বার বার পাতলা পায়খানা? বার বার পাতলা পায়খানা হওয়াকেই সাধারণভাবে আমরা ডায়রিয়া বলে থাকি । বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো ডায়রিয়া । পায়খানাতে যদি শুধু মল ও পানি থাকে তাকে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বলা হয় এবং পাতলা পায়খানার সাথে যদি রক্ত আসে তাহলে তাকে আমাশয় বলে ।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাতলা পায়খানা হলে রোগীর কোন ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না , শুধুমাত্র খাবার স্যালাইনেই পাতলা পায়খানা ভাল হয় খুব দ্রুত । কেননা পাতলা পায়খানার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় এবং পানি স্বল্পতা দেখা দেয় । আবার দেখা যায় পাতলা পায়খানার সঙ্গে কখনো কখনো জ্বর, বমি অথবা পেটে ব্যথাও হতে পারে। বর্ষাকালে এবং যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পাতলা পায়খানার প্রকোপ বেড়ে যায়, বিশেষ করে বন্যার সময় পাতলা পায়খানার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারন করে।
ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানার কারণ:
ডায়রিয়ার কারণ মূলত ৪টি যথা ১.দূষিত খাবার, ২.দূষিত পানি, ৩.রোগ জীবানু এবং ৪.কৃমি।
ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানা লক্ষণ:
২৪ ঘণ্টায় তিনবার অথবা এর চেয়ে বেশিবার পানিসহ পাতলা পায়খানা হবে, খাবারের রুচি কমে যাবে, শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, ইত্যাদি। অনেক সময় ডায়রিয়া শুরুর প্রথম দিকে বমি হয় আবার পরে অনেক ক্ষেত্রে বমি কমে যেতে পারে । জ্বর হতে পারে, তবে সেটা খুব একটা তীব্র হয় না আবার বেশিরভাগ সময় শরীর হালকা পরিমাণ গরম থাকতে পারে ।
ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয়:
পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। স্যালাইন শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করে। তাই ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা যত দিন থাকবে, তত দিনই রোগীকে স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্যালাইন, ভাতের মাড় অথবা অন্য কোনো বিশুদ্ধ পানীয় পান করালে শরীরের লবণ ও পানির যে ঘাটতি তৈরি হয় সেটা কমে যাবে আবার ঘাটতি বেশি হলে সে ক্ষেত্রে কলেরা স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয়:
শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে কিছু বিশেষ যত্ন নিতে হবে। যেমন:
১.বারবার খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
২.ছয় মাসের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ ও খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
৩.বেশি করে তরল জাতীয় খাবার যেমন- ভাতের মাড়, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে দিতে হবে।
৪.শিশুকে অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে এবং অল্প অল্প করে বারবার খেতে দিতে হবে।
৫.যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ খায়, তাদের ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
৬.স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক খাওয়াতে হবে।
৭.খাবার তৈরীর আগে এবং শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৮.সম্ভব হলে শিশুকে অসুস্থ লোক অথবা রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে।
৯.বোতলের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
১০.সিদ্ধ করা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে।
১১.ছোট শিশুদের খাওয়ানোর জন্য চামচ ব্যবহার করতে হবে।
স্যালাইন বানানোর নিয়ম:
সম্পূর্ণ এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে ঢেলে দিতে হবে এবং সম্পূর্ণ স্যালাইন পানিতে ভালভাবে না মিশে যাওয়া পর্যন্ত
নাড়তে হবে। একটি প্যাকেট খোলার পর সেটা থেকে বানানো স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ভাল থাকে।
স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম:
২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানার পর ২০ থেকে ৪০ চা চামচ পরিমান খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে বা শিশুর চাহিদা অনুযায়ী খেতে দিতে হবে।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় কখন চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নিতে হবে:
১/ শিশুর ২৪ ঘণ্টায় ৪-৫ বার এর বেশি পাতলা পায়খানা অথবা বমি হলে।
২/ শিশুর পাতলা পায়খানার সাথে রক্ত গেলে ।
৩/ শিশু খাবারে একেবারে খেতে না পারলে।
৪/ খিঁচুনী হলে ।
৫/ শিশুর চোখ বসে গেলে ।
৬/ শিশু অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলে অথবা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে।
দরকারী কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-
#শিশুর ওজন কমে যাচ্ছে কি না অথবা শিশু পানিশূন্যতায় ভুগছে কি না।
#পানি ও অন্যান্য খাবার বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন উপায়ে তৈরি করা হচ্ছে কিনা অথবা পরিবেশন কিভাবে করা হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
#যা সহজে হজম হয় না অথবা পায়খানা নরম করে, এমন কোন খাবার বা পানীয় শিশুকে খেতে দেবেন না।
#শিশুর খাদ্যতালিকায় প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন, আমিষ, ক্যালরি ও খনিজ পদার্থ আছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
#যেসকল শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে না, তাদের ক্ষেত্রে, গাভির দুধ অথবা ল্যাকটোজ সমৃদ্ধ খাবার যত কমিয়ে আনা যায় ততই শিশুর জন্য ভাল।
#দীর্ঘসময় ধরে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় চলতে থাকলে এবং পায়খানার সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে অথবা শিশুর ওজন দ্রুত কমতে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
#ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় সেরে যাওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের পরিপূরক হিসেবে জিংক ট্যাবলেট ১০ দিন সেবন করতে হতে পারে।
গরমে শিশুর পাতলা পায়খানায় :
গরমের সময় শিশুর পাতলা পায়খানায় মারাত্মক রূপ নিতে পারে। গরমে বাংলাদেশের এই আবহাওয়ায় আপনার আদরের সন্তান খুব সহজেই ডায়রিয়ায় বা পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে এই গরমে যে সকল শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে, তারা বারবার নরম পায়খানা করতে পারে, সেটি কিন্তু ডায়রিয়া নয়। মনে রাখতে হবে, যদি মলের তুলনায় পানির পরিমান বেশি হয় তখনই বুঝতে হবে শিশুটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে । বিশেষ করে গরমে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায় এবং শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, যাকে পানিশূন্যতা অথবা পানিস্বল্পতা বলা হয়।
একটু সাবধান হলেই শিশুর খুব সহজেই ডায়রিয়ায় প্রতিরোধ করা যায়। একটু লক্ষ করুন---
১)গরমে প্রচুর ঘামের কারণে শিশুর অনেক বেশি পানি পিপাসা লাগে । বিশুদ্ধ পানি ভালভাবে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে শিশুকে পান করতে দিন ।
২)গরমে কোন খাবারই বেশিক্ষণ ভাল থাকে না । আপনার অজান্তেই পচা অথবা বাসি খাবার খাওয়াচ্ছেন কিনা আপনার শিশুকে, সাবধান হতে হবে।
৩)যে সকল রোগজীবাণু শিশুর পাতলা পায়খানায় জন্য দায়ী , গরমে তাদের বংশবৃদ্ধিও অনেক বেশি হয়, তাই আপনার ঘরকে অবশ্যই সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে সচেষ্ট হন।
৪)গরমের সময় শিশুকে বেশি বেশি খাওয়ার স্যালাইন ও তরল জাতীয় খাবার, যেমন- ভাতের মাড়, ডাবের পানি, ঘোল, টকদই, ফলের রস ও লবণ-গুড়ের শরবত খেতে দিতে হবে । স্যালাইনের কাজ কিন্তু ডায়রিয়া বন্ধ করা নয় এটি শুধুমাত্র শরীরের পানি ও লবণের শূন্যতা পূরণ করে।
৫)প্রতিবার পায়খানার পর ১০ থেকে ১৫ চামচ খাবার স্যালাইন আপনার শিশুকে খেতে দিন। অবশ্যই মনে রাখবেন, স্যালাইন ধীরে ধীরে খাওয়াতে হবে এবং এক এক চামচ করে সময় নিয়ে খাওয়াতে হবে।
৬)শিশুকে অন্যান্য খাবার অল্প অল্প করে দিতে হবে।
৭)সব রকমের খাবার, যেমন- খিচুড়ি, মাছ, মাংস, ডাল, ভাত, ডিম, কলা, ফলের রস, সবজি ইত্যাদি সবকিছুই শিশু খেতে পারবে।
৮) খাবার রান্না করার সময় অবশ্যই সয়াবিন তেল দিবেন। কাঁচকলা ডায়রিয়ার তীব্রতা কমাতে উপকারি। তাজা ফলের রস পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
কিছু ঘরোয়া টিপস-------
পেটের অস্বস্তিকর গ্যাস দূর করার জন্য একটুখানি আদাই যথেষ্ট। একটুখানি আদা খেলে পেটের গ্যাস দূর করে আপনার পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করবে । পাতলা পায়খানা গুরুতর না হলে লেবুর শরবত বা ডাবের পানিও খেতে পারেন। পাতলা পায়খানা বন্ধে সর্ষের বীজও যথেষ্ট কার্যকর। এক চামচ সর্ষের বীজ পানি দিয়ে খেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফল পাবেন। ঘোলও আপনার যথেষ্ট উপকার দেবে। কারণ ঘোলের মধ্যে এসিড আছে তা জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।
একটু দইয়ের সঙ্গে কলা খেলে পেট খারাপ ম্যাজিকের মতো উধাও হয়ে যাবে। এছাড়াও পাতলা পায়খানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়ায় সতর্ক থাকুন।
ডায়রিয়া হলে যা যা করা যাবে না---
*কোনভাবেই খাবার বন্ধ করা যাবে না।
*চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না।
ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানার কারণ:
ডায়রিয়ার কারণ মূলত ৪টি যথা ১.দূষিত খাবার, ২.দূষিত পানি, ৩.রোগ জীবানু এবং ৪.কৃমি।
ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানা লক্ষণ:
২৪ ঘণ্টায় তিনবার অথবা এর চেয়ে বেশিবার পানিসহ পাতলা পায়খানা হবে, খাবারের রুচি কমে যাবে, শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, ইত্যাদি। অনেক সময় ডায়রিয়া শুরুর প্রথম দিকে বমি হয় আবার পরে অনেক ক্ষেত্রে বমি কমে যেতে পারে । জ্বর হতে পারে, তবে সেটা খুব একটা তীব্র হয় না আবার বেশিরভাগ সময় শরীর হালকা পরিমাণ গরম থাকতে পারে ।
ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয়:
পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। স্যালাইন শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করে। তাই ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা যত দিন থাকবে, তত দিনই রোগীকে স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্যালাইন, ভাতের মাড় অথবা অন্য কোনো বিশুদ্ধ পানীয় পান করালে শরীরের লবণ ও পানির যে ঘাটতি তৈরি হয় সেটা কমে যাবে আবার ঘাটতি বেশি হলে সে ক্ষেত্রে কলেরা স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয়:
শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে কিছু বিশেষ যত্ন নিতে হবে। যেমন:
১.বারবার খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
২.ছয় মাসের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ ও খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
৩.বেশি করে তরল জাতীয় খাবার যেমন- ভাতের মাড়, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে দিতে হবে।
৪.শিশুকে অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে এবং অল্প অল্প করে বারবার খেতে দিতে হবে।
৫.যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ খায়, তাদের ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
৬.স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক খাওয়াতে হবে।
৭.খাবার তৈরীর আগে এবং শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৮.সম্ভব হলে শিশুকে অসুস্থ লোক অথবা রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে।
৯.বোতলের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
১০.সিদ্ধ করা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে।
১১.ছোট শিশুদের খাওয়ানোর জন্য চামচ ব্যবহার করতে হবে।
স্যালাইন বানানোর নিয়ম:
সম্পূর্ণ এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে ঢেলে দিতে হবে এবং সম্পূর্ণ স্যালাইন পানিতে ভালভাবে না মিশে যাওয়া পর্যন্ত
নাড়তে হবে। একটি প্যাকেট খোলার পর সেটা থেকে বানানো স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ভাল থাকে।
স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম:
২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানার পর ২০ থেকে ৪০ চা চামচ পরিমান খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে বা শিশুর চাহিদা অনুযায়ী খেতে দিতে হবে।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় কখন চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নিতে হবে:
১/ শিশুর ২৪ ঘণ্টায় ৪-৫ বার এর বেশি পাতলা পায়খানা অথবা বমি হলে।
২/ শিশুর পাতলা পায়খানার সাথে রক্ত গেলে ।
৩/ শিশু খাবারে একেবারে খেতে না পারলে।
৪/ খিঁচুনী হলে ।
৫/ শিশুর চোখ বসে গেলে ।
৬/ শিশু অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলে অথবা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে।
দরকারী কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-
#শিশুর ওজন কমে যাচ্ছে কি না অথবা শিশু পানিশূন্যতায় ভুগছে কি না।
#পানি ও অন্যান্য খাবার বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন উপায়ে তৈরি করা হচ্ছে কিনা অথবা পরিবেশন কিভাবে করা হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
#যা সহজে হজম হয় না অথবা পায়খানা নরম করে, এমন কোন খাবার বা পানীয় শিশুকে খেতে দেবেন না।
#শিশুর খাদ্যতালিকায় প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন, আমিষ, ক্যালরি ও খনিজ পদার্থ আছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
#যেসকল শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে না, তাদের ক্ষেত্রে, গাভির দুধ অথবা ল্যাকটোজ সমৃদ্ধ খাবার যত কমিয়ে আনা যায় ততই শিশুর জন্য ভাল।
#দীর্ঘসময় ধরে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় চলতে থাকলে এবং পায়খানার সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে অথবা শিশুর ওজন দ্রুত কমতে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
#ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় সেরে যাওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের পরিপূরক হিসেবে জিংক ট্যাবলেট ১০ দিন সেবন করতে হতে পারে।
গরমে শিশুর পাতলা পায়খানায় :
গরমের সময় শিশুর পাতলা পায়খানায় মারাত্মক রূপ নিতে পারে। গরমে বাংলাদেশের এই আবহাওয়ায় আপনার আদরের সন্তান খুব সহজেই ডায়রিয়ায় বা পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে এই গরমে যে সকল শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে, তারা বারবার নরম পায়খানা করতে পারে, সেটি কিন্তু ডায়রিয়া নয়। মনে রাখতে হবে, যদি মলের তুলনায় পানির পরিমান বেশি হয় তখনই বুঝতে হবে শিশুটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে । বিশেষ করে গরমে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায় এবং শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, যাকে পানিশূন্যতা অথবা পানিস্বল্পতা বলা হয়।
একটু সাবধান হলেই শিশুর খুব সহজেই ডায়রিয়ায় প্রতিরোধ করা যায়। একটু লক্ষ করুন---
১)গরমে প্রচুর ঘামের কারণে শিশুর অনেক বেশি পানি পিপাসা লাগে । বিশুদ্ধ পানি ভালভাবে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে শিশুকে পান করতে দিন ।
২)গরমে কোন খাবারই বেশিক্ষণ ভাল থাকে না । আপনার অজান্তেই পচা অথবা বাসি খাবার খাওয়াচ্ছেন কিনা আপনার শিশুকে, সাবধান হতে হবে।
৩)যে সকল রোগজীবাণু শিশুর পাতলা পায়খানায় জন্য দায়ী , গরমে তাদের বংশবৃদ্ধিও অনেক বেশি হয়, তাই আপনার ঘরকে অবশ্যই সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে সচেষ্ট হন।
৪)গরমের সময় শিশুকে বেশি বেশি খাওয়ার স্যালাইন ও তরল জাতীয় খাবার, যেমন- ভাতের মাড়, ডাবের পানি, ঘোল, টকদই, ফলের রস ও লবণ-গুড়ের শরবত খেতে দিতে হবে । স্যালাইনের কাজ কিন্তু ডায়রিয়া বন্ধ করা নয় এটি শুধুমাত্র শরীরের পানি ও লবণের শূন্যতা পূরণ করে।
৫)প্রতিবার পায়খানার পর ১০ থেকে ১৫ চামচ খাবার স্যালাইন আপনার শিশুকে খেতে দিন। অবশ্যই মনে রাখবেন, স্যালাইন ধীরে ধীরে খাওয়াতে হবে এবং এক এক চামচ করে সময় নিয়ে খাওয়াতে হবে।
৬)শিশুকে অন্যান্য খাবার অল্প অল্প করে দিতে হবে।
৭)সব রকমের খাবার, যেমন- খিচুড়ি, মাছ, মাংস, ডাল, ভাত, ডিম, কলা, ফলের রস, সবজি ইত্যাদি সবকিছুই শিশু খেতে পারবে।
৮) খাবার রান্না করার সময় অবশ্যই সয়াবিন তেল দিবেন। কাঁচকলা ডায়রিয়ার তীব্রতা কমাতে উপকারি। তাজা ফলের রস পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
কিছু ঘরোয়া টিপস-------
পেটের অস্বস্তিকর গ্যাস দূর করার জন্য একটুখানি আদাই যথেষ্ট। একটুখানি আদা খেলে পেটের গ্যাস দূর করে আপনার পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করবে । পাতলা পায়খানা গুরুতর না হলে লেবুর শরবত বা ডাবের পানিও খেতে পারেন। পাতলা পায়খানা বন্ধে সর্ষের বীজও যথেষ্ট কার্যকর। এক চামচ সর্ষের বীজ পানি দিয়ে খেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফল পাবেন। ঘোলও আপনার যথেষ্ট উপকার দেবে। কারণ ঘোলের মধ্যে এসিড আছে তা জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।
একটু দইয়ের সঙ্গে কলা খেলে পেট খারাপ ম্যাজিকের মতো উধাও হয়ে যাবে। এছাড়াও পাতলা পায়খানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়ায় সতর্ক থাকুন।
ডায়রিয়া হলে যা যা করা যাবে না---
*কোনভাবেই খাবার বন্ধ করা যাবে না।
*চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না।
আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image Source: www.google.com
No comments:
Post a Comment