Breaking

Thursday, April 26, 2012

পঞ্চম শ্রেণি - সমাজ -অধ্যায় ১১ - বাংলাদেশের ঐহিহাসিক স্থান ও নিদর্শন

সংক্ষেপে উত্তর দাওঃ

প্রশ্নঃ (ক) মহাস্থানগড় ব্রাহ্মী লিপি থেকে কী জানা যায়?
উত্তরঃ প্রচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের বর্তমান ভূখন্ডে উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এর কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো বিভিন্ন অঞ্চলে রয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে বগুড়ার মহাস্থানগড় একটি অন্যতম প্রসিদ্ধ নিদর্শন। মহাস্থানগড় প্রচীন বৌদ্ধ ও হিন্দু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ।
জানার বিষয়ঃ মহাস্থানগড় বগুড়া জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিমে অবস্থিত। মহাস্থানগড়ে ব্রাহ্মী রীতিতে লেখা একটি খন্ডিত শিলালিপি পাওয়া গেছে। এর নাম মহাস্থান ব্রাহ্মী লিপি।

এ লিপি থেকে জানা যায় নগরটি সম্ভবত মৌর্যবংশীয় শাসকরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নগর দেয়ালের ভেতরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণের সবচেয়ে উঁচু স্থানে রয়েছে সুলতান মাহীসওয়ারের মাজার ও মোগল আমলের একটি মসজিদ। দেয়াল বেষ্টিত এলাকার বাইরে বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মঠ। এগুলো প্রাচীন প্রাদেশিক রাজধানীর শহরতলির সৌন্দৰ্য বহন করে। এ লিপি থেকে আরও জানা যায় চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং সপ্তম শতাব্দীতে এখানকার বসুবিহার দেখতে আসেন।
মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত ব্রাহ্মী লিপি থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় নগর পুন্ড্রনগর সম্পর্কে জানা যায়া । এ ছাড়া ঐ সময়ের শাসন ব্যবস্থা ও অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

প্রশ্নঃ (খ) ময়নামতিতে খনন কাজ হয়েছে এমন পাঁচটি স্থানের নাম লেখ।
উত্তরঃ প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হল ময়নামতি। ময়নামতি কুমিল্লা জেলা শহরের প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
খনন কাজ হয়েছে এমন পাঁচটি স্থানঃ ময়নামতিতে খনন কাজের জন্য ৫০ টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে সীমিত পরিসরে ৯ টিতে খনন কাজ করা হয়। এখানে ৫ টির নাম উল্লেখ করা হলঃ
১. শালবন বিহার , ২. আনন্দ বিহার, ৩. কুটিল মুরা, ৪. চারপত্র মুরা, ৫. ভোজ বিহার। 

ময়নামতিতে খনন কাজের ফলে যেসব নিদর্শন পাওয়া গিয়াছে তা থেকে তৎকালীন পূর্ব বাংলার সামাজিক রাজনৈক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা সম্বন্ধে জানা যায়। বাংলার এ অঞ্চলে বৌদ্ধ সভ্যতার উদ্ভব, বিকাশ ও ধ্বংসের একটি অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হল ময়নামতি।

প্রশ্নঃ (গ) ময়নামতিতে প্রাপ্ত নিদর্শন সামগ্রীর গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ বাংলার এ অঞ্চলে বৌদ্ধ সভ্যতার উদ্ভব, বিকাশ ও ধ্বংসের একটি অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হল ময়নামতি। ময়নামতিতে প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ।
কুমিল্লার ময়নামতি প্রচীন বাংলার বৌদ্ধ সভ্যতার উদ্ভব, বিকশ ও ধ্বংসাবশেষের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এখানকার ব্যাপক অঞ্চল খনন করে বেশ কিছু তাম্রশাসন ও মূর্তি পাওয়া গেছে। এখানে পাওয়া গেছে সোনা ও রূপার মুদ্রা, পোড়া মাটির সিল, মূর্তি। আমাদের কাছে এগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এসব সামগ্রীর মাধ্যমে আট থেকে বার শতক সময়কাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনেতিক ও ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। প্রকৃত অর্থে, ময়নামতিতে প্রাপ্ত সকল প্রচীন নিদর্শন সামগ্রীর গুরুত্ব অনেক। আমরা এ থেকে সেকালের মানুষের জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে সক্ষম হই।
পরিশেষ বলা যায়, প্রাচীন বাংলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হল ময়নামতি। এখানে প্রাপ্ত নিদর্শন সমূহ বাংলার ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

প্রশ্নঃ (ঘ) পাহাড়পুরের প্রধান প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষের নাম লেখ।
উত্তরঃ নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার একটি গ্রামের নাম পাহাড়পুর। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। খননের ফলে পাহাড়পুরে সোমপুর মহাবিহার নামে একটি বিরাট বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এই বিরাট স্থাপনার চারিদিকে বসবাসের জন্য ১৭৭টি কক্ষ, বড় প্রবেশ পথ, অসংখ্য নিবেদন স্তূপ, মন্দির দিয়ে স্থাপিত।
পাহাড়পুর আবিষ্কৃত সোমপুর বিহার পাল বংশের শাসক ধর্মপাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ ছাড়া পাহাড়পুরে বিভিন্ন সময়ে নির্মিত আরও কিছু ইমারতের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এসব ধ্বংসাবশেষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্নানঘাট, গন্ধেশ্বরীর মন্দির ও সত্যপীর ভিটা।

প্রশ্নঃ (ঙ) সোনারগাঁওয়ে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিদর্শনের নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ঢাকা শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সোনারগাঁওয়ের অবস্থান। এটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। সোনারগাঁও ছিল মধ্যযুগে বাংলার মুসলিম শাসকদের অধীনে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। সোনারগাঁওয়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। বর্তমানে যেসব নিদর্শন বিদ্যমান আছে তার মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে সুলতানি ও মুগল আমলের। আর এসব নিদর্শনের বেশিরভাগই হল ধর্মীয় ইমারত। ধর্মীয় ইমারত ছাড়া রয়েছে মুগল আমলের কয়েকটি সেতু এবং ইংরেজ আমলের কয়েকটি আবাসিক বাসভবন। আরও রয়েছে বড় দিঘি। ধর্মীয় ইমারতগুলোর মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মঠ, দরগাহ, সরদারবাড়ি, পানাম নগরের ধ্বংসাবশেষ এবং গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের সমাধি।

প্রশ্নঃ (চ) লালবাগ দুর্গে কী কী ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে? লেখো।
উত্তরঃ মোগল আমলে শাহজাদা আজম শাহ ও সুবাদার শায়েস্তা খানের সময় নির্মিত হয় লালবাগ দুর্গ। এটি বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি পুরোনো ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসম্পূর্ণ প্রাসাদদুর্গ। লালবাগ দুর্গ আওরঙ্গবাদ কেল্লা নামেও পরিচিত। কারুকাজখচিত প্রাচীর-ফটক ছাড়াও লালবাগ দুর্গে রয়েছে দরবার হল, মসজিদ, মোগল সুবাদার শায়েস্তা খানের মেয়ে পরী বিবির সমাধিসৌধ ও পুকুর। পরী বিবির সমাধিসৌধটি মোগল স্থাপত্যকলার একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন। সমাধিসৌধের মধ্যখানে অবস্থিত কবরটি মার্বেল পাথর দিয়ে বাঁধানো। ওপরে রয়েছে লতাপাতার নকশা। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৮ একর বিস্তৃত দুর্গ এলাকায় খননকাজ চালিয়েছে। খননের মাধ্যমে এখানে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।

প্রশ্নঃ (ছ) বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনসমৃদ্ধ স্থান সম্বন্ধে আমরা কেন জানব?
উত্তরঃ প্রাচীনকাল থেকে এ দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ডে উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শনসমৃদ্ধ স্থান যেমন- বগুড়ার মহাস্থানগড়, কুমিল্লার ময়নামতী, নওগাঁর পাহাড়পুর, সোনারগাঁ, লালবাগের কেল্লা, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ ইত্যাদি। এগুলো প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন বহন করছে।

আমাদের দেশে আরও অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সমৃদ্ধ স্থান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, জাদুঘর, ভাস্কর্য ইত্যাদি। সাম্প্রতিককালে নরসিংদীর ওয়ারি বটেশ্বরে বাংলার প্রাচীন নগরসভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলো আমাদের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ। এগুলো আমাদের গর্ব। আমরা এগুলো সম্পর্কে জানব। তাহলে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে এবং জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে। এভাবে আমাদের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে।

No comments:

Post a Comment

Clicky