Breaking

Thursday, April 26, 2012

পঞ্চম শ্রেণি - সমাজ - অধ্যায় ৯ - পরিবেশ সংরক্ষণ

সংক্ষেপে উত্তর দাওঃ

প্রশ্নঃ (ক) পরিবেশ দূষণ একটি জাতীয় সমস্যা কেন?
উত্তরঃ আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়ে আমাদের পরিবেশ। পরিবেশে রয়েছে গাছপালা, ঘর-বাড়ি, পশুপাখি, রাস্তাঘাট, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত এবং আরও অনেক কিছু। এসব উপাদান মানুষ ও অন্যান্য জীবের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু নানাভাবে এসব উপাদানের ক্ষতি হচ্ছে এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

পরিবেশ দূষণ জাতীয় সমস্যা হওয়ার কারণঃ পরিবেশ দূষণ বর্তমানে বিশ্বের একটি বড় সমস্যা। পরিবেশ দূষণ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর সুস্থ-সুন্দর জীবন-যাপনের পথে একটি বিরাট বাধা। পরিবেশের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দেশে কখনও কখনও অসময়ে বন্যা দেখা দেয়। পরিবেশ দূষণের ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বায়ু ও পানি দূষিত হয়। দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানির অভাব। মানুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। পরিবেশ দূষণের ফলে জীবজন্তু ও সকল প্রাণিজগতের ক্ষতি হয়। তাই, পরিবেশ দূষণ আমাদের একটি জাতীয় সমস্যা। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, পরিবেশ দূষণ একটি জাতীয় সমস্যা। কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। তাই এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যাও।

প্রশ্নঃ (খ) পরিবেশ দূষিত হলে সামাজিক পরিবেশের কী ক্ষতি হয়?
উত্তরঃ আমরা পরিবেশে জন্মগ্রহণ করি। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকি। কিন্তু পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের দেশে দেখা দিয়েছে বহুবিধ সমস্যা। আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণের ফলে সৃষ্ট কয়েকটি সামাজিক সমস্যা নিম্নরূপঃ
১. ঘনবসতিঃ অধিক সংখ্যক মানুষ অল্প জায়গায় বসবাস করার ফলে সামাজিক পরিবেশগত সমস্যা হয়।
২. বস্তি সমস্যাঃ বাড়িঘরের অভাবে বস্তিতে বসবাস।
৩. অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাটঃ রাস্তাঘাট অপরিষ্কার থাকার ফলে সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
৪. যানজটঃ অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের ফলে রাস্তায় যানজট একটি নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
৫. যানবাহনে ভিড়ঃ পাবলিক সার্ভিস যানবাহনের অপ্রতুলতার কারণে যানবাহনে ভিড় লেগে রয়েছে।
৬. সামাজিক অবক্ষয়ঃ নৈতিকতা, ভালো কাজ করার প্রবণতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
৭. স্বাস্থ্য সমস্যাঃ স্বাস্থ্যগত সমস্যা বেড়েই চলেছে। দিন দিন বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি বাড়ছে।
৮. বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির অভাবঃ বিশুদ্ধ পানির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

প্রশ্নঃ (গ) জাতীয় পরিবেশনীতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো কী?
উত্তর: আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণের ব্যাপকতা উপলব্ধি করে সরকার ১৯৯৭ সালে জাতীয় পরিবেশনীতি ঘোষণা করেছে। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- পরিবেশদূষণ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা। জাতীয় পরিবেশনীতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হচ্ছে-
১. পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা।
২. দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করা।
৩. পরিবেশদূষণ ও অবক্ষয়মূলক কর্মকাণ্ড চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ করা।
৪. পরিবেশসম্মত উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
৫. জাতীয় সম্পদের টেকসই, দীর্ঘমেয়াদি ও পরিবেশসম্মত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৬. পরিবেশসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক উদ্যোগে যথাসম্ভব অংশগ্রহণ করা। জাতীয় পরিবেশনীতি বাস্তবায়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদেরও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। পরিবেশনীতির দিকগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে।

প্রশ্নঃ (ঘ) আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণের কারণগুলো কী?
উত্তরঃ আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণজনিত সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। দূষিত পরিবেশ সব জীব ও প্রাণীর বসবাসের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই পরিবেশ দূষণ জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পরিবেশ দূষণের কারণঃ আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণের নানাবিধ কারণ রয়েছে। নিচে প্রধান প্রধান কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ
১. জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি,
২. জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ,
৩. প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বনভূমি উজাড় ও গাছ কাটা,
৪. খাল-বিল ও নদী-নালা ভরাট,
৫. পাহাড় কেটে সমভূমি গড়ে তোলা,
৬. যেখানে সেখানে গাড়ির হর্ন ও মাইক বাজানো,
৮. খোলা জায়গায় কল-কারখানার বর্জ্য ফেলা,
৯. গাড়ির কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়া ইত্যাদি।
পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের শিক্ষার অভাব ও অসচেতনতা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।

প্রশ্নঃ (ঙ) পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ এ দেশকে এবং পৃথিবীকে আমাদের সবার বসবাসের উপযোগী রাখতে হলে পরিবেশ হতে হবে দূষণমুক্ত, নির্মল, সুন্দর এবং সবার জন্য নিরাপদ। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রয়াস।
পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। নাগরিকের যে সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
(১) পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। এ জন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
(২) বেশি করে গাছ লাগানো ও গাছের যত্ন নেওয়া।
(৩) বনায়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা।
(৪) অপ্রয়োজনে গাছ না কাটা। যারা গাছ কাটার চেষ্টা করে তাদের বিরত রাখার চেষ্টা করা।
(৫) পাহাড় না কাটা, নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট না করা।
(৬) যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলা।
(৭) রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার ব্যবহার করা।
(৮) কালো ধোঁয়া নির্গত হয় এমন যানবাহন ব্যবহার না করা।
(৯) শিল্প কারখানার বর্জ্য সংরক্ষিত উপায়ে ফেলার ব্যবস্থা করা।
(১০) স্ব-স্ব এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।

সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য চাই সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কাজেই পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আমরা নাগরিক হিসেবে উপরোক্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করব।

No comments:

Post a Comment

Clicky