সংক্ষেপে উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ (ক) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কী প্রথা চালু করেন? 
উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন মানবকল্যাণ ও সমাজ সংস্কারের দিকনির্দেশক।  তিনি আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গিয়েছেন।  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দু সমাজে বিধবা বিবাহ প্রথা চালু করেন।  তাঁর চেষ্টায় ১৮৫৬ সালে ‘বিধবা বিবাহ’ আইন পাস হয়।  তিনি তাঁর ছেলে নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে এক বিধবার বিয়ে দেন।  বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেন।
প্রশ্নঃ (খ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কীসের দিক নির্দেশক ছিলেন? 
উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন মানবকল্যাণ ও সমাজ সংস্কারের দিকনির্দেশক।  তিনি আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গিয়েছেন। তিনি হিন্দু সমাজে ‘বিধবা বিবাহ’ প্রথা চালু করেন, বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।  তিনি বই লিখে প্রচুর টাকা আয়  করতেন।  উক্ত টাকা সমাজ সেবায়, দীন-দুঃখী, গরিব, অসহায়, দুর্দশাগ্রস্থ, রুগ্ণ, অক্ষম, বিপদগ্রস্ত মানুষকে তিনি দান করতেন। 
 প্রশ্নঃ (গ) ঈশ্বরচন্দ্র কলকাতায় কোন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন? বর্তমানে এর নাম কী? 
উত্তর: শিক্ষা, সমাজ সংস্কার, সমাজসেবা, নারীমুক্তি, সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনেক অবদান রয়েছে।  তিনি মনে করতেন শিক্ষা বিস্তার ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার মাধ্যমে দেশের মানুষকে সচেতন ও সংস্কারমুক্ত করা যায়।  তিনি মাতৃভাষার মাধ্যমে লেখাপড়ার প্রচলন করেন।  এর পাশাপাশি তিনি ইংরেজিকে আবশ্যিক হিসেবে পাঠ্য করেন।  তিনি সরকারি 'শিক্ষা সংস্কার কমিটি'র সদস্য হিসেবে দেশীয় শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ ঘটান।  নিজ গ্রামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
তিনি কলকাতায় মেট্রোপলিটন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।  যার বর্তমান নাম 'বিদ্যাসাগর কলেজ।'
প্রশ্নঃ (ঘ) বিপদগ্রস্থ মানুষকে বিদ্যাসাগর কীভাবে সাহায্য করতেন? 
উত্তর: সাহিত্যিক হিসেবেও তাঁর অবদান কম নয়।  তাঁকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়।  বই লিখে তিনি প্রচুর টাকা আয় করতেন।  তিনি এ টাকা সমাজসেবায় দু'হাতে দান করতেন।  দীন-দুঃখী, গরিব-অসহায়, দুর্দশাগ্রস্ত, রুগ্ণ-অক্ষম, বিপদগ্রস্ত মানুষকে তিনি সেবা ও অকাতরে সাহায্য করতেন।  বাংলা ১২৭২ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়।  এ সময় তিনি নিজ গ্রামের মানুষদের সাহায্যের জন্য ছয় মাস ধরে খাদ্য, কাপড় ইত্যাদি বিতরণ করেন।
প্রশ্নঃ (ঙ) বেগম রোকেয়া ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আজীবন কী করেছেন? 
উত্তর : যুগে যুগে যেসব সমাজ সংস্কারক তাদের বিশেষ অবদানে সমাজের নানা গোঁড়ামি দূর করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন উন্নয়নের দিকে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বেগম রোকেয়া।  তারা দুজন পৃথক পৃথক ধর্মের লোক হলেও তাদের উভয়ের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা আর মনন ছিল এক।  তারা আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন।  তারা উভয়ে সমাজে শিক্ষার আলোকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। উভয়েই সমাজে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের সব ধর্মের সব লোকের অবস্থান উন্নয়নের জন্য আর বেগম রোকেয়া তৎকালীন নিজ গৃহে অবরোধবাসী নারী সমাজকে শিক্ষিত করে তাদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে চেষ্টা করেন।
সামাজিক ও জাতীয় জীবনের কল্যাণে বেগম রোকেয়া ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চিন্তা ও কাজ অতুলনীয়।  বেগম রোকেয়ার কাজের জন্য তাঁকে 'নারী জাগরণের অগ্রদূত' এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন মানবকল্যাণ ও সমাজ সংস্কারের একজন দিকনির্দেশক।   
পরিশেষে বলা যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বেগম রোকেয়া আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন।  আমরা তাঁদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
প্রশ্নঃ (চ) বেগম রোকেয়ার স্বামী লেখাপড়ার ব্যাপারে কীভাবে সাহায্য করতেন? 
উত্তরঃ বেগম রোকেয়া চিন্তা-ভাবনায় আর মননে তার সমসাময়িক মেয়েদের তুলনায় ছিলেন অনেক এগিয়ে।  তাঁর সময়ে মুসলিম মেয়েরা যেখানে ঘরে বসে সামান্য আরবি-ফার্সি পড়ত সেখানে তিনি রাতের আঁধারে সমাজের অগোচরে রাতে চুপিচুপি ভাইয়ের কাছে পড়াশোনা শিখেন।  ১৮৯৮ সালে উচ্চ শিক্ষিত সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়।  তিনি ছিলেন বিহার রাজ্যের ভাগলপুরের অধিবাসী।  বিয়ের পর বেগম রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।  লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাঁর স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন আনন্দিত হন।  তিনি রোকেয়ার লেখাপড়া শেখায় উৎসাহিত করেন।  স্বামীর কাছে তিনি ভালোভাবে ইংরেজি ও উর্দু শিক্ষা লাভ করেন।

 
 
 
 
 
 
দিক নির্দেশনার জন্য কমেন্ট করুন।
ReplyDelete