Breaking

Thursday, January 5, 2012

তৃতীয় অধ্যায় : প্রাণিজগৎ

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:
প্রশ্ন ১:তিনটি ক্ষতিকর পতঙ্গের নাম লেখ। এগুলো আমাদের কী কী ক্ষতি করে? 

উত্তর : পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে এর মধ্যে পতঙ্গ শ্রেণীভুক্ত প্রাণীর সংখ্যাই বেশি। যেসব পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ ও ফসলের ক্ষতি করে তাদের ক্ষতিকর পতঙ্গ বলে।
তিনটি ক্ষতিকর পতঙ্গ হচ্ছে- 
 
১. তেলাপোকা
২. মশা ও
৩. মাছি। 



তেলাপোকা মাছি মশা
চিত্র: ক্ষতিকর পতঙ্গ

এরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক ক্ষতিসাধন করে থাকে। যেমনঃ
তেলাপোকার ক্ষতির ধরন: তেলাপোকা আমাদের খাদ্যদ্রব্য নোংরা করে এবং বই-পুস্তক ও পোশাক-পরিচ্ছদ কেটে ফেলে।
মাছির ক্ষতির ধরন: মাছি আমাদের ব্যাপক ক্ষতি করে। একাধারে বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করে এবং খাদ্যদ্রব্যের ওপর বসে তা খাদ্যে ছড়িয়ে দেয়। ফলে আমরা নানা সংক্রামক রোগ যেমন_ আমাশয়, টাইফয়েড ইত্যাদিতে আক্রান্ত হই।
মশার ক্ষতির ধরন: মশার আক্রমণে নানা রকম রোগ, যেমন_ ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও ডেঙ্গুজ্বর হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২: কোন ধরনের প্রাণীকে সরীসৃপ বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: যেসব মেরুদণ্ডী প্রাণী বুকে ভর করে হাঁটে, ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয় তাদের সরীসৃপ বলে।
উদাহরণ: টিকটিকি, সাপ, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্যঃ
১) এরা বুকে ভর করে হাঁটে।
২) এদের ফুসফুস আছে।
৩) চামড়া খসখসে, দেহ আঁইশ বা শক্ত আবরণে আবৃত থাকে।

চিত্র: সরীসৃপ প্রাণী
প্রশ্ন ৩: অভিযোজন কাকে বলে? কোনো প্রাণী পানিতে অভিযোজিত হওয়ার কারণ কী?
উত্তর : অভিযোজন: পরিবেশ পরিবর্তনশীল। পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে ধীরে ধীরে। পরিবেশের উপাদানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীর বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয়। প্রতিটি প্রাণী তার নিজ পরিবেশে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকে ও বংশবিস্তার করে। পরিবেশের কোনো পরিবর্তন ঘটলে প্রাণীর স্বভাব ও দৈহিক গঠনে নানারূপ পরিবর্তন ঘটে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীর নিজেকে এভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়াকে অভিযোজন বলে।
প্রাণীদের পানিতে অভিযোজিত হওয়ার কারণ : প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য অভিযোজন একান্ত অপরিহার্য। ভিন্ন আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে পৃথিবীর একেক অঞ্চলের পরিবেশ একেক রকম হয়। পরিবেশের বিভিন্নতার কারণে একেক এলাকায় একেক রকম প্রাণী বাস করে। তাই পরিবেশ অনুযায়ী প্রাণীদের টিকে থাকার জন্য পানিতে অভিযোজন একান্ত প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৪: প্রাণীদের প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়? এদের নাম লেখ।
উত্তর :পৃথিবীর নানা পরিবেশে নানারকম প্রাণী বাস করে। এদের গঠন, আকার ও আকৃতিতে বৈচিত্র্য রয়েছে। যতই বৈচিত্র্য থাকুক না কেন পৃথিবীর সব প্রাণীকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা হয়। যথা_
১) মেরুদণ্ডী প্রাণী : মানুষ, গরু, কুকুর, সাপ ইত্যাদি,
২) অমেরুদণ্ডী প্রাণী : মশা, মাছি, কেঁচো, জোঁক ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৫: মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: মেরুদণ্ডী প্রাণী: যেসব প্রাণীর দেহে মেরুদণ্ড থাকে, তাকে মেরুদণ্ডী প্রাণী বলে। অনেক গোল গোল চাকতির মতো হাড় একটার পর একটা সজ্জিত হয়ে সৃষ্টি হয় মেরুদণ্ড।





চিত্র: দোয়েল
মেরুদণ্ডী প্রাণীর উদাহরণ। যেমন: মানুষ, গরু, ছাগল, পাখি, মাছ ইত্যাদি।
অমেরুদণ্ডী প্রাণী: যেসব প্রাণীর দেহে মেরুদণ্ড নেই, তাদের অমেরুদণ্ডী প্রাণী বলে। যেমন: কেঁচো, চিংড়ি, প্রজাপতি, তেলাপোকা ইত্যাদি।





চিত্র: প্রজাপতি

প্রশ্ন ৬: কী কী কারণে মানুষ প্রাণিজগতের শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে বিবেচিত হয়?
উত্তর: মানুষ সর্বাপেক্ষা উন্নত শ্রেণীর স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানুষ কথা বলতে পারে। মানুষ প্রাণিজগতের শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণ নিচে দেওয়া হলো।
১. পৃথিবীর সব প্রাণীর মধ্যে মানুষ সর্বাপেক্ষা উন্নত।
২. মানুষের কথা বলার ক্ষমতা আছে কিন্তু অন্য প্রাণীর নেই।
৩. মস্তিষ্ক বা মগজ অন্য সব প্রাণীর চেয়ে বড় ও উন্নত।
৪. হাত মুঠো করে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে।
৫. দুই পায়ে ভর করে দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারে।
৬. মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী।
উল্লেখিত কারণে মানুষকে প্রাণিজগতের শ্রেষ্ঠ জীব বলা হয়।

প্রশ্ন ৭: ব্যাঙকে উভচর প্রাণী বলা হয় কেন?
উত্তর: যেসব প্রাণী জলে ও স্থলে উভয় স্থানে বসবাস করতে পারে, তাদের উভচর প্রাণী বলে। ব্যাঙ জীবনের প্রথম অবস্থায় পানিতে থাকে, ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। আবার পরিণত বয়সে এরা ডাঙায় বাস করে এবং ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। জলে ও স্থলে উভয় স্থানে বসবাস করে বলে ব্যাঙকে উভচর প্রাণী বলা হয়।






চিত্র: উভচর প্রাণী ব্যাঙ

রচনামূলক প্রশ্নঃ
১। মৎস্য শ্রেণীভুক্ত প্রাণীদের বৈশিষ্ট্যগুলো কী?
উত্তর : মৎস্য শ্রেণীভুক্ত প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য : এই পৃথিবীতে মৎস্য শ্রেণীভুক্ত অনেক প্রাণী রয়েছে। এদের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এদের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে দেয়া হল :
পৃষ্ঠ পাখনা
আইশ





চিত্র: রুই মাছ

১। পানিতে সাঁতার কাটার জন্য এদের পাখনা আছে।
২। ফুলকার সাহায্যে এরা শ্বাসকাজ চালায়।
৩। অধিকাংশ মাছের দেহে আঁইশ থাকে আবার কোনো কোনো মাছের অাঁইশ থাকে না।
৪। মাছ ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
৫। এদের জীবনধারণের জন্য পানি অপরিহার্য।

প্রশ্ন ২: কোন কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে সাদা ভালুক মেরু এলাকায় অভিযোজিত হয়েছে, উল্লেখ করো।
উত্তর: পরিবেশের কোনো পরিবর্তন ঘটলে প্রাণীর স্বভাব ও দৈহিক গঠনে নানারূপ পরিবর্তন ঘটে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার নামই অভিযোজন। মেরু অঞ্চলে সাদা ভালুকের অভিযোজিত হওয়ার কারণ হলো:
১। এদের দেহ দীর্ঘ ঘন লোমে আবৃত থাকে।
২। সাদা ভালুকের চামড়ার নিচে পুরু চর্বির স্তর থাকে বলে এদের দেহে তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি হয়, ফলে দেহ উষ্ণ থাকে।
৩। এদের দেহে সাদা রঙের লোম থাকায় এদের সাদা বরফের মাঝে সহজে চিহ্নিত করা যায় না। ফলে এরা সহজে শিকারে পরিণত হয় না। এভাবে শত্রুর হাত থেকে এরা রক্ষা পায়।

প্রশ্ন ৩: কোন কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে মাছ পানিতে বাস করে?
উত্তর: মাছ একটা জলজ প্রাণী। নিচের বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে মাছ পানিতে বাস করে—
১। মাছের মাথা ও লেজের দিক সরু এবং দেহের মধ্যভাগ চওড়া। পানিতে সাঁতার কাটার সময় পানির গতি রোধ করার জন্য দেহের গঠন এ রকম হয়েছে।
২। সাঁতার কাটার জন্য পাখনা আছে, ফলে মাছ পানিতে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।
৩। এদের ফুসফুস নেই। ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। ফুলকার সাহায্যে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বনডাই-অক্সাইড ত্যাগ করতে পারে, ফলে পানিতে ডুবে থাকতে কোনো অসুবিধা হয় না।

প্রশ্ন ৪: মরুভূমির প্রাণীদের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকে?
উত্তর: মরুভূমিতে দিনে খুব গরম ও রাতে খুব ঠান্ডা পড়ে।
মরুভূমির এ ভিন্ন পরিবেশের ফলে সেখানকার প্রাণীদের মধ্যেও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
যেমন:
১। মরুভূমির প্রাণীরা খুব কম পানি পান করে বেঁচে থাকতে পারে।
২। অনেক প্রাণী পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য পেটে পানি জমিয়ে রাখতে পারে। যেমন: উট।
৩। মরু এলাকার প্রাণীরা তীব্র গরম সহ্য করতে পারে।
৪। মরুভূমির প্রাণীরা প্রয়োজনে নাকের ছিদ্র বন্ধ করে ধূলিঝড় থেকে আত্মরক্ষা করে থাকে।
৫। মরুভূমির প্রাণীদের পা ও গলা লম্বা হয়। এতে দেহ বালু থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে থাকে। ফলে বালুর তাপ দেহে কম পৌঁছায়।
৬। লম্বা পা দিয়ে এরা দ্রুত দৌড়াতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Clicky