Breaking

Thursday, April 26, 2012

পঞ্চম শ্রেণি - সমাজ - অধ্যায় ১০ - বাংলাদেশের জনসংখ্যা

সংক্ষেপে উত্তর দাওঃ

প্রশ্নঃ (ক) জীবনযাত্রার মানের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ জীবনযাত্রার মানের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে যা নিম্নরূপঃ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবঃ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আমাদের জীবনযাত্রায় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। একটি দেশের নাগরিকরা কতটুকু উন্নতমানের জীবনযাপন করে তা বোঝা যায় জীবনযাত্রার মান থেকে। আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেখা যায় এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্ন পর্যায়ে। 

দেশে যা কিছু উৎপাদিত হয় তা এই ব্যাপক জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে না। খাদ্যের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব রয়েছে। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে খাদ্যগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। খাদ্য ঘাটতির ফলে দেশের অধিকাংশ লোক দারিদ্র্য ও অপুষ্টির শিকার হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অনেক ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়, স্কুলের ড্রেস ইত্যাদি কিনে দেয়া সম্ভব হয় না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থান সমস্যাও দেখা দিয়েছে। অনেক লোককেই বাসস্থানের অভাবে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সরকারের পক্ষে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য শিক্ষার সুযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেকেই শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির সাথে মিল রেখে দেশে চিকিৎসা সুবিধার প্রসার সম্ভব হচ্ছে না বলেই লোকজন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপরিউক্ত আলোচনা হতে বোঝা যায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবযাত্রার মান কমে যায়।
পরিশেষে বলা যায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবে আমাদের জীবনযাত্রার মান ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্নস্তরে পৌঁছে যাবে।

প্রশ্নঃ (খ) জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি শিশুর শিক্ষাকে কীভাব প্রভাবিত করে?
উত্তরঃ শিক্ষিত জনসংখ্যা দেশের সম্পদ। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ দেশে সাক্ষরতার হার ৪৫.৩। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নিরক্ষর। জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এ অবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী। দেশের সীমিত সম্পদ দিয়ে সরকারের পক্ষে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য শিক্ষার সুযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে, পরিবার বড় হওয়ায় ও দারিদ্র্যের কারণে অনেক বাবা-মা নিজেরাও সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেন না। এর ফলে বিদ্যালয়ে পড়ার উপযোগী শিশু-কিশোরদের অনেকেই শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রশ্নঃ (গ) বাংলাদেশে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণগুলো বর্ণনা করো।
উত্তরঃ সাধারণভাবে জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে তিনটি কারণে- জন্ম, মৃত্যু ও দেশান্তর। জন্মহার মৃত্যুহারের চেয়ে বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে। এ ছাড়া বহিরাগমনের ফলে অধিকসংখ্যক বিদেশি এসে বসবাস শুরু করলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তবে বাংলাদেশে বহিরাগমনের সংখ্যা খুব কম। সাধারণত বাংলাদেশে অধিক জন্মহারের ফলেই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে অধিক জন্মহারের কারণগুলো হলোঃ শিক্ষার অভাব, নারী শিক্ষার অভাব, বাল্যবিবাহ, অধিক শিশুমৃত্যু, ছেলে সন্তানের প্রত্যাশা প্রভৃতি।

শিক্ষার অভাবঃ আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার অনেক কম। লোকজন শিক্ষিত হলে নিজের ভালোমন্দ সম্পর্কে সচেতন থাকে। পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণের কথা ভাবে। ফলে পরিবার ছোট রাখে, কিন্তু শিক্ষার অভাবে দেশে অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে সচেতন নয়।
নারী শিক্ষার অভাবঃ আমাদের দেশে নারী সাক্ষরতার হার খুবই কম। গ্রামে এই হার আরও কম। সাক্ষরতার নিম্নহার দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ।
বাল্যবিবাহঃ বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। কিন্তু এ দেশে এখনো বাল্যবিবাহ প্রচলিত আছে। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় ও দরিদ্র পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

অধিক শিশুমৃত্যুঃ অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে শিশুদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। শিশুদের মৃত্যুহার বেশি বলে ভবিষ্যতের কথা ভেবে মা-বাবা অধিক সন্তান চান। এর ফলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্নঃ (ঘ) জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি কীভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে?
উত্তরঃ বাংলাদেশে জনসংখ্যা অতি দ্রুত বেড়ে চলেছে। সরকার ইতোমধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কেননা জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিত্সার ওপর যেমন প্রভাব পড়ছে তেমনি নষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্য। নিচে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি কীভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে তা হলো- 

১। বেকার সমস্যাঃ বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবে অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য রাষ্ট্র কাজের ব্যবস্থা করতে পারছে না। ফলে এ দেশে অনেক লোক বেকার জীবনযাপন করছে। 

২। নিম্ন মাথাপিছু আয়ঃ এ দেশে সম্পদ সীমিত। বেকার সমস্যাও প্রকট। ফলে বার্ষিক মাথাপিছু আয় খুবই কম। নিম্ন মাথাপিছু আয় এ দেশে নিম্নমানের জীবনযাত্রার একটি অন্যতম কারণ। 

৩। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিঃ দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এ দেশে জীবনযাত্রার মান নিম্নপর্যায়ের। ফলে লোকজন জীবিকার তাগিদে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়। এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। আমরা রাস্তাঘাটে চলতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। 

৪। প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারঃ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নানা উপাদান প্রয়োজন। যেমনঃ পানি, খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি। প্রকৃতি থেকে মানুষ এগুলো পেয়ে থাকে। লোকসংখ্যা বেশি হলে এগুলো বেশি প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

৫। পরিবেশ দূষণঃ আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ নিয়েই আমাদের পরিবেশ। কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে একদিকে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন দূষিত হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে সামাজিক পরিবেশেও দেখা দিয়েছে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা। ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের বসবাসের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে।

প্রশ্নঃ (ঙ) আমাদের দেশে নারীর সামাজিক পদমর্যাদা বৃদ্ধির উপায়গুলো লেখ।
উত্তরঃ আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। কিন্তু এ দেশে নারীরা সামাজিকভাবে অবহেলিত। এ অর্ধেক জনসংখ্যাকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। নারীর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন,
(১) নারী শিক্ষার প্রসার,
(২) নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি,
(৩) নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং
(৪) সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর এ দিকগুলোর উন্নতি হলে তা দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক হয়। 

অতএব নারীর সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমাতে হলে নারীর সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।

No comments:

Post a Comment

Clicky