের করণীয় কী?
উত্তরঃ সম্প্রদায় বলতে তাদেরকে বোঝায় যাদের মধ্যে একটি জাতিগত সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- মুসলমান সম্প্রদায়, হিন্দু সম্প্রদায়, খ্রিস্টান সম্প্রদায় ইত্যাদি। আর সাম্প্রদায়িকতা হল দুই বা ততোধিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান বৈরীভাব বা বৈরী সম্পর্ক। সাম্প্রদায়িকতার ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।
সাম্প্রদায়িকতা মানবাধিকারের লঙ্ঘিত দিকঃ আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। আমরা সবাই এদেশের নাগরিক। তাই সামান্য কারণে কারো ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত করা, অন্য ধর্মের লোককে অবজ্ঞা করা, অন্য ধর্মকে ছোট করে দেখা, ধর্মীয় কারণে কাউকে হেয় করা ইত্যাদি সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে পড়ে। ধর্মের প্রতি এরূপ আচরণ মানবাধিকারের লঙ্ঘিত দিক।
এটি রোধে আমাদের করণীয়ঃ
১. আমাদের স্ব-স্ব ধর্ম আমরা নিজেরা স্বাধীনতাভাবে পালন করব।
২. অন্য ধর্মের লোককে অবজ্ঞা করব না।
৩. কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করব না।
৪. কোনো ধর্মকে ছোট করে দেখবো না।
৫. সাম্প্রদায়িকতায় লিপ্ত হব না।
৬. কেউ যদি সাম্প্রদায়িক কোনো কাজ করে কিংবা করতে চায় তাকে বিরত করার চেষ্টা করব।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের সুপরিচিতি রয়েছে। কাজেই সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশকে মুক্ত রাখার জন্য আমাদের সকলকে সুস্থ ও সুন্দর মনমানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রশ্নঃ (ছ) সমাজে মানবাধিকার বিরোধী কয়েকটি কাজ উল্লেখ কর। প্রতিটি ঘটনার একটি করে কুফল লেখ।
উত্তরঃ ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকার ঘোষিত হয়। স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানবাধিকারের বিকল্প নেই। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা এ অধিকারগুলো পেয়ে থাকি।
মানবাধিকার বিরোধী কয়েকটি কাজ হলোঃ
ক) শিশুশ্রম
খ) সাম্প্রদায়িকতা
গ) যৌতুক ঘ) নারী ও শিশু পাচার
ঙ) এসিড নিক্ষেপ।
নিচে এর কুফলগুলো তুলে ধরা হলোঃ
শিশুশ্রমঃ শিশুশ্রমের ফলে মানবাধিকার চূড়ান্তভাবে লঙ্ঘিত হয়। শিশুশ্রমিকেরা লেখাপড়ার সুযোগ পায় না, অনেক ক্ষেত্রে মজুরিও ঠিকমতো পায় না। এমনকি খাওয়া, থাকার জায়গা, চিকিৎসা সুবিধা, পোশাক ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
সাম্প্রদায়িকতাঃ সাম্প্রদায়িকতার কারণে অন্য ধর্মের লোকদের অবজ্ঞা করলে বা তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে সমাজ ও দেশের শান্তি নষ্ট হয়। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় জাতিতে-জাতিতে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
যৌতুকঃ যৌতুকের কারণে নারীর ওপর নির্যাতন মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। সামর্থ্যের অভাবে যৌতুক দিতে না পারায় আমাদের দেশে অনেক নারীই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, এমনকি মৃত্যুবরণও করছেন।
নারী ও শিশু পাচারঃ পাচারকৃত ছোট শিশুরা উটের জকি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেকে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে, মারাও যাচ্ছে অনেকে। পাচারকৃত নারীরা বিদেশে নানা ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, যা তাঁদের জন্য উপযুক্ত সম্মান বয়ে আনছে না; অর্থাৎ পাচারকৃত নারী ও শিশুরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এসিড নিক্ষেপঃ এসিড নিক্ষেপ মানবাধিকারের চরম বিরোধী। আমাদের দেশে অনেকে, বিশেষ করে মেয়েরা এসিড নির্যাতনের শিকার হন। এতে তাঁদের চেহারা বিকৃত হয়ে যায়, চোখ নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেকে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন। এ কারণে সমাজের জন্য তাঁরা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

No comments:

Post a Comment

Clicky