প্রশ্ন: বাংলাদেশের শহরের একটি বর্ণনা লেখ।
উত্তর: আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। এটি প্রকৃতির রূপসী কন্যা হিসেবে পরিচিত। এদেশের ‘নদ-নদী, মাঠ-ঘাট, অরণ্য আর পাহাড়ের বিচিত্র মনোমুগ্ধকর পরিবেশের পাশাপাশি রয়েছে ছোট-বড় অনেক শহর। প্রকৃতির আপন পরিবেশ থেকে আলাদা ঢঙে গড়ে উঠেছে এসব শহর।
শহরের অবস্থানঃ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা একটি বিশাল শহর। এমনিভাবে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর এবং বিশেষ বিশেষ শিল্প এলাকায় গড়ে উঠেছে শহর ও নগর। প্রতিটি শহরের উঁচু উঁচু দালানকোঠা, ইট-কাঠ আর পাথর দিয়ে বিভিন্ন আকারে তৈরি। আমরা মানুষ নামের প্রাণীগুলো এখানেই বসবাস করি। শহুরে জীবনের রূপটি বিধৃত নিচের পঙিক্ততে-
‘ইটের পরে ইট,
মাঝে মানুষ কীট
নাইকো ভালবাসা নাইকো স্নেহ।’
শহরের পিচঢালা ও সিমেন্টের তৈরি রাস্তাগুলো বেশ চওড়া। পাকা রাস্তার দুপাশ দিয়ে চলে বাস, ট্রাক, রিকশা, অটোরিকশা, সাইকেল ইত্যাদি যানবাহন। আর রাস্তার দুপাশের ফুটপাত দিয়ে চলাচল করে পথচারী।
মানুষের কর্মময় বিচিত্র জীবনঃ বিচিত্র কর্মব্যস্ততায় থাকে শহরের মানুষ। কেউ অফিস-আদালতে কাজ করে, কেউ করে ব্যবসা-বাণিজ্য। শ্রমিকরা কাজ করে কলে-কারখানায়। এছাড়া নানা পেশার খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার জন্য শহরে এসে ভিড় করে।
বিনোদনের উৎস ও সুযোগঃ কাজ আর ক্লান্তির পর মানুষের প্রয়োজন হয় অবসর যাপনের। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেড়ানোর জন্য শহরে রয়েছে পার্ক ও উদ্যান। অবসর সময়ে শহরের লোকজন গাছপালা ও ফুলে ফুলে সাজানো পার্কে বেড়াতে যায়। ছুটির দিনে কেউ কেউ যায় জাদুঘর ও চিড়িয়াখানায়। জাদুঘরে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপত্য শিল্প ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। চিড়িয়াখানায় রয়েছে পৃথিবীর নানা দেশের বিচিত্র সব জীবজন্তু।
উপসংহারঃ শহর প্রকৃতির আপন হাতে গড়া নয়। মানুষ তার প্রয়োজনের তাগিদে গড়ে তুলেছে শহর ও শহরভিত্তিক কর্মজীবন। আমাদের শহরগুলো জীবিকা ও জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামে কী কী ধরনের বাড়িঘর তৈরি হয় ?
উত্তর: গ্রাম প্রধান দেশ বাংলাদেশ। বহুকাল ধরে এদেশের মানুষ গ্রামে বাস করে আসছে। সভ্যতার অগ্রগতি আর মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে এখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শহর। তাই এখন শহর আর গ্রাম নিয়েই এদেশ। শহর আর গ্রামের বাড়িঘরের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বাড়িঘর তৈরি হয়। নিচে শহর ও গ্রামের বাড়িঘরের ধরন বর্ণনা করা হলোঃ
শহরের বাড়িঘরঃ বাংলাদেশের শহরের বাড়িঘর তৈরি করা হয় ইট, কাঠ আর পাথর দিয়ে। শহরের উঁচু উঁচু এসব বাড়িঘরকে দালানকোঠা বলা হয়।
গ্রামের বাড়িঘরঃ বাংলাদেশের গ্রামের বাড়িঘরের কাঠামো তৈরি হয় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে। ঘরের চাল ছাওয়া হয় ছন, খড়, গোলপাতা ও হোগলা পাতা দিয়ে। ঘরের চারপাশের দেয়াল তৈরি হয় বাঁশের চাঁচারি, পাটকাঠি বা মাটি দিয়ে। গ্রামের এসব বাড়িঘর সাধারণত দোচালা ও চৌচালা হয়ে থাকে। ঘরামিরা বাঁশের চাঁচারি, বেত ও শীতল পাটি দিয়ে ঘরের দেয়াল ও চালের ভেতরের দিকটা চমৎকারভাবে সাজিয়ে তোলেন। গ্রামে কোনো কোনো বাড়িঘর টিন দিয়েও তৈরি করা হয়। গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতেই ঢেঁকিঘর ও রান্নাঘর থাকে।
প্রশ্ন: ‘নদীর সঙ্গে এ দেশের মানুষের গভীর মিতালি।’ এ কথাটির অর্থ কী ?
উত্তর: নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। দেহের যেমন শিরা, উপশিরা রয়েছে যার মাধ্যমে রক্ত চলাচলে প্রাণ চাঞ্চল্য আসে ঠিক তেমনি আমাদের দেশের অসংখ্য ছোটবড় নদী জালের মতো জড়িয়ে প্রাণের স্পন্দন জাগায় দেশের বুকে।
‘নদীর সঙ্গে এ দেশের মানুষের গভীর মিতালি।’ এ কথাটির মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের জন্য নদীর নিঃস্বার্থ উপকারিতার কথা বোঝানো হয়েছে। ‘মিতালি’ শব্দের অর্থ বন্ধুত্ব। বন্ধু যেমন বন্ধুকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে, তেমনি করে এ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট-বড় সব নদীই এ দেশের মানুষকে যুগ-যুগ ধরে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও সাহায্য করে আসছে। নদীর বানে ভেসে আসা পলি এ দেশের মাটিকে উর্বর করেছে। নদীর কারণেই এ দেশে সোনালি ফসলে ভরা কৃষিকাজের বিকাশ ঘটেছে। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে এ দেশের প্রধান প্রধান শহর, বন্দর ও ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র। বর্ষাকালে নদীই গ্রামের যাতায়াতের প্রধান উপায়। এ দেশের জেলে ও মাঝিসমাজ নদীর ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ দেশের মানুষ নদীর সঙ্গে সত্যিকার অর্থেই গভীর মিতালির বন্ধনে আবদ্ধ।
প্রশ্ন: আমাদের ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ বলা হয় কেন ?
উত্তর: “আমাদের এই দেশ” প্রবন্ধটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিকের বর্ননা দিতে গিয়ে ছোট বড় নানা জাতের মাছের কথা বলা হয়েছে। মাছ আর বাঙালি এ দুটি কথা একের সঙ্গে অন্যটি এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে, মাছ ছাড়া বাঙালি কল্পনা করা যায় না। আমরা বাঙালি। আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, আর সবচেয়ে প্রিয় খাবার হলো মাছ। মাঠভরা সোনালি ধান আর খাল-বিল, পুকুর ও নদী ভরা মাছ এ দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ দেশের উর্বর মাটিতে উৎপাদিত নানা রকমের ধান থেকে যেমন আমরা ভাতের চাল পেয়ে থাকি, তেমনই খাল-বিল, পুকুর ও নদী থেকে পেয়ে থাকি নানা জাতের, নানা নামের সুস্বাদু মাছ। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য-তালিকায় ভাতের সঙ্গে কোনো না কোনো ধরনের মাছ থাকেই। তাই আমাদের ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ বলা হয়।
প্রশ্ন: নদী, খাল-বিল ও সমুদ্রে পাওয়া যায় এমন দশটি মাছের নাম লেখ।
উত্তর: বাংলাদেশের নদী, খাল-বিল ও সমুদ্রে সারা বছরই বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যায়। নদী, খাল-বিল ও সমুদ্রে পাওয়া যায় এমন দশটি মাছের নাম নিচে লিপিবদ্ধ করা হলোঃ
০১। ইলিশ—নদীর মাছ ০২। চিতল—নদীর মাছ
০৩। শোল—খাল-বিলের মাছ ০৪। কৈ—খাল-বিলের মাছ
০৫। রূপচাঁদা—সমুদ্রের মাছ ০৬। কোরাল—সমুদ্রের মাছ
০৭। লাক্ষা—সমুদ্রের মাছ ০৮। লইট্টা—সমুদ্রের মাছ
০৯। ফাইস্যা—সমুদ্রের মাছ ১০। শিং—খাল-বিলের মাছ
প্রশ্ন: কখন নবান্ন উৎসবে সবাই মেতে ওঠে? এ দেশের কয়েক প্রকার ধানের নাম লেখ।
উত্তর: ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। উৎসবের দেশ বাংলাদেশ। কথায় বলে বার মাসে তের পার্বণ। সত্যিই তাই। সহজ সরল, সদা হাসি-খুশি, সরল প্রাণ বাঙ্গালিরা সারা বছরই কোন না কোন উপলক্ষে উৎসবে মেতে আছে।
নবান্ন উৎসব বাংলাদেশের জনজীবনের একটি অন্যতম সামাজিক উৎসব। শরত ঋতুর শেষে হিমেল হাওয়ার ভেলায় ভেসে আসে হেমন্ত।
নতুন ধানের মিষ্টি গন্ধে আমোদিত হয় হেমন্তের প্রকৃতি। ঘরে ঘরে জাগে আনন্দের ঢেউ। ঢেঁকির তালে ধান-ভানার গানে তখন নবান্ন উৎসবে সবাই মেতে ওঠে।
এ দেশের উর্বর মাটিতে ফলে অনেক রকমের ধান। এসব ধানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক প্রকারের ধানের নাম হলো— অঞ্জন লক্ষ্মী, আকাশমণি, পক্ষীরাজ, কাশফুল, বাঁশফুল, বাসমতি, বিন্নি, কালজিরা, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ, বালাম ও বিরুই।
প্রশ্ন: আমাদের দেশের মেয়েরা অবসর সময়ে কী-কী জিনিস তৈরি করে ?
উত্তর: ভূমিকাঃ আমাদের দেশের মেয়েরা সংসারের হাড়ভাঙা খাটুনির পর যখনই একটু সময় পায় তখনই নানা জাতের শৌখিন জিনিস তৈরি করে। যেমন-নকশিকাঁথা, নকশি শিকা, নকশি পাখা, শীতল পাটি ইত্যাদি। এদেশের মেয়েরা হাতের কাজে বেশ পটু।
পাটের আঁশের জিনিসঃ পাটের আঁশ বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে মেয়েরা তৈরি করে নকশি শিকা। পুঁতিফুলের শিকায় ঝিনুকের বোতাম, কড়ি ও পুঁতি লাগানো হয়।
নকশিকাঁথাঃ বাংলার মেয়েরা কাজের অবসরে সুচ ও সুতো দিয়ে সেলাই করে নকশিকাঁথা। কাঁথায় থাকে লতাপাতা, ফুল, ধানের ছড়া, চাঁদ, তারা, পাখি ও নানা রকমের ছবি। মেয়েরা আপন মনের রঙে রাঙিয়ে তোলে এক একটি কাঁথা। নকশিকাঁথা এদেশের এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য। এর সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশে।
নকশি পাখাঃ রঙিন সুতো দিয়ে মেয়েরা তৈরি করে নকশি পাখা। এসব পাখায় সুতোর বুননে ফুটে ওঠে ফুল, পাখি, গাছ ও পাতার নকশা।
বেতের জিনিসঃ মেয়েরা বেত দিয়ে বোনে শীতল পাটি। রঙিন বেতের বুননে শীতল পাটিতে ফুটিয়ে তোলা হয় পাখি, পালকি, মসজিদ, নৌকা, বাঘ, হরিণ ও বিভিন্ন ফুলের নকশা।
উপসংহারঃ আমাদের দেশের মেয়েদের তৈরি বিভিন্ন শৌখিন জিনিসের সুনাম রয়েছে এখন দেশে-বিদেশে। এজন্য এদেশের মেয়েদের আরেক নাম গৃহলক্ষ্মী।
প্রশ্ন: কয়েক রকম বিখ্যাত কাপড়ের নাম লেখ।
উত্তর: প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ কাপড় বোনার জন্য বিখ্যাত। তার প্রমান এক কালীন পৃথিবীর বিখ্যাত ‘ঢাকাই মসলিন’। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এখনও এখানে তৈরি হচ্ছে বহু রকম মনোহরী কাপড়।
পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিণ্প হয়ত এখন বেঁচে নেই। তথাপি বংশ পরস্পরায় এখনো এ দেশে তৈরি হচ্ছে নানান রকম বিখ্যাত কাপড়। বর্তমানে বিখ্যাত বাংলাদেশের কয়েক রকম কাপড়ের নাম হলো—জামদানি, তসর, গরদ, মুগা, মটকা, টাঙ্গাইল, বালুচরি, রেশম ও মসলিন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের কামার-কুমোরেরা কী-কী জিনিস তৈরি করে?
উত্তর: বাংলাদেশের মানুষ নানান রকম পেশায় নিয়োজিত। এমনি একটি পেশাজীবী শ্রেণী হচ্ছে কামার ও কুমোর। তাদের কাজ মূলত লোহা ও মাটি নিয়ে। লোহা ও মাটির তৈরি তৈজসপত্রই তাদের জীবন ও জীবিকার একমাত্র উপায়।
বাংলাদেশের কামার-কুমোরেরা নানা প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে। কামার তৈরি করে কাস্তে, কোদাল, দা, কুড়াল, নিড়ানি ইত্যাদি ও কৃষিকাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।
কুমোর তৈরি করে মাটির হাঁড়ি-পাতিল ও বিভিন্ন তৈজসপত্র। এ ছাড়া কুমোরেরা মাটি দিয়ে ফুল, পাখি, পুতুল ও পোড়ামাটির ফলকও তৈরি করে থাকে।
প্রশ্ন: কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নাম লেখ।
উত্তর: আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ একক কোন জনগোষ্ঠির আবাস নয়। এখানে নানা বর্ণের ও গোত্রের মানুষ বসবাস করে আসছে। বৃহৎ জাতি সত্তার পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকারী শ্রেণীও আমাদের ঐতিহ্যকে সমুন্নত করেছে।
সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা বিস্তৃত সমতল ভূমি ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের হূদয়জুড়ে। অন্যদিকে আছে ঘন সবুজ গাছঘেরা পাহাড়ি টিলা। এসব পাহাড়ি এলাকা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে বাস করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো—চাকমা, মুরং, মারমা, লুসাই, গারো ইত্যাদি। তারা পাহাড়ে জুমচাষ করে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে।
********
Thursday, April 26, 2012
আমাদের এই দেশ
Tags
# Bangla
# Class Five
About Salahuddin
Soratemplates is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates.
পড়াশোনা
Tags:
Bangla,
Class Five,
পড়াশোনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment