ক) প্রশ্ন: পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কী ষড়যন্ত্র করেছিল?
উত্তর : পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। যুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস তারা এ দেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। যুদ্ধের শেষ দিকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানি সৈন্যরা বিপাকে পড়ে যায়। তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারে, তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত এবং খুব দ্রুত পরাজয় ঘটবে। তাই তারা ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি করার। লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশ যাতে আর কোনোদিন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। তারা গোপন হত্যার পথ বেছে নেয়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দেশের নানা পেশার মেধাবী মানুষকে হত্যার জন্য তারা নীলনকশা তৈরি করে। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী কিছু মানুষের সহায়তায় ঠাণ্ডা মাথায় অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে তারা এ নীলনকশা বাস্তবায়ন করে। ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বাড়ি বাড়ি থেকে তুলে নেয় দেশের বিশিষ্ট ও প্রতিভাবান মানুষকে। এরা কেউ আর ফিরে আসেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদের কারও কারও ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিল, আবার কারও লাশও পাওয়া যায়নি।
খ) প্রশ্ন: পাকিস্তান গণপরিষদে কে, কখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়েছিলেন?
উত্তর : ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকেই পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা ঘোষণা করে, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা'। বাংলা ছিল ৫৬ ভাগ মানুষের মুখের ভাষা। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। তিনিই প্রথম ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেছিলেন। এ দাবির মাধ্যমেই বাংলার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন রাজনৈতিক স্বীকৃতি লাভ করে।
গ) প্রশ্ন: দর্শনের অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব কেমন মানুষ ছিলেন?
উত্তর: অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের যশস্বী শিক্ষক। তিনি নিরহংকার, সহজ-সরল ও অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তাঁর মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকত। সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। সবার শ্রদ্ধার পাত্র এই জ্ঞানতাপস অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেবও পাকিস্তানি সেনার হাত থেকে রেহাই পাননি। তারা নির্মমভাবে হত্যা করে আত্মভোলা, নিরংহার অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেবকে।
ঘ) প্রশ্ন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’—গানটির সুর করেন কে?
উত্তর: ভাষাশহীদদের স্মরণে রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’—গানটি এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত এই কালজয়ী গানটিতে সুরারোপ করেছেন প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদ। পাকিস্তানি সেনাদের নীলনকশার শিকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ এ গানটিতে সুর দিয়ে অমর হয়েছেন।
ঙ) প্রশ্ন: পাকিস্তানি সেনারা কখন কোণঠাসা হয়ে পড়ল?
উত্তর : বাংলার মানুষ মরতে শিখেছিল, রক্ত দিতে শিখেছিল, তাই তারা স্বাধীনতা লাভ করেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলার মানুষ যখন নির্মম মৃত্যুর শিকার হয়, তখনই তারা বুঝেছিল দেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের আরও রক্ত দিতে হবে। তারপর থেকে তারা আর পিছু হটেনি। নিরস্ত্র বাংলার মানুষ শুধু দেশপ্রেম দিয়ে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। নারী-পুরুষ, আবালবৃদ্ধবনিতা দেশের সর্বস্তরের মানুষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সামরিক বাহিনীর যাকে যেখানে পেয়েছে, সেখানেই আক্রমণ করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। এভাবে চলতে চলতে শেষদিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা আরও বিপাকে পড়ে যায়। তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারে, পরাজয় সুনিশ্চিত এবং খুব দ্রুত তাদের পরাজয় ঘটবে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
চ) প্রশ্ন: কোন সাংবাদিক-সাহিত্যিক সংবাদ অফিসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান?
উত্তর: পাকিস্তানি সৈনিক আর তাদের দোসররা জানত সাংবাদিকেরাও তাদের জন্য বিপজ্জনক। তাই তারা কয়েকটি সংবাদপত্র অফিসেও আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রতিভাবান সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদ সাবের সে সময সংবাদ অফিসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। যে রাতে পাকিস্তানি সৈনিক ও তাদের দোসররা সংবাদ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়, সে রাতে শহীদ সাবের “দৈনিক সংবাদ” কার্যালয়ে ঘুমিয়েছিলেন। আগুনের লেলিহান শিখায় রাতে সেখানেই দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
ছ) প্রশ্ন: তিনজন শহীদ সাংবাদিকের নাম কী কী?
উত্তর: পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা জানত, সাংবাদিকরাও তাদের জন্য বিপজ্জনক। তাই তারা খ্যাতনামা বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তাঁদের মধ্যে তিনজন শহীদ সাংবাদিকের নাম হলো:
১. শহীদ সাবের, ২. সিরাজ উদ্দীন হোসেন, ৩. সেলিনা পারভীন।
জ) প্রশ্ন: মুনীর চৌধুরী কেন বিখ্যাত ছিলেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী কিছু মানুষের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা গোপন হত্যার নীলনকশা অনুযায়ী দেশের যে কয়জন বিশিষ্ট ও প্রতিভাবান ব্যক্তিকে তাঁদের ঢাকার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় তাঁদেরই একজন মুনীর চৌধুরী। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। কৃতী শিক্ষক মুনীর চৌধুরী বিখ্যাত ছিলেন নাটক রচনার জন্য। একজন প্রগতিশীল বস্তুনিষ্ঠ সমালোচক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত।
ঝ) প্রশ্ন: শহীদ বুদ্ধিজীবী বলতে আমরা কাদের বুঝি?
উত্তর : যেসব বুদ্ধিজীবী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন, তাদেরই আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে জানি। আর বুদ্ধিজীবী বলতে যেসব মানুষ পড়াশোনা করে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন, দেশ ও জাতির উন্নতির ক্ষেত্রে যারা বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যারা দেশ ও জাতির পরম সম্পদ তাদের বুঝি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এবং ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পরম সম্পদ এসব বুদ্ধিজীবীকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। খ্যাতনামা চিকিৎসক ফজলে রাব্বি ইংরেজির খ্যাতিমান অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সাহিত্যিক-সাংবাদিক শহীদ সাবের, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, রসায়নের অধ্যাপক যোগেশ চন্দ্র ঘোষ, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার, প্রখ্যাত নাট্যকার ও সমালোচক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, কবি ও ঔপন্যাসিক অধ্যাপক আনোয়ার পাশা প্রমুখ।
ঞ) প্রশ্ন: কোন দিন, কেন আমরা ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী’ দিবস পালন করি?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বুঝতে পারে তাদের খুব শিগগির পরাজয় ঘটবে। পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে তারা বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করে। তারা গোপন হত্যার পথ বেছে নেয়। তাদের নীলনকশা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার বাড়ি বাড়ি থেকে দেশের বিশিষ্ট ও প্রতিভাবান ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁদের কারও ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিল মিরপুর বধ্যভূমিতে, কারও কারও লাশও পাওয়া যায়নি। তাঁদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বরকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে আমরা পালন করি।
ট) প্রশ্ন: ‘আমরা তাঁদের ভুলব না’—কাদের ভুলব না, কেন ভুলব না?
উত্তর: বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে। প্রায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদান করেছে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যসহ নানা পেশার মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে এবং মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দেশের খ্যাতনামা বরেণ্য ব্যক্তিদের। পাকিস্তানি সেনারা এ দেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দোসরদের সহযোগিতায় নির্মমভাবে হত্যা করেছে দেশের বুদ্ধিজীবীদের। তাই যাঁদের মহান ত্যাগ ও প্রাণদান আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে মিশে আছে, আমরা তাঁদের ভুলব না। কারণ, তাঁদের মূল্যবান প্রাণের বিনিময়ে, ত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় স্বাধীনতা।
Thursday, April 26, 2012
আমরা তাদের ভুলব না
Tags
# Bangla
# Class Five
About Salahuddin
Soratemplates is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates.
পড়াশোনা
Tags:
Bangla,
Class Five,
পড়াশোনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment