২০১৯ সাল ৬ই মে প্রতিবন্ধকতাজয়ী একটি গল্পের নায়িকা হল তামান্না আক্তার নূরা । বসবাস করেন যশোরের ঝিকরগাছার আলীপুর গ্রামে । পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকেই হাত কেমন হয়, সে বুঝতেই পারেনি । কারণ তার শরীরে হাত নামের অঙ্গটির অস্তিত্বই নেই। ডান পা-ও জম্মের পর থেকে দেখেননি , তাই হয়তো কখনো হাঁটার দুঃসাহসও দেখাননি । ৪ হাত-পা এর মধ্যে বাম পা-ই একমাত্র অবলম্বন।
তার পরও জীবনচাকা ঘোরাতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার কাঁটাগুলো একে একে উপড়ে ফেলছে অদম্য সাহসী এই মেয়েটি। হুইল চেয়ারটার সঙ্গেই জীবনের বোঝাপড়া আর দুর্নিবার প্রেম তার । কারণ এই চেয়ারই তার সবচেয়ে ‘আপনজন’। হুইল চেয়ারটার সঙ্গেই একহয়ে থাকা, একহয়ে পথ চলা । কতটুকু মনোবল থাকলে যে কৃতিত্বের এমন চূড়ায় ওঠা যায়, আবারও সে প্রমাণ দেখাল। সকল প্রতিবন্ধকতা দুরে ঠেলে ফেলে বাঁ পা দিয়ে লিখেই পিইসি ও জেএসসির পর এবার এসএসসিতেও হাঁকাল ছক্কা ! অর্জন করে নিল জিপিএ ৫ ।
তবে নূরার উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তিত তার পরিবার। তামান্না নূরার বাবা রওশন আলী জানান, ‘মেয়ের রেজাল্টে আমরা খুবই খুশি, তবে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ।’ আমি (রওশন আলী) একটি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি এবং কিছু টিউশনি করে আমাকে খুব কষ্টে সংসার চালাতে হয়। ফলে মেয়ের উচ্চ শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি ।
বাঁকড়া জে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলালউদ্দীন খান বলেন, তামান্না নূরা তার কষ্টের ফল পেয়েছে । তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাকে অবশ্যই অনেক দূর নিয়ে যাবে ।
২০১৩ সালে আজমাইন এডাস স্কুল থেকে পিইসি এবং ২০১৬ সালে বাঁকড়া জে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তামান্না নূরা জিপিএ ৫ পেয়েছিল। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নূরা সবার বড়।
তামান্না নূরার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্ম নেয় নূরা । ওই সময় হাসপাতালে মা খাদিজা খাতুন জ্ঞান ফিরেই দেখেন জন্ম দেওয়া তাঁর প্রথম কন্যা শিশুর দুটি হাত ও একটি পা নেই । দারিদ্র্যের সংসার, বেকার স্বামী। বাসায় ফিরে সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করতে হয়েছে মা খাদিজা খাতুনকে । বেড়ে ওঠা শিশুটির চাহনি আর মেধা সেদিন মায়ের মনে জুগিয়েছিল সাহস আর ভবিষ্যতের সঞ্চয়।
তামান্না নূরার মা খাদিজা খাতুন বলেন, জম্মের পর নূরার শ্রবণ ও মুখস্থ শক্তি এত প্রখর ছিল যে, যেকোনো জিনিস একবার শুনলেই তা আয়ত্ত করতে পারত। তারপর সে অক্ষর লেখা শুরু করে বাঁ পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক ধরে। তারপর আস্তে আস্তে কলম ধরে লেখা আয়ত্ত করে। বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টানো, চামচ দিয়ে খাওয়া, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চিরুনি ও চুল আঁচড়ানো সহজে আয়ত্ত করে ফেলে নূরা। মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের সহযোগিতা চান মা খাদিজা খাতুন ।
যশোরের ঝিকরগাছার বাঁকড়া জে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না নূরা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। শারীরিক বাধা ডিঙিয়ে ভালো ফল করা নূরা জানিয়েছে- ভবিষ্যতে সে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা হতে চায়।
আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
সংবাদ সুত্রঃ অনলাইন পত্রিকা, Image Source www.google.com
No comments:
Post a Comment