Breaking

Thursday, April 26, 2012

পঞ্চম শ্রেণি - সমাজ - অধ্যায় ১৩ - বাংলায় ইংরেজ শাসন

সংক্ষেপে উত্তর দাওঃ

প্রশ্নঃ (ক) নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্রে কারা যোগ দেয়?
উত্তরঃ ১৭৫৬ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব হন সিরাজউদ্দৌলা। নতুন নবাবকে তাঁর বড় খালা ঘষেটি বেগম মেনে নিতে পারেননি। তখন বাংলায় ডাচ (ওলন্দাজ), ফরাসি ও ইংরেজ বণিকরা বাণিজ্য করছিল। ইংরেজ বণিকদের বাণিজ্য সংস্থার নাম ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ক্ষমতা গ্রহণের পর নানা কারণে নবারের সঙ্গে ইংরেজ বণিকদের বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ইংরেজ বণিকরা নবাবকে ক্ষমতা থেকে সরানোর গোপন ষড়যন্ত্র করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এ দেশের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা, রায় দুর্লভ, জগৎশেঠ, মীর জাফর, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ প্রমুখ।

প্রশ্নঃ (খ) 'দ্বৈত শাসন' বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ পলাশীতে বিজয়ের পর পরই ইংরেজরা সরাসরি শাসনক্ষমতা হাতে তুলে নেয়নি। তাদের কথা শুনবে এমন এ দেশীয় অভিজাতদের দিয়ে তারা তাদের ক্ষমতার ভিত্তি মজবুত করতে থাকে। তারা প্রথমে মীর জাফর এবং পরে মীর কাশিমকে ক্ষমতায় বসায়। মীর কাশিম ছিলেন কিছুটা স্বাধীনচেতা। ফলে ইংরেজদের সঙ্গে মীর কাশিমের দু'বার যুদ্ধ বাধে। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন। এরপর থেকেই ইংরেজরা পুরোপুরি ক্ষমতা দখল শুরু করে। ১৮৫৭ সালের মধ্যে গোটা উপমহাদেশ তাদের অধীনে চলে যায়। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত একশ বছর এ দেশে কোম্পানির শাসন চলে।
কোম্পানির প্রথম শাসনকর্তা হন লর্ড ক্লাইভ। তার সময়ে বাংলায় 'দ্বৈত শাসন' প্রবর্তিত হয়। এ ব্যবস্থায় ইংরেজরা নবাবের হাত থেকে আর্থিক অধিকার কেড়ে নেয় এবং শুধু শাসনকার্য পরিচালনার দায়ভার তার হাতে থাকে। এই পদ্ধতির কারণে নবাব ক্ষমতাহীন হয়ে যান আর প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় ইংরেজদের হাতে।

প্রশ্নঃ (গ) ভারত শাসন আইন পাসের ফলে কী হয়?
উত্তরঃ সিপাহি বিপ্লবের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে 'ভারত শাসন আইন' পাস হয়। এই আইন এ দেশে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটায়। তখন থেকে ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামে ইংরেজ সরকার সরাসরি উপমহাদেশ শাসন করতে থাকে। ইংরেজ সরকারের যে প্রতিনিধি উপমহাদেশ শাসন করেন তাকে বলা হতো ভাইসরয়। তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি কাউন্সিল গঠন করা হয়। এভাবে ভারতবর্ষ ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলে যায়। অতঃপর ভারতবর্ষে প্রায় নব্বই বছর তাদের শাসন চলে।
এ সময় ইংরেজদের শোষণ, নির্যাতন ও ভেদনীতির কারণে বাংলা ও ভারতের আগের অবস্থা পাল্টে যেতে থাকে। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বেশ কয়েকজন হিন্দু ও মুসলমান মনীষীর প্রচেষ্টায় এ দেশে নবজাগরণ ঘটে। রাজনৈতিক সচেতন হয়ে ওঠেন এ দেশের অনেক মানুষ। এ ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তারা নানা রকম আন্দোলন পরিচালনা করেন। শাসনক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও ইংরেজ শাসকরা আন্দোলন একেবারে থামাতে পারেনি। আন্দোলনের চাপে অবশেষে ১৯৪৭ সালে তারা উপমহাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।

প্রশ্নঃ (ঘ) তিতুমীর কোথায় এবং কীভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন?
উত্তরঃ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন মুসলমানগণ এবং এ আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (রহ:) এবং সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (রহ:)। ইংরেজগণ এ আন্দোলনকে ওহাবী আন্দোলন রূপে আখ্যা দিয়েছিল। কিন্তু মুসলমানদের কাছে তা ছিল জেহাদ বা ধর্ম যুদ্ধ। সৈয়দ আহমদ শহীদের শিক্ষা ও আদর্শে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য সংগ্রামী অনুসারীর জন্ম দেয়। তাদের অন্যতম ছিলেন বাংলার সায়্যিদ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর এবং হাজী শরীয়তুল্লাহ। বাংলার কৃষক, তাঁতী ও সাধারণ মানুষকে ইংরেজ ও জমিদারদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে বড় রকমের বিদ্রোহের সূচনা করেন তিতুমীর। ইংরেজদের বন্দুক কামানের বিরুদ্ধে তিতুমীর পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগণা জেলার নারিকেলবাড়িয়ায় একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে যুদ্ধ শুরু করেন। ১৮৩১ সালে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় তিনি শহীদ হন।

প্রশ্ন: (ঙ) ফরায়েজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ফরায়েজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য মূলত ছিল ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ প্রচার এবং সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা। ইসলামের আদর্শ প্রচার এবং সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে বৃহত্তর ফরিদপুরের হাজি শরিয়তউল্লাহ ও তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলে মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
উদ্দেশ্য: এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও অনুশাসন পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা। পাশাপাশি জমিদার, নীলকর, মহাজন ও স্থানীয় প্রশাসনের শোষণ ও অত্যাচার থেকে মুক্ত করারও ছিল এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য। সাধারণ দৃষ্টিতে এসব আন্দোলন ব্যর্থ মনে হলেও এ সবের মধ্যে দিয়ে বাংলার মানুষের অধিকার-সচেতনতা প্রকাশ পায়।

প্রশ্নঃ (চ) সংস্কারক হিসেবে রাজা রামমোহন রায় কী অবদান রাখেন?
উত্তরঃ উনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। এদের মধ্যে কয়েকজন মনীষী ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি হিন্দু ধর্মকে কুসংস্কারমুক্ত করার চেষ্টা চালান। এরই সূত্র ধরে তিনি ‘ব্রাহ্ম ধর্মের’ প্রবর্তন করেন। নতুন ধর্মমত প্রচার ও আরাধনার জন্য ‘ব্রাহ্ম সমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তখনকার হিন্দু সমাজে প্রচলিত সতীদাহ প্রথা, কৌলীন্য প্রথা ও বাল্য বিবাহ প্রথা বিলোপের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ভারতে পাশ্চাত্য ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল। তিনি হিন্দু সমাজে নারী শিক্ষা এবং সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও সোচ্চার ছিলেন।

প্রশ্নঃ (ছ) মুসলমান সমাজের ক্ষেত্রে নওয়াব সৈয়দ আমীর আলীর অবদান কী?
উত্তরঃ সিপাহী বিপ্লবের পর মুসলমানদের প্রতি ইংরেজ সরকারের নীতির পরিবর্তন আসতে থাকে। অন্যদিকে মুসলমানদের একটি অংশ মনে করে যে, ইংরেজদের সাথে অসহযোগিতা করলে সব ক্ষেত্রে তারা পিছিয়েই থাকবে। মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এসময় বেশ কজন নেতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এঁরা হলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান, নওয়াব আবদুল লতিফ ও সৈয়দ আমীর আলী প্রমুখ। সৈয়দ আমীর আলী বাংলার মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সচেতন করার উদ্দেশ্যে 'সেন্ট্রাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন' নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। অচিরেই বাংলা ও বাংলার বাইরে এই প্রতিষ্ঠানের শাখা ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে আমীর আলী ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক জাগরণে অবদান রাখেন। তাঁদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা ও পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এর ফলে দিনে দিনে মুসলমানদের মধ্যে নবজাগরণ দেখা দেয়।

প্রশ্নঃ (জ) বাংলার মুসলমান সমাজ কেন বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানায়?
উত্তর: ১৯০৫ সালে পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে ইংরেজ সরকার নতুন একটি প্রদেশ গঠন করেন। ঢাকা হয় এর রাজধানী। এই ঘটনাকে বলা হয় বঙ্গভঙ্গ। পূর্ব বাংলায় মুসলমানরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। নতুন প্রদেশ হওয়াতে এখানে তাদের শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ বাড়ে। এ কারণে নবাব স্যার সলিমুল্লাহসহ মুসলমান সমাজের ব্যাপক অংশ বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানান।

প্রশ্নঃ (ঝ) কোন উদ্দেশ্যে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তরঃ অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হলে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়ে চিত্তরঞ্জন দাস ও মতিলাল নেহরু প্রমুখ ‘স্বরাজ পার্টি’ নামে আলাদা একটি দল গঠন করেন। এই দলের লক্ষ্য ছিল স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করা। চিত্তরঞ্জন দাস ব্রিটিশবিরোধী যে কোনো তত্পরতায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। এ উদ্দেশ্যে ১৯২৩ সালে তিনি মুসলমান নেতাদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এটি ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামে পরিচিতি পায়। এ চুক্তি বাস্তবায়নের উদাহরণ হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলকাতা পৌর কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়র হন।

প্রশ্নঃ (ঞ) লাহোর প্রস্তাব’-এর মূল বক্তব্য কী?
উত্তরঃ বাংলার রাজনীতিতে চূড়ান্ত ধাপ হচ্ছে ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তন। এ পর্যায়ে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন আরো তীব্র হয়। কংগ্রেস হিন্দু নেতাদের মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব এবং আরো নানাবিধ কারণে অধিকাংশ ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে এই ধারণা জন্মায় যে, তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আলাদা রাষ্ট্রের প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এটি ‘লাহোর প্রস্তাব’ নামে খ্যাত।

প্রশ্নঃ (ট) কখন উপমহদেশে দুটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়?
উত্তরঃ ১৯৪২ সালে কংগ্রেস ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন শুরু করে। অবশেষে ইংরেজ সরকার কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।

No comments:

Post a Comment

Clicky