প্রশ্ন : ক) মোস্তফা কামাল কে ছিলেন? তিনি কী বিশ্বাস করতেন?
উত্তর : একাত্তরের বীর সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল। তার জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান গ্রামের হাজিপুর গ্রামে। ২০ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে যেসব বাংলাদেশি সৈনিক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন মোস্তফা কামাল ছিলেন তাদের অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন চবি্বশ বছরের এক প্রাণবন্ত যুবক। প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী। তার সাহস, বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতায় সবাই মুগ্ধ। মোস্তফা কামাল বিশ্বাস করতেন, সৈন্যদের মনোবলই আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ। আর তাদের সাহস যেন দুর্গের দেয়াল। তাই তিনি মাত্র দশ জন মুক্তিসেনা নিয়ে দরুইন গ্রামে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি আগলাবার সাহস করেছিলেন।
প্রশ্ন: খ) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কারা, কোথায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন?
উত্তর : 'বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল' রচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছিল তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি- আশুগঞ্জে, উজানীস্বরে আর এন্ডারসন খালের পাড়ে। কিন্তু তখনও দক্ষিণ দিকের নিরাপত্তা বাকি। কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিবাহিনীর একটা প্লাটুন অবস্থান নিল দক্ষিণে- গঙ্গাসাগরের উত্তরে দরুইন গ্রামে। ওই প্লাটুনে মাত্র দশ জন মুক্তিসেনা ছিল। আর অধিনায়ক ছিলেন সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। দেশের স্বাধীনতার জন্য অসীম বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে নিজের প্রাণের বিনিময়ে তিনি তার পল্টুনকে রক্ষা করেছিলেন।
প্রশ্ন: গ) ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে কোথায় কোথায় প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়।
উত্তর : হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সারা বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে গড়ে তোলা প্রতিরক্ষা ঘাঁটি : মুক্তিবাহিনী জানতে পারল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এগিয়ে আসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। তখন তারা দেশপ্রেমে বিভোর নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়। এগুলো হল-১। আগুগঞ্জে, ২। উজানীস্বরে ৩। এন্ডারসন খালের পাড়ে।
মুক্তিবাহিনীর গড়ে তোলা কঠোর প্রতিরক্ষা ঘাঁটি এবং তাঁদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমেই এদেশ স্বাধীন হয়।
প্রশ্ন: ঘ) নিরাপত্তা অসম্পূর্ণ ছিল কোন দিকে? সে জন্য কী করা হয়েছিল?
উত্তর : ড. মাহবুবুল হক রচিত 'বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল' রচনায় মুক্তিবাহিনীর সেই নির্ভীক সংগ্রামের কথা অনুপম ব্যঞ্জনায় বর্ণিত হয়েছে।
নিরাপত্তা অসম্পূর্ণ ছিল যে দিকে : মুক্তিবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে হানাদার বাহিনীর প্রবেশ ঠেকাতে তিন দিকে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলে। শুধু নিরাপত্তা অসম্পূর্ণ ছিল শহরের দক্ষিণ দিকে।
সে জন্য গৃহীত ব্যবস্থা : কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিবাহিনীর একটা প্লাটুন অবস্থান নিল দৰিণে গঙ্গা সাগরের উত্তরে দরুইন গ্রামে। এ প্লাটুনে মুক্তিযোদ্ধা ছিল মাত্র দশ জন। এ প্লাটুনের অধিনায়ক ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী, সাহসী, বুদ্ধিমান ও কর্মতৎপর প্রাণবন্ত যুবক মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল।
পাক-হানাদার বাহিনী যেন কোনোদিক থেকেই দেশের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য মুক্তিবাহিনী তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করেছিল।
প্রশ্ন: ঙ) দরুইন গ্রাম কোথায়? সেখানে কারা অবস্থান নিয়েছিল?
উত্তর : ড. মাহবুবুল হক রচিত 'বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল' রচনায় ১৯৭১ সালের মুক্তিসংগ্রামের বীরত্বগাঁথা বর্ণিত হয়েছে। সেরকমই এক বীরত্বপূর্ণ ঘটনা সংগঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দরুইন গ্রামে।
দরুইন গ্রামের অবস্থান : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দক্ষিণে গঙ্গাসাগরের উত্তরে দরুইন গ্রাম অবস্থিত।
সেখানে যাঁরা অবস্থান নিয়েছিল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে পাক হানাদার বাহিনী এগিয়ে আসছে সংবাদ পেয়ে দরুইন গ্রামে অবস্থান নিয়েছিল এক প্লাটুন মুক্তিসেনা। সেখানে মাত্র দশজনের এক প্লাটুন মুক্তিসেনা ছিল। আর এদের অধিনায়ক ছিলেন সিপাহী মোস্তফা কামাল।
বীরশ্রেষ্ট মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে এই দরুনই গ্রামে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী।
প্রশ্ন: চ) মোস্তফা কামাল কী বিশ্বাস করতেন?
উত্তর: আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সিপাহি মোস্তফা কামাল এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম।
মোস্তফা কামালের বিশ্বাস : ২৪ বছর বয়সী প্রাণবন্ত যুবক মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী। তাঁর সাহস, বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতা ছিল প্রশংসনীয়। মোস্তফা কামাল বিশ্বাস করতেন, সৈন্যদের মনোবলই আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ। আর তাদের সাহস যেন দুর্গের দেয়াল। তাই মাত্র ১০ জন মুক্তিসেনা নিয়ে দরুইন গ্রামে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি নিরাপদ রাখার সাহস করেছিলেন মোস্তফা কামাল।
প্রশ্ন: ছ) ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল মোস্তফা কামাল কমান্ডারের কাছে কী খবর পাঠিয়ে ছিলেন?
উত্তর : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কিছু মুক্তিযোদ্ধার দুর্জয় সাহসের কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে ড. মাহবুবুল হক-এর 'বীরশ্রেষ্ট শহীদ মোসত্মফা কামাল' রচনাটি।
কমান্ডারের কাছে মোস্তফা কামালের পাঠানো খবর : ১৬ই এপ্রিল, ১৯৭১। পাকিস্তানী বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখল করার জন্য এগিয়ে আসছে। মাত্র দশজন সৈন্য নিয়ে শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করা অসম্ভব। তাই তিনি সেক্টর কমান্ডারের নিকট আরও মুক্তিসেনা পাঠানোর জন্য খবর পাঠালেন।
অদম্য সাহস আর বিশ্বাসের ভিত্তিতে মোস্তফা কামাল দুর্গ রক্ষা করার দায়িত্ব নিলেও বাস্তবে তিনি জানতেন যে এত কম সৈন্য নিয়ে শক্তিশালী শত্রুর মোকাবিলা করা অসম্ভব। তাই সেক্টর কমান্ডারের কাছে সাহায্যের জন্য খবর পাঠান।
উত্তর: 'বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তাফা কামাল' ড. মাহবুবুল হক এর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এক অনুপম রচনা। বাংলার দামাল ছেলেদের নির্ভীক বীরত্বের কথা রচনাটিতে অসামান্য ব্যঞ্জনায় মুর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ভোরবেলা পাকিস্তানি বাহিনী গোলা বর্ষণ শুরু করলে মোস্তফা কামাল বুঝতে পারলেন, এত কম শক্তি নিয়ে ওদের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি আবারও কমান্ডারের কাছে জরুরি সেনা-সহায়তার জন্য সংবাদ পাঠালেন। কিন্তু বাড়তি সেনা তো দূরের কথা, দু-তিন দিন ধরে তাঁদের নিয়মিত খাবার সরবরাহও বন্ধ। চিন্তায় অস্থির মোস্তফা কামালসহ সবাই মিলে পরিখার মধ্যে অবস্থান নেন। দুপুরের দিকে হাবিলদার মুনির আহমদের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিসেনা দরুইন গ্রামে এসে পৌঁছল। সেই সঙ্গে খাবারও এল। ফলে দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস বইল।
প্রশ্ন: ঝ) মুক্তিসেনারা কেন হতবিহ্বল হয়ে পড়লেন? তাঁদের সামনে কোন দুটি পথ খোলা ছিল?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল বেলা ১১টার সময় পাকিস্তানি সেনারা গোলা বর্ষণ করতে করতে এগিয়ে আসতে থাকে দরুইন ঘাঁটির দিকে। প্রথমে তারা অবস্থান নিল মোগরাবাজারে ও গঙ্গাসাগরে। দুপুর ১২টায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ আরও প্রবল হয়ে উঠল। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা গুলি তাদের তেমন কিছু করতে পারল না। হঠাৎ একটা গুলি এসে মুক্তিবাহিনীর মেশিনগান ম্যানের বুকে বিঁধল। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনগান বন্ধ হয়ে গেল। শত্রুর আক্রমণের এই আকস্মিকতা, দ্রুততা ও তীব্রতায় মুক্তিসেনারা হতবিহ্বল হয়ে পড়লেন। এ অবস্থায় তাঁদের সামনে কেবল দুটি পথ খোলা ছিল। আর এই দুটি পথ হলো—হয় সামনা-সামনি যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করা, না হয় পূর্বদিক দিয়ে পিছু হটে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া।
প্রশ্ন: ঞ) অবশিষ্ট সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার জন্য মোস্তফা কামাল কী সিদ্ধান্ত নিলেন?
উত্তর: ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আকস্মিক আক্রমণের দ্রুততা ও তীব্রতায় মুক্তিসেনারা হতবিহ্বল হয়ে পড়লেও মোস্তফা কামাল সাহস হারাননি। পরিখার মধ্যে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উত্তরে, দক্ষিণে, পশ্চিমে গুলি চালাতে লাগলেন। এরই মধ্যে নয়জন মুক্তিসেনা নিহত হলেন। আরও ১০জন হলেন আহত। পিছু না হটলে সবার মৃত্যু অবধারিত। এ পরিস্থিতিতে অবশিষ্ট সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার জন্য মোস্তফা কামাল সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি একাই শত্রু ঠেকাবেন। একাই গুলি চালিয়ে যাবেন। যেমন করেই হোক, মুক্তিসেনাদের জীবন বাঁচাতে হবে। তিনি সহযোদ্ধাদের দ্রুত পিছু হটার নির্দেশ দিলেন।
প্রশ্ন: ট) বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালের কবর কোথায়? বাংলাদেশ সরকার মোস্তফা কামালকে কী উপধিতে ভূষিত করেছে?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দরুইন গ্রাম আক্রমণ করে। প্রচণ্ড যুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য সহযোদ্ধাদের পিছু হটতে সাহায্য করে মোস্তফা কামাল একাই শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হন দরুইন গ্রামে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালের কবর এই দরুইন গ্রামেই অবস্থিত।
মোস্তফা কামালের অনমনীয় দৃঢ়তা ও আত্মদানের জন্য তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের গৌরব। অসীম সাহস আর বীরত্বের জন্য মোস্তফা কামালকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ আমাদের দেশের বীরত্বের সবচেয়ে বড় উপাধি।
প্রশ্ন : ঠ) বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল সম্পর্কে দশটি বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ লিখ।
উত্তর : বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার হাজিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দরুইন গ্রামে মাত্র দশজন মুক্তিসেনা নিয়ে গঠিত এক প্লাটুন সৈন্যের নেতৃত্ব দেন। মোস্তফা কামাল ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী, সাহসী, বুদ্ধিমান, কর্মতৎপর, প্রাণবন্ত যুবক। তাঁর কাজে সবাই মুগ্ধ। তিনি বিশ্বাস করতেন, সৈন্যদের মনোবলই আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ। ১৮ই এপ্রিল, ১৯৭১। শত্রু পক্ষের আক্রমণে হতবিহ্বল হয়ে পড়ল মুক্তিসেনারা। এরমধ্যে অনেকেই হতাহত হয়েছে। অল্প সংখ্যক মুক্তিসেনা নিয়ে প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন একাই তিনি দুর্গ আগলাবেন। সবাইকে কিছু হটার নির্দেশ দিলেন। তিনি একাই গুলি চালিয়ে যেতে লাগলেন। হঠাৎ একটি গোলার আঘাতে তিনি ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। জাতি তাঁকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' উপাধিতে ভূষিত করল।
Thursday, April 26, 2012
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল
Tags
# Bangla
# Class Five
About Salahuddin
Soratemplates is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates.
পড়াশোনা
Tags:
Bangla,
Class Five,
পড়াশোনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment