সংক্ষেপে উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ (ক) মানচিত্র আঁকার জন্য ছকবর্গ কীভাবে করতে হয়?
উত্তরঃ ছকবর্গের সাহায্যে মানচিত্র অঙ্কন হল মানচিত্র আঁকার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। ছকবর্গের সাহায্যে মানচিত্র আঁকার জন্য প্রথমে আমরা যে কোনো ভূগোল বই থেকে বাংলাদেশের একটি মানচিত্র বেছে নেই। এরপর পেন্সিল দিয়ে মানচিত্রটির ওপর হালকা করে সমান দূরত্ব বা ব্যবধানে উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম বরাবর রেখা আঁকি। রেখাগুলো মানচিত্রটি ঘিরে আঁকতে হবে। উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে টানা রেখাগুলো পরস্পর ছেদ করে এক একটি ছকবর্গ তৈরি করবে। ফলে বেশ কয়েকটি ছকবর্গ হবে। ছকবর্গ যত ছোট হবে মানচিত্রটি তত নিখুঁতভাবে আঁকা সম্ভব হবে বা মানচিত্রটি আঁকা সঠিক হবে।
প্রশ্নঃ (খ) বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কী কী? কৃষিজ সম্পদ ও মৎস্যসম্পদের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ আমাদের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রকৃতি থেকে আমরা যেসব দ্রব্য পাই, সেগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজ সম্পদ, মৎস্যসম্পদ, খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ ইত্যাদি।
কৃষিজ সম্পদের বর্ণনাঃ আমাদের কৃষিজ সম্পদের মধ্যে খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল প্রধান।
ক. খাদ্যশস্যঃ খাদ্যশস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, মসলা, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি বাংলাদেশে জন্মে। বাংলাদেশে একসময় অসংখ্য প্রজাতির ধানের সমৃদ্ধ ভান্ডার ছিল। বর্তমানে অনেক ধরনের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের দেশে প্রধানত তিন ধরনের ধান ব্যাপকভাবে চাষ হয়। এগুলো হলো- আউশ, আমন ও বোরো। এই তিন প্রকার ধানের প্রতিটির আবার উচ্চফলনশীল জাত রয়েছে। ধান আমাদের দেশের প্রধান শস্য। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কম-বেশি ধান জন্মে। তাই ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য।
খ. অর্থকরী ফসলঃ অর্থকরী ফসলের মধ্যে চা, পাট, তামাক, ইক্ষু, তুলা, রেশম ইত্যাদি প্রধান। অর্থকরী ফসল বলতে যেসব ফসলের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা হয়, সেসব ফসলকে বোঝায়।
বাংলাদেশে পাট একসময় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন কমে গেছে। এখন চা বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল।
মৎস্যসম্পদের বর্ণনাঃ বাংলাদেশ মাছে সমৃদ্ধ। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। যেমনঃ রুই, কাতলা, ইলিশ, চিতল, চিংড়ি, কই, মাগুর, শিং ইত্যাদি। বাংলাদেশে নদীনালা, খালবিল, পুকুর, সমুদ্র ইত্যাদি জলাশয়ের পানির বৈশিষ্ট্য অনুসারে মাছের পাঁচটি ক্ষেত্র রয়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের প্রধান মাছগুলো সাধারণত সব উপযুক্ত মৎস্য ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ (গ) অর্থকরী ফসল কাকে বলে?
উত্তরঃ অর্থকরী ফসলঃ যেসব ফসলের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা হয় সেসব ফসলকে অর্থকরী ফসল বলা হয়। বাংলাদেশে পাট এক সময় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল। কিন্তু বর্তমানে পাটের উৎপাদন কমে গিয়েছে। বর্তমানে চা বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসলের স্থান দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে চা, পাট, তামাক, ইক্ষু, তুলা, রেশম ইত্যাদি প্রধান।
প্রশ্নঃ (ঘ) বাংলাদেশের মাছের ক্ষেত্রগুলোর নাম লেখ।
উত্তরঃ বাংলাদেশের মত্স্য ক্ষেত্রগুলো হল-নদী বা প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছ, কৃত্রিম জলাশয়ের মাছ, বাংলাদেশের মোহনা বা খাঁড়ির মাছ, উপকূলীয় অঞ্চলের নোনা পানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ।
নদী বা প্রাকৃতিক জলাশয়ঃ নদী বা প্রাকৃতিক জলাশয় হল নদী, খাল বিল, ঝিল, হাওর, বাঁওড় ইত্যাদি। এ সব জলাশয়ে মিঠা পানির মাছের মধ্যে রয়েছে ইলিশ, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাউস, কালবাউস, আড়, বোয়াল, চিতল,বাটা, চিংড়ি প্রভৃতি।
কৃত্রিম জলাশয়ের মাছঃ এই সব জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে পুকুর, দিঘি, হ্রদ ইত্যাদি। যেমন কাপ্তাই হ্রদ, সেচ খাল ইত্যাদি। এই সব জলাশয়ে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাউস, কালবাউস, শোল, গজার প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়।
মোহনা বা খাড়ির মাছঃ বাংলাদেশর মোহনায় চিংড়ি, ইলিশ, তপসে, ভেটকি, কুড়াল, ফাইসা, বাঁশপাতা, চেলা ইত্যাদি মাছ পাওয়া যায়।
উপকূলীয় অঞ্চলের নোনা পানির মাছঃ বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি মাছের ব্যাপক চাষ হয়। উত্পাদিত চিংড়ি বিদেশে রফতানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ভেটকি, লৈটা, চেলা, পোয়া, রূপচাঁদা, ভারতীয় স্যামন, ছুরিমাছ উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্নঃ (ঙ) বাংলাদেশের বনভূমির বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ বাংলাদেশের বনভূমিকে তিনটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা-পাহাড়ি বনভূমি, শালবৃক্ষ বনভূমি এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমি।
পাহাড়ি বনভূমিঃ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় এই বনভূমি দেখা যায়। এই বনভূমির প্রধান বৃক্ষ গর্জন। এছাড়াও সেগুন, মেহগনি, চাপালিশ, তেলসুর, জলপাই, ছাতিম, কদম, জামরুল, জাম, গামারি, শিমুল, কড়ই, নাগেশ্বর, জারুল, অর্জুন, ময়না, রাবার ইত্যাদি প্রধান বৃক্ষ।
শালবৃক্ষের বনভূমিঃ এই বনভূমির প্রধান বৃক্ষ হচ্ছে শাল বা গজারি। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়ে প্রধান শাল বৃক্ষের বনভূমি অবস্থিত। এছাড়াও দিনাজপুর ও রংপুরে সামান্য পরিমাণে শালবৃক্ষের বনভূমি রয়েছে। এই সমস্ত বনভূমিতে শাল ছাড়াও অন্যান্য কাঠ ও ফলের বৃক্ষ রয়েছে।
ম্যানগ্রোভ বনভূমিঃ বাংলাদেশের সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এই ধরনের বনভূমি বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলায়ও রয়েছে। সুন্দরবনে স্বাদু ও লবণাক্ত পানির বৃক্ষের গাছ জন্মে। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। সমুদ্র স্রোতের জোয়ার-ভাটার প্রভাবে এ বনভূমি গড়ে উঠেছে। সুন্দরী ও গেওয়া সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ। এছাড়াও গরান, গোলপাতা, কেওড়া ইত্যাদি বৃক্ষ জন্মে।
প্রশ্নঃ (চ) বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদের একটি তালিকা দাও।
উত্তরঃ প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদের দেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রগুলো প্রধানত দেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এ ছাড়াও কয়লা, পিট কয়লা, চুনাপাথর, চিনামাটি, সিলিকা বালি, খনিজ বালি, কঠিন শিলা ইত্যাদি পাওয়া যায়। রাজশাহী বিভাগের বগুড়ায় জামালগঞ্জ ও দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ায় কয়লার খনি আছে। পিট কয়লা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। তবে ফরিদপুর, খুলনায় পিট কয়লার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে খনি রয়েছে। পিট কয়লা নিকৃষ্ট মানের কয়লা। সিলেট অঞ্চলে দেশের অন্যতম চুনাপাথরের খনি রয়েছে। সিলেট, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা অঞ্চলে সিলিকা বালি এবং কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছড়ানোভাবে খনিজ বালি পাওয়া যায়। দিনাজপুরের মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার খনি রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে খনিজ তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রশ্নঃ (ছ) আমদানি বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ কোনো দেশে কোনো দ্রব্য বা পণ্য উত্পাদন না হলে অথবা অভাব থাকলে এবং তা বিদেশ থেকে আনা হলে তাকে আমদানি পণ্য বলে। আমদানি সাধারণত বাণিজ্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, অন্যান্য যন্ত্রপাতি, গাড়ি, ওষুধ, কসমেটিকস, কাপড় ইত্যাদি প্রধানত আমদানি করে।
No comments:
Post a Comment