টার্কি মুরগী লালন পালন - দৈনিক কাজের কর্মসূচী-পর্ব-১১
১। সকাল থেকে কাজ শুরু করার পূর্বে ডিজ ইনফ্যাক্ট, ড্রেস, গামবুট, মাস্ক, টুপি, গ্লাভস পরিধান করে কর্ম দিবসের কাজ শুরু করতে হবে। বাচ্চা টার্কির কাজ দিয়ে শুরু করতে হবে, বড় টার্কি দিয়ে শেষ করতে হবে।২। প্রথমে অফিস, গোডাউন এবং ফার্মের বাহিরে চারদিক ঝাড়– দিয়ে পরিস্কার করতে হবে, কোন রকম ময়লা আবর্জনা থাকতে পারবে না। তারপর ফার্মে ঢুকে খাবার পাত্র এবং পানির পাত্র বাহির করতে হবে এবং লিটারের উপরের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে আঁচড়া দিতে হবে। লিটার ভিজে গেলে তা সরিয়ে নতুন লিটার দিয়ে পূর্ণ করে দিতে হবে। মাচার নিচের মলমূত্র পরিস্কার করতে হবে। লিটার দৈনিক ২ বার পরিস্কার করে আঁচড়া দিতে হবে।
৩। স্প্রেয়ারে প্রয়োজন মত পানি নিয়ে প্রতি লিটার পানিতে জীবাণুনাশক ১ গ্রাম টিমসেন দিয়ে উত্তমভাবে মিশ্রিত করে অফিস, গোডাউন এবং ফার্মের বাহিরে চারদিকে স্প্রে করতে হবে। তারপর বাসস্থানে প্রবেশ করে বাসস্থানের চালে, নেটের চারদিকে এবং লিটারে উত্তমভাবে স্প্রে করতে হবে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, বাসস্থানের ভিতরে কোনরকম ধুলাবালি এবং মাকড়শার আঁশ থাকতে পারবে না। প্রতিদিন সকাল বেলা ফুটবাথ এর পটাশ মিশ্রিত পানি পরিবর্তন করে নতুন পটাশ মিশ্রিত পানি দ্বারা ভর্তি করে ব্যবহার করতে হবে।
৪। খাবার পাত্র / পানির পাত্র ভিম সাবান দিয়ে উত্তমভাবে ব্রাশ দিয়ে ঘষে মেজে ধৌত করে জীবাণূনাশক মিশ্রিত পানিতে উক্ত পাত্রগুলো ভালোভাবে চুবিয়ে নিতে হবে। যেমনঃ ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম হবে। এখানে আরও উল্লেখ থাকে যে, সপ্তাহে ৫ দিন টিমসেন মিশ্রিত পানিতে চুবাতে হবে এবং বাকী ২ দিন তুঁত (কপার সালফেট) মিশ্রিত পানিতে চুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যেমনঃ প্রয়োগমাত্রা- প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম তুঁত।
৫। তারপর প্রত্যেকটি টার্কিকে নজর দিয়ে লক্ষ করতে হবে, মলমূত্র কি রকম এবং কি কি রং এর মলমূত্র, পাতলা না শক্ত বড়ির মত, মলমূত্র স্বাভাবিক কিনা?
>> চোখ ও মুখ মন্ডল স্বাভাবিক কিনা? চোখ, মুখ ফোলা বা চোখের পাতা বন্ধ, না খোলা অথবা চোখ দিয়ে পানি পড়ে কিনা?
>> মুখ বা নাক দিয়ে পানি আসে কিনা বা মুখ দিয়ে লালা পড়ে কিনা? মুখ মন্ডল উজ্জল বর্ণ আছে কিনা?
>> পায়ের হাটা স্বাভাবিক কিনা? পায়ে শক্তি আছে কিনা? বা খোড়ায়ে খোড়ায়ে হাটে কিনা?
>> পালকগুলো চকচকে কিনা, পালক উশকো খুশকো কিনা, লিটারে বেশি পরিমান পালক পড়ে আছে কিনা?
>> চঞ্চল, চটপটে, তরতাজা আছে কিনা? ঝিম ধরে দাড়িয়ে বা বসে আছে কিনা? সর্বোপরি, দেখতে হবে প্রাণচাঞ্চল্য ও প্রাণবন্ত, সুস্থ্য-সবল তরতাজা চটপটে আছে কিনা? যদি কোন টার্কি দূর্বল বা অসুস্থ্য ধরা পড়ে, তাহলে এটিকে হাসপাতালে রেখে সঠিক চিকিৎসা করতে হবে, চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে। তারপর সকল টার্কির অবস্থা বুঝে খাবার, ওষুধ বা ভিটামিন মিশ্রিত পানি সরবরাহ করতে হবে। অবশ্যই আদর্শ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার এবং পরিস্কার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। তারপর নিখুঁতভাবে খেয়াল করতে হবে তারা প্রত্যেকে মনের আনন্দে, মজা করে খাচ্ছে কিনা, কোন অরুচি আছে কিনা, প্রয়োজনের তুলনায় কম-বেশী খাচ্ছে কিনা? যদি অরুচি বা কম খায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খামার পরিচালনা করতে হবে।
৬। টার্কি মুরগী সঠিক সময়ে ডিম দিচ্ছে কিনা, পরিমান অনুযায়ী ডিম দিচ্ছে কিনা, পরিমানের চেয়ে কম দিচ্ছে কিনা, ডিমের সাইজ সঠিক আছে কিনা, ছোট-বড় হয় কিনা, ডিমের খোসা মসৃন কিনা এবং পাতলা কিনা, ডিমের ফার্টালিটি আশানুরুপ হয় কিনা? ডিম থেকে সুস্থ্য সবল বাচ্চা ফোটে কিনা এবং বাচ্চার মৃতের হার বেশী কিনা?
উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে যদি কোন রকম সমস্যা ধরা পড়ে, সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন রকম বিলম্ব করা যাবে না।
৭। ব্রুডারের বাচ্চার পরিচর্যাঃ
লক্ষ্য রাখতে হবে, ব্রুডারের তাপমাত্রা সঠিক আছে কিনা, খাবার পানি সঠিক পরিমানে খাচ্ছে কিনা, লিটার পরিস্কার রাখতে হবে। অর্থাৎ তৃতীয় খন্ডে আলোচ্য বিষয় ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা এবং বাচ্চাদের উত্তম পরিচর্যা অনুযায়ী দৈনিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এখানে আরও উল্লেখ থাকে যে, ৭ম খন্ডে আলোচ্য বিষয় অনুপাতে কুয়াশা ও শীতে ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
৮। প্লাস্টিকের ড্রামে পরিস্কার পানি ভর্তি করে রাখতে হবে এবং পানি ভর্তি ড্রামটি নিরাপদ ও ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ড্রামের পানিতে পাখি যেন মুখ না দিতে পারে। বৃষ্টির পানি, ধুলা বালি যেন না পড়ে। অবশ্যই পানি শোধন করে রাখতে হবে।
পানি শোধন করার পদ্ধতিঃ
১০০ লিটার পানিতে ৪ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত করে পানি শোধন করতে হবে। প্রতিদিন, দিনের শেষে অর্থাৎ সন্ধ্যায় ড্রামে পানি ভর্তি করে পানি শোধন করে রাখতে হবে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, ড্রাম উত্তম রুপে জীবাণুনাশক দ্বারা ধৌত করে উল্লেখিত কাজটি করতে হবে।
৯। খাবার রাখার প্লাস্টিক ড্রামঃ
খাবার রাখার প্লাস্টিক ড্রামটি জীবাণুনাশক দ্বারা উত্তমরুপে ধৌত করে তারপর খাবার রাখতে হবে। সর্বক্ষন খেয়াল রাখতে হবে খাবার যেন টাটকা থাকে। খাবারে ছত্রাক বা দলা পাকিয়ে থাকলে সেই খাবার খাওয়ানো যাবে না। খাবারের বস্তা অবশ্যই মাচার উপরে রাখতে হবে।
১০। সর্বক্ষণ লক্ষ্য রাখতে হবে, টার্কির বাসস্থানে পর্যাপ্ত পরিমানে আলো বাতাস চলাচল করে কিনা এবং লিটারের আর্দ্রতা ১৫% - ২০% আছে কিনা বা এ্যামোনিয়া গ্যাস আছে কিনা? তাপমাত্রা বা শীত বেশী কিনা? লিটার অত্যাধিক শুকনা হলে বাসস্থানের ভিতর ধুলাবালি উড়তে থাকবে, যা থেকে টার্কির ঠান্ডা জনিত সমস্যা লেগেই থাকবে। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং লিটারে পানি দ্বারা স্প্রে করে ধুলাবালি রোধ করতে হবে। উপরোল্লিখিত বিষয়ে কোন রকম সমস্যা হলে অবশ্যই সাথে সাথে সমাধান করতে হবে।
১১। দৈনিক পানি পাঁচ ঘন্টা পর পর পরিবর্তন করে দিতে হবে। গরমে ঠান্ডা পানি, শীতে গরম পানি। সকাল / বিকাল দৈনিক ২ বার খাবার দিতে হবে। ১১টা থেকে ২টার মধ্যে শাক সবজি খাওয়ানো শেষ করতে হবে। শাক সবজি কুচি কুচি করে কেটে পটাশ মিশ্রিত পানিতে চুবিয়ে খাওয়াতে হবে। পটাশ মিশ্রিত পানি অবশ্যই নীলাভ রং হতে হবে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ থাকে যে, ভ্যাকসিন করার আগে এবং পরে পটাশ মিশ্রিত পানি ও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যাবে না।
১২। লক্ষ্য রাখতে হবে, বাসস্থানের আলো, আলোর কর্মসুচি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রন হয় কিনা, রাতের আলো, দিনের আলো, আলোর কর্মসুচী অনুযায়ী ব্যবস্থা রাখতে হবে অবশ্যই।
১৩। সঠিক সময়ে সঠিক ঔষধ, ভিটামিন ও ভ্যাকসিন, কৃমির ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
১৪। জৈব নিরাপত্তা ১০০% মেনে চলতে হবে।
১৫। চতুর্থ খন্ডের লিটার বর্ণ ডিজেজ এর অনুপাতে লিটার ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
১৬। প্রতিদিন খামার, যন্ত্রপাতি, অফিস, গোডাউন, ঔষধের শোকেস পরিস্কার করতে হবে।
১৭। সকল কাজ শেষ করে খামারের দরজা এবং গেটের দরজা উত্তমভাবে লাগিয়ে দিনের কর্মসুচি শেষ করতে হবে।
সর্বশেষ আপনাদের কাছে অনুরোধ রইলো, ট্রেনিং এর প্রথম খন্ড হইতে দশম খন্ড পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে, বুঝে ও মুখস্থ করে খামার পরিচালনা করবেন।
Image Source www.google.com
আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
No comments:
Post a Comment